ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার, জেএস ডায়াগনস্টিক সিলগালা

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তার, জেএস ডায়াগনস্টিক সিলগালা

সিলগালা করা হচ্ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ছবি: সংগৃহীত

এবার রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় জেএস হাসপাতালে সুন্নতে খাতনা করানোর সময় অতিরিক্ত অ্যানেস্থেশিয়া দেয়ার কারণে আহনাফ তাহমীদ আলম আয়হাম (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। 

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা মামলা করেছেন হাতিরঝিল থানায়। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এছাড়া সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : তরুণ প্রজন্মের এ কি হাল! জানে না মাতৃভাষা দিবসের কথা, বলতে পারছে না বাংলা

গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক হলেন এস এম মুক্তাদির ও মাহবুব।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন।

ওসি জানান, সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়হাম মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির বাবা। ডা. এস এম মুক্তাদিরসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে আরও ৫ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি।

এ ঘটনায় জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর দুজন চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

স্বজনরা জানান, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার আলেখারচর গ্রামের ফখরুল আলমের ছেলে আয়হাম। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল বড়। বর্তমানে পরিবারটি খিলগাঁও রেলগেট এলাকার একটি বাসায় থাকেন। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আয়হাম। তার বাবা মো. ফখরুল আলম অভিযোগ করে বলেন, সুন্নতে খাতনা করানোর জন্য পরিচিত একজনের সুপারিশে মালিবাগের ওই হাসপাতালে পরিচালক ডা. এস এম মুক্তাদির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন তিনি। 

তখন ওই পরিচালক বলেন, এটি মাত্র ১০ মিনিটের কাজ। আপনার দুই ছেলেকেই একসাথে হাসপাতালে নিয়ে আসুন।

সেই কথা অনুয়ায়ী, বড় ছেলে আয়হামকে নিয়ে রাতে ওই হাসপাতালে যান শিশুটির বাবা। রাত ৮টায় অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় আয়হামকে। এর ২০ মিনিট পরই সেখানকার পরিচালক ও ডাক্তার বেরিয়ে যান। তখন তিনি অপারেশনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে তারা এড়িয়ে যান। 

শিশুটির বাবাকে বলেন, অ্যানেস্থেশিয়ার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেন। তখন শিশুটির বাবা ওটির ভিতরে ঢুকতে চাইলে তাদেরকে ঢুকতে দেয়া হয় না। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট পর তিনি জোরপূর্বক ভিতরে ঢুকে দেখেন, বেহুশ অবস্থায় রয়েছে তার ছেলে। মুখে নল লাগানো। ৪-৫ জন মিলে তার হাত পা মালিশ করছেন। শরীর থেকে ব্লাড বের হচ্ছে। তবে তখনও তারা জানায়, সে শ্বাস নিচ্ছে।

প্রায় ২ ঘণ্টা পর তারা বলেন, ইমার্জেন্সি আইসিইউ লাগবে। পরে এ্যাম্বুলেন্স কল করা হয় আইসিইউতে নিতে। তবে আইসিইউতে নেয়ার আগে সেখানেই একটি ইসিজি করানো হলো। তখন তারা জানায়, সে আর নেই। 

শিশুটির বাবা বলেন, আমাদের যদি ২০-২৫ মিনিট পরও বলতো, আপনারা নিজেরাই কিছু একটা করেন, অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যান, তাহলেও আমরা সেটা করতাম। কিন্তু আমাদের কিছুই বলেনি তখন। আমাদের মনে হচ্ছে, অ্যানেস্থেশিয়া বেশি দেয়ার কারণেই আমার ছেলে মারা গেছে।

এদিকে মরদেহের সুতরহাল প্রতিবেদনে হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুহুল আমিন উল্লেখ করেন, সুন্নতে খাতনা করানোর সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা গেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে ও স্বজনদের মাধ্যমে জানা গেছে।
 

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×