ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ভারতের দিল্লির মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ কান্ধলভির অংশগ্রহণের বিষয়ে অনুসারীদের সঙ্গে সরকারের কথা হচ্ছে বলে ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমার প্রস্তুতি পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তাবলিগের প্রথম পর্ব বাংলাদেশি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমা। ৯, ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর অনুসারীদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শেষ হবে। এতে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেবেন বলে ধারণা আয়োজকদের।
ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব উপলক্ষে বুধবার মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ, মেজো ছেলে মাওলানা সাঈদ ও ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াসসহ ভারতের নিজামউদ্দিন মারকাজের ১৪ জনের একটি জামাত ঢাকায় পৌঁছান।
তাবলিগ জামাতের সা’দের অনুসারীরাও ময়দানে আসতে শুরু করেছেন। তুরাগ তীরের ময়দানে অবস্থান নেওয়া মানুষদের ‘জমিয়ে রাখতে’ বৃহস্পতিবার বাদ ফজরই বয়ান শুরু করেছেন মুরুব্বিরা।
মাওলানা সা’দকে ইজতেমায় আসার অনুমতি দেওয়ার প্রসঙ্গে ধর্মমন্ত্রী বলেন, “সা’দ সাহেবের পক্ষে যারা কাজ করছেন, তারা চেষ্টা করছেন এবার তাকে ইজতেমায় আনতে। আমাদের সরকারের সঙ্গেও তাদের কথা চলছে। আমরা দুই পক্ষের মধ্যকার যে বিরোধ, তা নিরসনের আপ্রাণ চেষ্টা করছি। দুই পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ করব, তাদের নিয়ে বসব।
“মাওলানা সা’দের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে হ্যাঁ বা না নেই। সমঝোতার মধ্য দিয়ে হয়তো এটা সম্ভব হতে পারে। আমরা সেই চিন্তাটা করছি। তবে এ বিষয়ে কিছু বাধ্যবাধকতা আছে, নিয়ম আছে। সেই নিয়মের মধ্যে আমাদের সবকিছু করতে হয়। কোনো কারণে যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় বা কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষে যারা আছেন, তাদের সেদিকে দায়িত্ব থাকে। ”
মঙ্গলবার রাতে ভারতের তাবলিগ মুরুব্বি আশরাফ মাদানি বাংলাদেশে এসেছিলেন জানিয়ে ফরিদুল বলেন, “আমি সেখানে গিয়েছিলাম। তার বক্তব্য রেকর্ড করেছি। তার অর্থ বাংলায় রূপান্তর করছি, খতিয়ে দেখছি। চারজন আলেম-ওলামা এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে আলোচনায় বসছে।
এ আলোচনাকে সামনে রেখে আমরা এগুচ্ছি। চেষ্টা করছি উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করতে। সেই চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।”
উপমহাদেশে সুন্নী মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সা’দের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন।
স্বেচ্ছামূলক এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধের প্রচার। বিতর্ক দূরে রাখতে এ সংগঠনে রাজনীতি ও ফিকাহ নিয়ে আলোচনা হয় না।
মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির ওপর।
মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর মাওলানা সা’দ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান তখন নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান।
কিন্তু সা’দ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। বিভিন্ন সময়ে মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়েও আলেমদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়।
নেতৃত্ব নিয়ে দিল্লির মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমার সময়।
কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসা সা’দ কান্ধলভি সেবছর ঢাকায় এসে বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত সরকারে মধ্যস্থতায় ইজতেমায় অংশ না নিয়েই তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়।
বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদে ওই বিরোধের জের চলে বছরজুড়ে। দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। ওই সময়ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কামালকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় নামানে হয়।
এস