প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার চট্টগ্রামের হালিশহরে আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স’ উদ্বোধনের পর কমপ্লেক্সে
‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’- এটাই বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির মূল চালিকাশক্তি। প্রতিবেশী সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। তবে যে কোনো আগ্রাসী বহিশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সদাপ্রস্তুত ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
রবিবার চট্টগ্রামের হালিশহর সেনানিবাসে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন শেষে আয়োজিত দরবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে’- মূলমন্ত্রকে সমুন্নত রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উজ্জীবিত করার প্রয়াসে সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব। তিনি বলেন, নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে ও অনুগত থেকে কঠোর অনুশীলন, পেশাগত দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের সমন্বয়ে সেনাবাহিনী তাদের গৌরব সমুন্নত রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এ জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে হতে হবে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন-স্মার্ট।
হালিশহর সেনানিবাসে আর্টিলারি সেন্টারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল গোলন্দাজ বাহিনী তথা সেনাবাহিনীর একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুপ্রসিদ্ধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ কেন্দ্র থেকে প্রতিবছর রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনা সদস্য বিভিন্ন মৌলক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। দেশের ছাড়াও বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র ভারত, কুয়েত, সুদান, মালয়েশিয়া, তাঞ্জানিয়া, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, নাইজিরিয়াসহ ১২টির বেশি দেশ থেকে অফিসাররা উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণে এসেছেন।
রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির আধুনিকায়নে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেজিমেন্ট অব আর্টিলারির আধুনিকায়নে ইতোমধ্যে ফিল্ড আর্টিলারিতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক টাইগার এমএলআরএস, ১৫৫ মিলিমিটার সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলাটি গান নোরা ই-৫২, অত্যাধুনিক ওয়েপন লোকেটিং রাডার এবং সাউন্ড রেঞ্জিং সিস্টেম। এছাড়া এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্টে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক অরলিকন গান, সোরাড মিসাইল, ভি সোরাড মিসাইল এবং রাডার কন্ট্রোল্ড এয়ার ডিফেন্স গান, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিষয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক বিমান, হেলিকপ্টার, ইউএভি, চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাঙ্ক, ্আধুনিক এপিসি, ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মিসাইল ও
অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জাম। সেনাবাহিনীর কর্মকান্ডের প্রশংসা করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। কর্মনিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের কারণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রশংসিত। জাতিসংঘ মিশনে আমাদের সৈনিকদের সামর্থ্য এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক লাইট আর্মার্ড ভেহিকল ও মাইন রেসিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রোটেক্টেড ভেহিকল সংযোজন করা হয়েছে।
এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী হালিশহর সেনানিবাসে আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুলে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারি কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি কমপ্লেক্সে স্থাপিত আর্টিলারি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জাদুঘরে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, মহান মুক্তিযুদ্ধে মুজিব ব্যাটারির প্রথম গোলাবর্ষণকারী ঐতিহাসিক ৩ দশমিক ৭ ইঞ্চি হাউইটজার, আর্টিলারি রেজিমেন্টে ব্যবহৃত গোলাবারুদ ও কামানের প্রতিরূপ এবং মুক্তিযুদ্ধে গোলন্দাজ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য অপারেশনসমূহের গৌরবময় ইতিহাস অবলোকন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন পদবির সেনা অফিসার, জেসিওগণ।