প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভোটের মাঝে যদি কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটে তাহলে আমাদের অবহিত করা হলে সেসব ভোটকেন্দ্রের ভোট আমরা বন্ধ করে দেবো। আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছি, অনেকে আশ্বস্ত হয়েছেন, কেউ কেউ আশ্বস্ত নাও হতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে আমরা বলতে চাই, এই ধরনের ঘটনা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবে না।’
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) অডিটোরিয়ামে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করে ইসি। পরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা ভোটগ্রহণের বিষয়ে নিজেদের সন্দেহের কথা বলেছেন। আমরা বলেছি প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ভোট শুরুর আগে পোলিং এজেন্টরা দাঁড়িয়ে দেখে নিবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না।
ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভোট গণনা এবং ঘোষণা পর্যন্ত তারা ওখানে উপস্থিত থেকে দেখবেন গণনা সঠিক হয়েছে কি না। যদি সব কেন্দ্রে গণনা সঠিকভাবে হয়ে গেছে দেখা যায়, তাহলে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়ে যাবে।’
এর আগে সকাল ১০টায় নগরীর ষোলশহর এলজিইডি মিলনায়তনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সিইসি। পরে দুপুর ১২টায় পিটিআই অডিটোরিয়ামে বিভাগের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এসব মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সভা দুটিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, জেলা পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যদি পেশিশক্তির কোনো উদ্ভব ঘটে, সেজন্য প্রশাসনকে বলে দিয়েছি, রিটার্নিং অফিসাররা যদি অবগত হন এবং প্রিজাইডিং অফিসারকে যদি বলা হয়, তিনি তাৎক্ষণিক ভোট বন্ধ করে দেবেন। উনি যদি বন্ধ না করেন, রিটার্নিং অফিসার যদি অবগত হন, তিনি বন্ধ করে দেবেন। তিনিও যদি না করেন, তাহলে আমরা যদি অবগত হই, ঢাকা থেকে আমরাও নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারবো। এজন্য বলেছি, আমাদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে যে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে, সে অনাস্থা অবিশ্বাসটুকু যাতে দূর হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মাঠপর্যায়ে ওসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার সবার বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে, এখনো পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো। তবে আমরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি- শেষ দিন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশটা ধরে রাখতে হবে। আরেকটি বার্তা দিয়েছি- ভোট গ্রহণের দিন, সেদিনের বিষয়টি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে থাকবে। ভোট অবাধ হলো, সেখানে কারচুরি হয়েছে কি না, সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যারা ভোটগ্রহণ করবেন, প্রিজাইডিং অফিসারসহ তার নিচের লোকজন। ভোটকেন্দ্রে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি কোনোভাবেই যাতে প্রবেশ করতে না পারে, সেটা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলুন, ‘কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি যদি কোনো ভোটকেন্দ্রে যদি কোনোভাবেই প্রবেশ করে, তাহলে বুঝতে হবে তার কুমতলব রয়েছে। ফলে কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা কঠোর বার্তা দিয়েছি, কোনোভাবে তা বরদাশত করা যাবে না। আমাদের নির্বাচনী সংস্কৃতির মধ্যে কালোটাকার বিনিময়ে পেশাদার গুন্ডাদের ভাড়া করেন। তাদেরকে বলা হয় পেশিশক্তি, মাসলপাওয়ার। মাসলপাওয়ার যাতে ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পরে, সেদিকে কঠোর নজর রাখতে হবে।’
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে গণমাধ্যমকে প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি লাগবে না জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেকোনো মূল্যে আস্থাভাজনভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে আনতে হবে। ভোটের স্বচ্ছতা উঠে আসবে মিডিয়ার মাধ্যমে। মিডিয়ার কর্মীরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়েও ছবি তুলতে পারবেন।
প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে না। সরাসরি প্রবেশ করবেন। মিডিয়াকর্মী এবং পর্যবেক্ষকরা অবাধে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। সত্য-মিথ্যা তাৎক্ষণিকভাবে তারা মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণকে জানিয়ে দিতে পারবেন।’
বিশেষায়িত অ্যাপের মাধ্যমে ভোটের দিনের পরিস্থিতি জনগণ অবগত হতে পারবেন জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাপ তৈরি করেছি। এ অ্যাপে দুই ঘণ্টা অন্তর অন্তর ভোটের তথ্য ইনপুট দেওয়া হবে। কতটুকু ভোট সংগ্রহ হয়েছে, তার তথ্য। সাধারণ মানুষ ওই অ্যাপ মোবাইল ফোনে ডাউনলোড এবং ইনস্টল করে নির্বাচনের তথ্য জানতে পারবেন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সহিংসতা এড়িয়ে যেতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অনেক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত প্রার্থিতা বাতিলের মতো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা হুট করে প্রার্থিতা বাতিল করতে পারি না। আমরা এরই মধ্যে কয়েকজনকে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছি। আমরা নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজন হলে প্রার্থিতা বাতিল করবো।’
এস