স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলিতে দুই বাংলাদেশির আহত হওয়ার ঘটনায় সীমান্তে আতঙ্কের মধ্যে রবিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, “আমরা কোনো যুদ্ধে জড়াতে চাই না, যুদ্ধ চাইও না। তার মানে এই নয় যে, আমাদের গায়ের ওপর পড়ে যাবে, আমরা ছেড়ে দেব, সেটা নয়।"
সীমান্তে বাংলাদেশও শক্তি বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সব সময় তৈরি আছি। আমাদের বিজিবি, ওখানে শক্তি বৃদ্ধি করেছে। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে বলে দিয়েছি, আমাদের কোস্টগার্ডকে 'ইনস্ট্রাকশন' দিয়েছি যেন কোনোভাবেই আমাদের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ না করতে পারে।”
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে রবিবার সকাল ১০টার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা গুলিতে দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন; ভয়ে-আতঙ্কে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাননি অভিভাবকরা।
স্থানীয়রা বলছেন, রবিবার সকাল থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপার থেকে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ আসছে। তাতে আতঙ্কে রয়েছেন সীমান্তে বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দারা। তুমব্রু এলাকার অনেকে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে সরে গেছেন।
আতঙ্কে সীমান্ত সংলগ্ন পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রবিবার কোনো শিক্ষার্থী আসেনি বলে শিক্ষকরা জানান।
পশ্চিমকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন বলেন, “ভোর থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ আসছে। দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি চলেছে। আতঙ্কে কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। তবে শিক্ষকরা সবাই উপস্থিত হয়েছেন।”
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “সীমান্ত পরিস্থিতি বিজিবি দেখছে। স্কুলের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বলা আছে; পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।”
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, শনিবার বিকালে ও রাতে সীমান্তের ওপারে রাখাইনের তুমব্রু রাইট পিলার ক্যাম্প এলাকা থেকে এলোপাতাড়ি গোলাগুলির শব্দ পান তারা।
সকালে খবর আসে, রাতের যুদ্ধে মিয়ানমারে বর্ডার গার্ড পুলিশের একটি ফাঁড়ি আরাকান আর্মির যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছে। সেই ফাঁড়ির কিছু সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন।
শনিবার বিকালেও ওপার থেকে ছোড়া গুলি এসে লাগে তুমব্রু সীমান্ত সড়কের এক অটোরিকশায়। এতে অটোরিকশাটির সামনের গ্লাস ফেটে যায়।
মিয়ানমার অংশে মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দে সীমান্তে বাংলাদেশ অংশের কয়েকটি গ্রামে আতঙ্ক ছড়ায়। রাতে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের অংশ কোনারপাড়া গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের ঘরের চালা ভেদ করে ভেতরে এসে পড়ে।
মিয়ানমার মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের যে ১৪ সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরকে দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথাও বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বিজিবি এদের অস্ত্রগুলো নিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “তাদেরকে এক জায়গায় রাখা হয়েছে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে (বিজিবি) মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন যেন তারা এদেরকে নিয়ে যান।”
আরাকানের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারের কাছে কী তথ্য আছে- সে প্রশ্নে কামাল বলেন, “আরাকান আর্মি নামে এক বিদ্রোহী গ্রুপ রাখাইন সাম্রাজ্যের একের পর এক জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ক্রমাগত তারা শক্তিশালী হয়ে আরো সামনের দিকে যাচ্ছেন। সেখানে আর্মির সঙ্গে আরাকান আর্মির যুদ্ধ চলছে। এ অবস্থায় ১৪জন সীমন্ত রক্ষা পুলিশ বিজিপি আত্মরক্ষার্থে আমাদের ভেতরে ঢুকে আমাদের কাছে সহযোগিতা চান।
মিয়ানমারে সশন্ত্র লড়াইয়ের মধ্যে বাংলাদেশে কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে, সে দিকে সরকার সতর্ক থাকবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি বলেন, “মায়ানমারে এই যুদ্ধ কত দিন চলবে আমরা জানি না। তবে বাংলাদেশ সীমান্ত ক্রস করে কাউকে আসতে দেওয়া হবে না।”
এই লড়াইয়ের কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের যে প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা হতে পারে। এটা সবাই বুঝে একটা অস্থির পরিবেশ চলছে সেখানে। বিভিন্ন কারণেই প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়াটা বিলম্বিত হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ, ১৪ জন বিজিপি সদস্যের বাংলাদেশে প্রবেশ এবং বাংলাদেশের ভেতর মর্টারশেল পড়ার ঘটনাগুলো উসকানিমূলক কি না-এই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “না কোনো ধরনের উসকানি নেই। সবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্ক।
“আমাদের দেশে মর্টারশেল পড়েছে এটা সত্য, তবে কোনো আহত নিহতের ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে সে দেশকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।"
এস