প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইওএমের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ সাক্ষাৎ করেন
নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য আইওএম-এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেহেতু (বাংলাদেশে) রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে, আইওএম-এর উচিত এই উদ্দেশ্যে আরও তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মঙ্গলবার ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এর মহাপরিচালক (ডিজি) অ্যামি পোপ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার জন্যও বলেছেন, কেননা এখানে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানসহ সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাস তৈরি করা হয়েছে। ভাষানচরে এ পর্যন্ত ৩০-৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৈঠকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করা আইওএম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এ বিষয়ে টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে। তবে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত। রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।
এমি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝার জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তারা সারাদেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। কিন্তু, দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
সরকার প্রধান বলেন, তার সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে যার মধ্যে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া রয়েছে। আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং নদীভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের জন্য মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৪ হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তুকে বাড়ি দিয়েছে। তার সরকার জলবায়ু প্রতিরোধী বাড়ি এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ভাসমান বাড়ি নির্মাণ করছে এবং গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
ভবিষ্যতে কার্যকরভাবে মহামারি সামাল দিতে হবে ॥ ভবিষ্যতে কার্যকরভাবে মহামারি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং তাদের প্রতিশ্রুতি ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার গণভবন থেকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্যানেল ফর প্যান্ডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস এবং রেসপন্সের কো-চেয়ারম্যান এবং নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্ধতিগত পরিবর্তনের জন্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা এবং প্রতিশ্রুতি একান্তভাবে প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে মহামারি প্রতিরোধ, শনাক্তকরণ এবং কার্যকরভাবে সামাল দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে পারে।
তিনি বলেন, মহামারি প্রস্তুতি এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্পর্কিত সংস্কারের জন্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। রাজনৈতিক নেতৃত্ব বৈশ্বিক সহযোগিতার ঐক্য তৈরি করে, জনস্বাস্থ্যে আস্থা স্থাপন এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের জীবন বাঁচায়। তিনি বলেন, ভবিষ্যত মহামারির জটিলতাগুলো সঠিকভাবে সামাল দিয়ে আরও স্থিতিস্থাপক এবং উপযোগী বিশ্বের জন্য শক্তিশালী এবং দৃঢ় নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে।