ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত

লোডশেডিং তীব্র হওয়ার শঙ্কা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২১ এপ্রিল ২০২৪

লোডশেডিং তীব্র হওয়ার শঙ্কা

.

তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাসএরই মধ্যে ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে রবিবার থেকে পুরোদমে চালু হয়েছে দেশের সব অফিস-আদালত, কল-কারখানাএমন অবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা গিয়ে পৌঁছতে পারে সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াটেকিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতাই সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বিদ্যুপাদন করতে পারছে না বিদ্যু কেন্দ্রগুলোএতে এই গরমে আবারও লোডশেডিং তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মানুষতবে আশ্বস্ত করেছেন বিদ্যু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদতিনি বলেছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যু নিশ্চিত করতে সরকারের সর্বোচ্চ সদিচ্ছা রয়েছে

তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে ৪২ ডিগ্রির ঘরতীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন মানুষজনএই পরিস্থিতিতে সপ্তাহের ব্যবধানে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে প্রায় চার হাজার মেগাওয়াটবাংলাদেশ বিদ্যু উন্নয়ন বোর্ড ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ  সেন্টারের তথ্যানুসারে, গত ১৪ এপ্রিল দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট, যার বিপরীতে উপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট১৫ এপ্রিল চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটে, যার বিপরীতে উপাদন হয় ১৫ হাজার ৫৪৩ মেগাওয়াটএরপর ১৬ এপ্রিল বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়ায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে, যার বিপরীতে উপাদন হয় ১৫ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট১৭ এপ্রিল চাহিদা কিছুটা কমে ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে, যার বিপরীতে উপাদন হয় ১৬ হাজার ৪১১ মেগাওয়াট১৮ এপ্রিলও চাহিদা ১৪ হাজার ৮১ মেগাওয়াটে বজায় থাকেতবে শনিবার আবার বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়সেদিন চাহিদার ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে উপাদন হয় ১৫ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াট, ফলে লোডশেডিং দিতে হয় ১৪২ মেগাওয়াটআর রবিবার বিদ্যুতের চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে, যা গত এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চচলতি গরমে এই চাহিদা ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিদ্যু, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদগত শনিবার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল) পরিদর্শনকালে বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই গরমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট হতে পারেএই চাহিদা পূরণ করে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যু সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছেকিন্তু বড় বাধা অর্থঅনেক বিদ্যু কেন্দ্র গ্যাসের জন্য উপাদন করতে পারছে নাঅনেকে আবার সামান্য কিছু উপাদন করছেএর একমাত্র কারণ টাকার অভাবে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হচ্ছেঅর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি কিছু অর্থ ছাড় করলেও তা পর্যাপ্ত নয়তাই এ সময়টায় সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবেকোথাও কোনো সঞ্চালন বা বিতরণে সমস্যা থাকলে তা দ্রুত কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে

তিনি বলেন, আমাদের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যু সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকরসঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে দ্রুত সমন্বয় করা হচ্ছেঅগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ত্রুটি মেরামত করা হচ্ছেবিদ্যু কেন্দ্রে প্রাথমিক জ্বালানি নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে

গ্যাস পেলে আশুগঞ্জ বিদ্যুকেন্দ্র থেকে মিলবে আরও ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যু ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আশুগঞ্জে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে ছয়টি বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়যেগুলোর মোট উপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৫৮৪ মেগাওয়াটপাদন সক্ষমতায় সবার ওপরে অবস্থান করা এই বিদ্যুকেন্দ্রকে এনার্জি হাব বলা হয়পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ এপ্রিল এ বিদ্যুকেন্দ্রের ছয়টি ইউনিট থেকে ১২৩২ মেগাওয়াট বিদ্যু এসেছে জাতীয় গ্রিডে

এ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ একরাম উল্লা বলেন, আশুগঞ্জের ছয়টি ইউনিটের জন্য ২৩০ এমএমসিএফডি গ্যাস বরাদ্দ আছেএখানে উপাদন সক্ষমতা ১৫৮৪ মেগাওয়াট হলেও গ্যাসের অভাবে তা সম্ভব হয় নাতবে বর্তমানে গ্যাসের প্রাপ্তি কিছুটা বেড়েছেযে পরিমাণ গ্যাস বরাদ্দ আছে তার পুরোটা পাওয়া  গেলে আরও ২০০ মেগাওয়াট বেশি বিদ্যুপাদনের সুযোগ রয়েছেবাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছি; তারা চেষ্টা করছেএই মুহূর্তে ১২০০ মেগাওয়াট চলছে, সেটা আমরা ১৬০০  মেগাওয়াটে নিয়ে যেতে পারব

দৈনিক ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন হলেও তা পাওয়া যায় না জানিয়ে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুল মজিদ বলেন, এই মুহূর্তে ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির বিপরীতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যু সরবরাহ করা হচ্ছেএই কেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যু দিয়ে যাচ্ছিচাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া গেলে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যু দেওয়া সম্ভব

গ্যাস সংকটে অন্যান্য বিদ্যুকেন্দ্রও ঈদের ছুটিতে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দৈনিক ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যেএখন ঈদের ছুটি শেষ হয়েছেকলকারখানা চালু হয়েছেতাপমাত্রার পারদও বাড়ছে প্রতিদিনএমন অবস্থায় দেশব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা ও যোগানের দায়িত্বে থাকা ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের (এনএলডিসি) শনিবার রাত নয়টার তথ্য অনুযায়ী, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াটের বিপরীতে ওই সময় উপাদন হয়েছে ১৫ হাজার ৩৫৮ মেগাওয়াটলোডশেডিং ছিল ৩৩৪ মেগাওয়াটএ সময় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রগুলো থেকে ৭ হাজার ৮৮৬ মেগাওয়াট, এইচএফও বা তরল জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ২ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রগুলো থেকে ৩ হাজার ৮৮২ মেগাওয়াট, জলবিদ্যু থেকে ৩০ মেগাওয়াট এবং বায়ু বিদ্যু থেকে ৯ মেগাওয়াট বিদ্যু আসছিল

শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রণালয়ের টাকা ছাড় না হওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) কেনা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেকগুলো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যু কেন্দ্রই প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাবে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উপাদন করতে পারছে নাফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুপাদন করা যাচ্ছে না

লোডশেডিং কমাতে বিদ্যু বিভাগের তপরতা এবার গ্রীষ্মে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা আগের চেয়ে বাড়বে অনেক বেশিএবার চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা বিদ্যু বিভাগেরসে কারণে গ্যাসের প্রয়োজনীয় জোগান দিয়ে সাশ্রয়ী ও বড় বিদ্যুকেন্দ্রগুলোর সুফল পাওয়ার দিকে নজর দিয়েছে সরকারএ লক্ষ্যেই গত শনিবার নসরুল হামিদ আশুগঞ্জ পাওয়ার পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের উপাদন ইউনিটগুলো পরিদর্শন করেনএ সময় বিদ্যুকেন্দ্রের পূর্ণ সুফল পেতে করণীয় নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনিএকইভাবে অন্যান্য বিদ্যু কেন্দ্রগুলোও পরিদর্শন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে জনগণকে যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়আর এ লক্ষ্যে লোডশেডিং না করার জন্য আমাদের যা যা করণীয় সব করার চেষ্টা করছি

×