বক্তব্য রাখছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম
মশক নিধন ও খাল পরিষ্কার কর্মসূচি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
বুধবার (২০ মার্চ) সকালে উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের রাজউক খালপাড় এলাকা পরিদর্শন করেন তারা। এসময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজউকের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞাসহ ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠান চলাকালীন মন্ত্রী, মেয়র, অন্য অতিথিসহ উপস্থিত সবাই মশার কামড়ে বিপাকে পড়েন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি লাইভ ভিডিওতে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে মন্ত্রী, মেয়রসহ অন্যদের হাত দিয়ে মশা তাড়াতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মশায় কামড় দেওয়া স্থানে হাত দিয়ে চুলকাচ্ছিলেন। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএনসিসির একাধিক কর্মকর্তা। ডিএনসিসির আয়োজনে পরিদর্শনে মেয়র ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খালের পাড় দিয়ে হেটে খালের কিছু অংশ ঘুরে দেখেন। এসময় তারা খালের কচুরিপানায় ব্যাপক কিউলেক্স মশা দেখতে পান।
মশার কামড় নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে একজন সাংবাদিক মন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আজকে আপনি নিজেই দেখতে পাচ্ছেন মশার কী অবস্থা, আপনারাই বসতে পারছেন না। চিন্তা করে দেখেন, মশা নিয়ে ঢাকার মানুষ কত দুর্ভোগের মধ্যে আছে। মশাকে কী আপনার কাছে চ্যালেঞ্জ মনে হয় না?
এর উত্তরে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই এডিস নিয়ে বেশি আতঙ্কিত। কারণ, এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা মারা যান। সে ক্ষেত্রে বছরের প্রথম থেকে এ নিয়ে বলেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই বিষয়টি নিয়ে তিনি সতর্ক।
মন্ত্রী বলেন, সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনের চেষ্টা করবে জনগণের সহযোগিতা নিয়ে। নিধন যতটুকু করতে পারবে করবে। তারপরও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এত বিস্তীর্ণ এলাকা মশা প্রজননের জন্য আছে, সেখানে সব জায়গায় তো ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। খালের মধ্যে তো মশা মারা যাচ্ছে না। আমাদের বাস্তবমুখী হতে হবে। মানুষসহ কাজ না করলে, কোথাও কোনো সরকার রাষ্ট্র সফল হতে পারে না।
মশা নিধন কারো একার পক্ষে সম্ভব নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করতে হবে।
প্রতিকার থেকে প্রতিরোধ উত্তম উল্লেখ করে তিনি বলেন, মশা নিধনে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হচ্ছে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা যাতে মশার উৎপাদন না হয়। সেজন্য জনপ্রতিনিধি ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। নিজ বসতবাড়ি এবং নিজ এলাকা পরিষ্কার করার দায়িত্ব আমাদের সবার তাহলেই প্রাণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর থেকে আমরা নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবো।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ শুধু একা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে। এডিস মশার জন্য যার যার ঘর, অফিস-আদালত তাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমার কাছে কিন্তু অসম্ভব, কারও বাড়ির ছাদে পানি জমে আছে কি না, তা দেখা। এটি এডিস মশার জন্য সকলকে সামাজিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশন হট স্পটগুলোয় চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এডিস মশা থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পাড়ায়, মসজিদে, মন্দিরে, চার্চে আলাপ করতে হবে যার যার এলাকা পরিষ্কার করা জন্য।
মেয়র বলেন, গুলশান-বারিধারার মতো লেকে মশার জন্ম হচ্ছে। শুধু সিটি কর্পোরেশন একলার জন্য অসম্ভব ব্যাপার। সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। যে খালে আজকে কাজ করা হচ্ছে, সেটি রাজউক ও ওয়াসার খাল। অনেকবার খালটিকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করে দিতে বলেছি। রাজউককে বলেছি, ওয়াসাকে বলেছি কিন্তু কেউ পরিষ্কারে এগিয়ে আসেনি। নিজেদের মধ্যে এমন চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত জনগণ কষ্ট পাচ্ছে। যত দিন লাগে সিটি কর্পোরেশন এ খাল পরিষ্কার করে দেবে।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর থেকেই ব্যাপকভাবে ক্যাম্পেইন শুরু করবো। গতবার মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমিদানির উদ্যোগ নিয়েছিলাম কিন্তু আপনারা জানেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির কারণে সেটি ব্যবহার করা যায়নি। তাই এবার আমরা সিটি কর্পোরেশন থেকে সরাসরি বিটিআই আমদানি করছি। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে বিটিআই নিয়ে আসবে। ওষুধ ছিটানোর জন্য অত্যাধুনিক মেশিনও (হুইলবারো মেশিন) আনার প্রক্রিয়া চলছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা বর্ষার আগেই প্রস্তুতি নিয়েছি।
এস