ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনা

‘আমিন আল্লাহুম্মা আমিন’

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গী থেকে

প্রকাশিত: ১০:১৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ২৩:১০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

‘আমিন আল্লাহুম্মা আমিন’

আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিশ্ব ইজতেমার ৫৭ তম আসরের প্রথম পর্ব

টঙ্গীর তুরাগ তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কণ্ঠে আমিন আল্লাহুম্মা আমিন ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাতে মহান আল্লাহর কাছে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মুক্তি এবং দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ্ ভিক্ষা করছিলেন মুসল্লিরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয় তবলিগ জামাতের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে। এর আগে হেদায়েতি বয়ান করা হয়। আলেম ওলেমা কওমিপন্থি মাওলানা জোবায়ের অনুসারী প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্বের মাওলানা সা’দ কান্ধলভী অনুসারী ওয়াসেকুল ইসলামের তবলিগ অনুসারীদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সোমবার মাগরিবের পূর্বে জোবায়ের অনুসারীরা ময়দান ত্যাগ করবেন এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসনের কাছে ময়দানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। এর পর জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে মাওলানা সা’দ অনুসারীরা ময়দানে প্রবেশ করবেন এবং দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার জন্য প্রস্তুতি নেবেন। 
 এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের শেষদিন রবিবার বিশ্ব তবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের তবলিগ মারকাজের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের ছোট ছোট বাক্যে আরবি-উর্দু ও বাংলা ভাষায় প্রায় ২৩ মিনিটব্যাপী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের আখেরি মোনাজাত পরিচালনার দায়িত্ব পরে তার ওপর। তিনি সকাল ৯টা ১মিনিট থেকে মোনাজাত শুরু করেন এবং তা চলে ৯টা ২৪ মিনিট পর্যন্ত। পবিত্র কোরআনের আরবি আয়াত এবং বাংলা ও উর্দু ভাষায় প্রায় ২৩ মিনিটব্যাপী মোনাজাত মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ১১ মিনিট তিনি কুরআনে বর্ণিত আয়াত উচ্চারণ করে মোনাজাত করেন। পরের ১২ মিনিট তিনি বাংলায় ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করেন। মোনাজাত শুরু হতেই পুরো এলাকাজুড়ে নেমে আসে পিন পতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে।

