এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত অনুষ্ঠান
দেশের এভিয়েশন সেক্টর কাঁপাতে আসছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। ঢাকা থেকে যারা এক টিকেটে দুনিয়াব্যাপী ঘুরতে চান- তাদের জন্যই এই এয়ারলাইন্স হবে সেরা আকর্ষণ। দুনিয়া ব্যাপী শীর্ষ স্টার লাইন্সের অন্যতম সদস্য এই এয়ারলাইন্সটির সঙ্গে গত সপ্তাহে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরিত হয়েছে। এখন চলছে ফ্লাইট পরিচালনার প্রস্তুতি। এমন খবরে ঢাকায় ভ্রমণপিপাসুদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপক কৌতুহল ও আগ্রহ।
ঢাকায় এয়ারলাইন্সটির জিএসএ- রিদম গ্রুপের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সোহাগ হোসেন জানিয়েছেন- আগামী ৮ মার্চ আন্তজার্তিক নারী দিবসে ইথিওপিয়ার ফ্লাইট চালুর জোর প্রস্তুতি চলছে। ওই ফ্লাইটের সব ক্রু থাকবে নারী। প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরে আরও বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি আদ্দিস আবাবা হয়ে দুনিয়াব্যাপী ফ্লাইট অপারেট করা হবে। পে লোকাল, ফ্লাই গ্লোবাল হবে এই এয়ারলাইন্সের মূলমন্ত্র। কম টাকায় বেশী সেবার নিশ্চিয়তা দিতে পারঙ্গম ইথিওপিয়া। এতে এভিয়েশন সেক্টর যোগ হবে নতুন মাত্রা।
এ বিষয়ে দেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ওয়াহিদুল আলম বলেন- ইথিওপিয়া এয়ারকে বলা হয়- আফ্রিকার এমিরেটস। আজকে পৃথিবীর শীর্ষ পঁচিশটি এয়ারলাইন্সের অন্যতম এটি। ৯০টি দেশের ১২৫ গন্তব্যে বর্তমানে কভার করছে। এর সঙ্গে ঢাকায় যুক্ত হওয়ায় উপকৃত হবে এভিয়েশন সেক্টর। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, সেবা বাড়বে টিকেটের দামও কমবে। এখন দেখতে হবে কতোটা দক্ষতার সঙ্গে চালানো হয় ফ্লাইট।
তিনি বলেন, ষাটের দশকে ইথিওপিয়ার সম্রাট হাইলে সেলাসী চেয়েছিলেন তার দেশকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করতে। সেজন্য তিনি ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্স গড়ে তুলেন। শুরু থেকে টানা চল্লিশ বছর এটি নেতৃত্বে ছিলেন বৃটিশ ও জার্মানীরা। তারা এটাকে দুনিয়ার সেরা এয়ারলাইন্সে পরিণত করার পর পর্যায়ক্রমে ইথিওপিয়ানদের হাতে ছেড়ে দেযা হয়। তারপর দিন দিনই উত্তরোত্তর ডালা মেলেছে আপন গতিতে, দুনিয়াব্যাপী সুনাম ও মর্যাদার সঙ্গে।
এদিকে জানা গেছে- বিগত কয়েক বছর ধরেই ইথিওপিয়া এয়ারলাইন্সের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করার চেষ্টা করা হলেও নানা কারণে তা গতি পাায়নি। শেষ পর্যন্ত গত সপ্তাহে সৌদি আরবে স্বাক্ষর করা হয় বহহুলৈ প্রতিক্ষীত এই চুক্তি।
চুক্তির বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ শাখার উপ পরিচালক সোহেল কামরুজ্জামান জানিয়েছে-গত ৩-৭ ডিসেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা –(আইকাও)-এর বিমান চলাচল নেগোসিয়েশন সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় ইভেন্ট আইকাও এয়ার সার্ভিস নেগোসিয়েশন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আইকাও-এর ৯৭টি সদস্য দেশের এরোনটিক্যাল অথরিটির প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। এ ইভেন্টে মূলতঃ আইকাও-এর সদস্য দেশসমূহ নিজেদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর, দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তির সম্প্র্রসারণ এবং বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা ও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা- পর্যালোচনা হয়ে থাকে।
এবার বাংলাদেশ থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইভেন্টটিতে অংশগ্রহণ করে।
এতে বাংলাদেশের সঙ্গে মোট ১৩টি দেশের দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের বড় অর্জন বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে নতুন দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর। এ চুক্তির ফলে দুই দেশের মনোনীত বিমান সংস্থা দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
নতুন এ চুক্তি স্বাক্ষর ছাড়াও, বাংলাদেশের সংগে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তিসমূহের আওতায় বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাদি সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে কুয়েত, কাতার ও বাহরাইনের মধ্যে সম্মতি পত্র, জর্ডান, আলজেরিয়া, ওমান, থাইল্যান্ড, কানাডা, উজবেকিস্তানে সংগে আলোচনার রেকর্ড, বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে নেদারল্যান্ডস, জার্মানী, ও যুক্তরাজ্যের সংগে রেকর্ড অব ডিসকাসন স্বাক্ষরিত হয়েছে। বৈঠকে বিমান বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশীয় এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বিদেশী এয়ারলাইন্সের কোড শেয়ার সহ বাণিজ্যিক সহযোগিতা বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
অধিকন্তু, এ ইভেন্টে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব এ ৩টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ফলপ্রসূ সভা করেন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান। এ সময় অনেক রাষ্ট্রের মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ও মতবিনিময় করেন।
সোহেল কামরুজ্জামান বলেন- এ অধিবেশনে অংশগ্রহণের কারণে একদিকে যেমন বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিনের অসম্পুর্ণ বেশ কিছু বিষয় সস্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ আরো বিস্তৃত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে দেশগুলোর আগ্রহ, অগ্রগতি এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে দেশগুলোর উচ্চ ধারণা সম্পর্কে অবগত হওয়া সম্ভব হয়েছে–যা বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্প্রসারণে আরো অবদান রাখবে। কারণ এ ধরণের ইভেন্ট প্রতিবছর নিয়মিত হওয়ার বিধান থাকলেও কোভিড মহামারির কারণে চার বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজাদ/এস