মেট্রোরেল
জুলাই থেকে মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট আরোপের কথা জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে মেট্রোরেলের ভাড়া ১৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে ঢাকার স্বল্পবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অনেকের জন্যই মেট্রোরেলের নিয়মিত ব্যবহার আর সাধ্যের মধ্যে থাকবে না। এ কারণে গণপরিবহন বিবেচনায় মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন গবেষণা এবং নীতি বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)।
রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেট্রোরেলে ভ্যাট আরোপে এনবিআরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে আইপিডি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে মেট্রোরেলের বিদ্যমান ভাড়া এশিয়ার অন্য অনেক দেশের তুলনায় বেশি। ভারতের কলকাতা, পাকিস্তানের লাহোর, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর প্রভৃতি মেট্রোরেলে চলাচলের ব্যয় বাংলাদেশের মেট্রোরেলের বর্তমান ভাড়ার তুলনায় কম। এরপরও পিক আওয়ারে ঢাকার মেট্রোরেলে যাত্রীর বর্তমান চাহিদা ও মাত্রাতিরিক্ত চাপ দেখে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই যে, মেট্রোরেলের বর্তমান ভাড়া মানুষের নিয়মিত যাতায়াতের সাধ্যসীমার মধ্যেই আছে। ঢাকায় মানসম্মত গণপরিবহনের তীব্র সংকট এবং মাত্রাতিরিক্ত যানজটের কারণে অনেক মানুষ দৈনন্দিন অন্যান্য ব্যয় কাটছাঁট করে সাধ্যের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই মেট্রোরেলে নিয়মিত যাতায়াত করছেন। উত্তরা–মতিঝিলের মধ্যবর্তী রুটের অনেক স্বল্প আয়ের মানুষ বিদ্যমান ভাড়াতে মেট্রোরেলে যাতায়াতের সামর্থ্য না থাকায় একান্ত বাধ্য হয়েই এই রুটের মানহীন বাসে চলাচল করছেন।
আইপিডি বলছে, মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা দৈনিক ৫ লাখ হলেও এখন ঢাকায় প্রায় ৩ লাখ যাত্রী এটি ব্যবহার করছে। ফলে এখনো সক্ষমতার পুরো মাত্রায় মেট্রোরেলের ব্যবহার করতে পারছি না আমরা। এ অবস্থায় মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব এটির ব্যবহারকে সংকুচিত করতে পারে। রাজধানী ঢাকার মতো মেগাসিটিতে যাতায়াত ও পরিবহনে মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ মানুষের অন্যতম অধিকার। এসডিজির ধারণায় অন্যতম হচ্ছে, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর, যেখানে পরিষেবা ও নাগরিক সুবিধাদি সব আয়ের মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখাই রাষ্ট্রের অন্যতম লক্ষ্য। ফলে মেট্রোরেলের জন্য এনবিআরের উচিত বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মওকুফ সুবিধা অব্যাহত রাখা।
মেট্রোরেলে ভ্যাট বসাতে এনবিআরের যুক্তি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে সব ধরনের করছাড় কমাতে হবে। আইপিডি মনে করে, এই যুক্তি যথার্থ নয়। মেট্রোরেলের মতো গণপরিবহনে আইএমএফের নীতির অতিসরলীকরণ ও অপপ্রয়োগ একেবারেই কাম্য নয়।
এদিকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বরাতি দিয়ে আইপিডির বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের ৮৭ শতাংশ ধনী এবং উচ্চ–মধ্যবিত্ত নাগরিক আয়কর দেন না। ধনী–গরিবের গণপরিবহন মেট্রোরেলে ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর বসিয়ে রাজস্ব আদায় না করে ধনীদের আয়করের মতো প্রত্যক্ষ কর বাড়ানোতে এনবিআরের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করে আইপিডি।
একই সঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এবং এনবিআরের সমন্বয়ের মাধ্যমে মেট্রোরেলের সাশ্রয়ী ভাড়া নিশ্চিত করার দাবির পাশাপাশি মেট্রোরেলে ভর্তুকি কমানোর বিকল্প কৌশল অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছে আইপিডি।
এস