খানিক পর পর শুধু ভেসে আসে আমিন, ছুম্মা আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন। অনুতপ্ত মানুষের কান্নার আওয়াজে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে অনুনয়-বিনয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন তাঁরা। ক্ষমা লাভের আশায় ধনী-গরিব-শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষে সর্বস্তরের লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে রবিবার। এবারের প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২৫-৩০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ধারণা। মুঠোফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে রাজধানীর বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা এবং গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন।
মুসল্লিদের বাঁধভাঙা জোয়ার ॥ এদিকে, আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার ভোর রাত থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা অভিমুখে শুরু হয় বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো মানুষের ঢল। টঙ্গীর পথে শনিবার মধ্যরাত থেকেই ইজতেমা ময়দানগামী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোটর গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মোনাজাতে অংশ নিতে শীত ও নানা ঝামেলা উপেক্ষা করে চারদিক থেকে লাখ লাখ মুসল্লি পায়ে হেঁটেই ইজতেমাস্থলে পৌঁছে। মোনাজাতের আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হওয়ায় মুসুিল্লরা মাঠের আশে-পাশের রাস্তা, অলি-গলিতে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছুতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোনাজাতের জন্য পুরনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ আর মানুষ। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৪-৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রবিবার আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠান ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রবিবার সকালেই টঙ্গীর ইজতেমা এলাকায় পৌঁছেন। 
শেষ দিনে বয়ানকারী ॥ বিশ^ ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. হাবিবুল্লা রায়হান জানান, রবিবার বিশ্ব তবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের শেষদিন ফজরের নামাজের পর হতে হেদায়াতি বয়ান করেন পাকিস্তানের রাইবেন্ডের মাওলানা জিয়াউল হক। তিনি তবলিগের গুরুত্ব তুলে ধরে যারা তবলিগের সফরে আল্লাহর রাস্তায় বের হবেন সেসব মুসল্লিদের উদ্দেশে দিক নির্দেশনামূলক হেদায়তি বয়ান করেন। তার বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান। এর পর আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত নসিহত মূলক কথা বলেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। তাঁর বক্তব্যের তরজমা করেন মাওলানা জুবায়ের। এ সময় ইজতেমাস্থলে আগতরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সেসব বয়ান শুনেন। তবে এদিন হেদায়েতি বয়ানের আগে আর কোনো বয়ান হয়নি।
মোনাজাতে যা বলা হয় ॥ মাওলানা জুবায়ের মোনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তৌফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবীওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। হো আল্লাহ আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। গোপন গুনাহ, প্রকাশ্য গুনাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টি মাফিক চলতে পারি সে তওফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। এ বিশাল ময়দানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যার হাতকে আপনার পছন্দ হয় তার উছিলায় আমাদের সবার মোনাজাত কবুল করে নেন। আমাদের জিন্দিগি গুনাহ মুক্ত হওয়ার তৌফিক দেন। দুুনিয়ার সব নর-নারীর জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন। হে আল্লাহ ইমানের হাকিকতে তামাম নসিব করে দেন। হে আল্লাহ ঈমানী সিফাত আমাদের মধ্যে পয়দা করে দেন। হে আল্লাহ আমাদের ঈমানী জিন্দেগি নসিব করে দেন। হে আল্লাহ আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে দেন।
মোনাজাত শেষে মানব ও যানজট ॥ মোনাজাত শেষ হওয়ার পর পরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া লক্ষাধিক মানুষ ভিড় ঠেলে একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে ইজতেমা ময়দান এলাকার কামারপাড়া রোডে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ মানবজট। ইজতেমা ময়দান ও আশেপাশের এলাকা হতে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হওয়া লাখ লাখ মুসল্লির প্রচন্ড ভিড়ের কারণে ইজতেমা ময়দান এলাকার কামারপাড়া সড়কের দু’পাশের সংযোগ মোড়ে মানব জটের সৃষ্টি হয়। বিস্ময়কর এ মানব জটে আটকা পড়ে মুসল্লিদের ভিড়ের মাঝে দীর্ঘ সময় একই স্থানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। মানবজট ছাড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এ সময় অনেকের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন মালামাল খোয়া যায় এবং কয়েকজন আহত হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য সেখানে পৌঁছে দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর মানবজট ছাড়াতে সামর্থ্য হন।   
প্রায় একই কারণে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানের আশপাশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে সৃষ্টি হয় যানজট। ফলে যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক মুসল্লি ইজতেমা ময়দান থেকে বের হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। আর পায়ে হাঁটা মুসল্লিদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসুল্লিদের যানবাহন রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থাকে ইজতেমা মাঠের আশপাশের এলাকায়। 
ইজতেমা মাঠ থেকে ঢাকার সরাসরি কোনো গণপরিবহন নেই। উপায় না দেখে অনেকে হেঁটেই রওনা হন বাড়ির উদ্দেশে। আবার কেউ কেউ কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যান ভাড়া করেন। যারা ইজতেমা মাঠে পৌঁছতে না পেরে স্টেশন রোড, টঙ্গীর হোসেন মার্কেট, উত্তরা কিংবা বিমানবন্দরের বিভিন্ন এলাকায় থেকে মোনাজাতে অংশ নিয়েছিলেন, তারাও একই সময় ফেরা শুরু করেন। ফলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বনানীমুখী সড়ক জন¯্রােতে পরিণত হয়, তাদের বেশির ভাগই হেঁটে ফিরছিলেন। পাশাপাশি বাস, মিনি ট্রাক, ঠেলা গাড়িতে করে যে যা পাচ্ছেন ওই গাড়িতে চড়ে বাি রিছেন। তিল পরিমাণ ঠাঁই নেই ট্রেনগুলোতেও। 
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, যানজট নিরসন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মারাত্মক হিমশিম খেতে হয়।
এ পর্বে ১৩ মুসল্লির মৃত্যু ॥ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. হাবিবুল্লা রায়হান জানান, ইজতেমার প্রথম পর্বে আগত আরও ৪ মুসল্লি শনিবার  রাত হতে রবিবার আখেরি মোনাজাত শুরু আগে পর্যন্ত মারা গেছেন। তারা হলেন- রাজবাড়ির পাংশা থানার মো. সানোয়ার, চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আলম, নরসিংদীর নুরুল হকের ছেলে শাহনেওয়াজ ভূঁইয়া ও সিরাজগঞ্জের ওসমান গনির ছেলে আল মাহমুদ। এনিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে যোগ দিতে আসা ১৩জন মুসল্লি হৃদরোগ, ঠান্ডা ও বার্ধক্যজনিত কারণে ইজতেমা ময়দানে মারা গেছেন। এছাড়াও আরও ৬ জন মারা গেছেন বহিরাগত। 
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান বলেন, প্রথম পর্বের ন্যায় ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হবে।
টঙ্গীর সকল কারখানায় ছুটি ॥ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সব কারখানায় ছুটি ছিল। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকদের ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সমস্যা হয়নি। 
টেলিভিশন-মুঠো ফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত ॥ ইজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। টঙ্গীর ইজতেমাস্থল থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে গত কয়েকবারের মতো এবারও গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদের মাইকে আখেরি মোনাজাত সম্প্রচার করা হয়। এখানে কয়েক হাজার নারী পুরুষ ঈদগাহ মাঠে এবং পার্শ্ববর্তী সড়কে ও ভবনগুলোতে জড়ো হয়ে মোনাজাতে অংশ নেন। এ ছাড়া গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় টেলিভিশন, ওয়্যারলেস সেট ও মুঠোফোনের মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার করা হয়। এসব স্থানেও পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারনে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে। এ ছাড়া দেশ বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকে ইজতেমাস্থলে অবস্থানকারীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করেও মোনাজাতে শরিক হয়েছেন। 
আখেরি মোনাজাতে শামিল হন যারা ॥ ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে লাখ লাখ মুসলমানদের সঙ্গে শামিল হন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাহবুব আলম, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুনের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম আখেরি মোনাজাতে শামিল হন বলে জানা গেছে। 
মুসল্লিদের জন্য ট্রেন ও শাটল বাস ॥ আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে যেতে ও মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারেন সেজন্য গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন শনিবার মধ্যরাত হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে আব্দুল্লাহপুর এবং কালীগঞ্জ সড়কের মীরের বাজার হতে কামারপাড়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে ওই এলাকায় মুসল্লিদের সুবিধার্থে ময়দানমুখী শাটল বাস চলাচল করেছে। আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা এ শাটল বাসে যাতায়ত করে। মোনাজাত শেষে টঙ্গী থেকে সবার বাড়ি ফেরার সুবিধার জন্য বেশ কয়েকটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ।
প্রথম পর্বে দু’সহ¯্রাধিক জামাত তৈরি ॥ বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে তাবলীগের কাজে বের হতে এবার ইজতেমাস্থলে প্রথম পর্বে দু’সহস্রাধিক জামাত তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় জামাত হয়েছে প্রায় দু’হাজার এবং প্রায় ৮শ’ বিদেশী জামাত হয়েছে। এসব জামাতে কেউ কেউ এক চিল্লা, দু’চিল্লা, তিন চিল্লা, ছয় চিল্লা ও এক বছরের চিল্লা এমনকি আজীবন চিল্লার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আগামি ১৫-২০ দিনে মধ্যে এসব জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
বিদেশী মুসল্লি ॥ রবিবার দুপুর পর্যন্ত  বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব-আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, শাদ, ইথিওপিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালয়েশিয়া, মরক্কো, নেপাল, কেনিয়া, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন ও জর্দানসহ বিশে^র ৭২টি দেশের ৮ সহস্রাধিক মুসল্লী অংশ নেন। তা ছাড়া এপর্বে দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মূসল্লি ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন বলে ইজতেমার প্রথমপর্বের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. হাবিবুল্লা রায়হান জানিয়েছেন। 
মোনাজাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ ॥ আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিপুল সংখ্যক নারী। ইজতেমায় নারীদের অংশ নেওয়ার বিধান না থাকলেও এসব নারীদের অধিকাংশই আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশেপাশে, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে ও বিভিন্ন দালানের ছাদে অবস্থান নেন। এছাড়াও ভোর থেকে নারীরা ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের মাঠ, ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশে কামারপাড়া ও আশপাশের খোলা ময়দানে অবস্থান নেন। তারা স্ব স্ব অবস্থানে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন। 
ইজতেমা ময়দান এলাকায় ইসলামিক ভাবধারায় তোরণ ॥ এবারের বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনে এবং মুসল্লীদের সেবায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকায়  বিশেষ ব্যবস্থা নেন। টঙ্গীর সড়ক দ্বীপগুলোতে ইসলামিক ভাবধারায় বেশকয়েকটি তোরন নির্মান করে মুসল্লীদের স্বাগত জানানো হয়। এসব তোরণে সচেতনতা মূলক বিভিন্ন শ্লোগানও লেখা ছিল। প্রায় ৬ হাজার এলইডি লাইটের আলোয় রাতের ইজতেমা ময়দান ও এর আশপাশ এলাকা ছিল দৃষ্টিনন্দনে ভরপুর। টঙ্গী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ প্রসঙ্গে জানান, দেশী বিদেশী মুসল্লীদের কাছে বর্তমান সরকারের ইজতেমার ব্যাপক আয়োজন ফুটিয়ে তুলতেই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।  

×