ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিজয়ের মাস

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

বিজয়ের মাস

৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। সর্বত্র পর্যুদস্ত পাক হানাদাররা

৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১। সর্বত্র পর্যুদস্ত পাক হানাদাররা। লাল-সবুজ পতাকার ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে দেশের আনাচে-কানাচে। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। চারিদিকে উড়ছে মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের রক্ত¯œœাত স্বাধীন পতাকা। একের পর এক জেলা হচ্ছে হানাদার মুক্ত। 
একাত্তরের ডিসেম্বরের এদিন বাংলা ও ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সহযোগিতা চুক্তি। ভারতীয় ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কমান্ডে পরিচালিত হয় মুক্তিবাহিনী। তিনি জেনারেল ম্যানেকশর মাধ্যমে উভয় সরকার প্রধানকে রিপোর্ট করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রক্তক্ষরা ডিসেম্বরের এদিন অনেকটা বিনা বাধায় শত্রু সেনাদের বিতাড়ণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অন্যতম অঞ্চল যশোর মুক্ত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর দুর্গ বলে পরিচিত যশোরের আকাশে উড্ডীন লাল-সবুজ পতাকার ঢেউ। লাখো প্রাণ আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি নতুন রাষ্ট্রের আলো ছড়াতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে স্বাধীন হয়ে উঠতে শুরু করে বাংলার অবারিত প্রান্তর। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীনতা চাই, বিজয় চাই। হায়েনার থাবা থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতেই হবে- এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বীর সেনানীরা। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে চলছে সম্মুখ লড়াই। ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় গোপালগঞ্জ, শেরপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লার বরুড়া, সাতক্ষীরা আর সিলেটের বালাগঞ্জ। কোনরূপ প্রতিরোধ ছাড়াই যশোর শত্রু মুক্ত হয়। 
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় পর্যুদস্ত পাক সেনারা আগেরদিনই যশোর ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে পালিয়েছে। মিত্রবাহিনী একটা বুলেট খরচ ছাড়াই প্রবেশ করল পাক সেনাদের এই শক্ত ঘাঁটিতে। পাকিস্তানি সেনারা যে ট্যাংক, কামান, ট্রাক ও জিপ নিয়ে খুলনার দিকে পালিয়েছে তা এলাকার মানুষ জানাল মিত্রবাহিনীকে। সঙ্গে সঙ্গে মিত্রবাহিনী ছুটল খুলনার দিকে। 
ওদিকে তখন নবম ডিভিশনের সদর ঘাঁটিতেও সব খবর পৌঁছে গেছে। ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল দলবীর সিং বয়রা-ঝিকরগাছার পথ ধরে গোটা নবম ডিভিশনকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন যশোর শহরে। যশোরে পাকিস্তানি নবম ডিভিশনের মতো মিত্রবাহিনীর সদর দপ্তর হলো। সিলেটও পতন হলো ওইদিন দুপুরে। প্রথমে ভারতীয় ছত্রী সেনারা নামল সিলেটের নিকটবর্তী বিমানবন্দর শালুটিকরে খুব ভোরে। তারপর চতুর্দিক থেকে মিত্রবাহিনী সিলেটের পাকিস্তানি ঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। দুপুরেই সিলেটের পাকিস্তানি সেনানায়ক আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো।

ভারত ও ভুটানের স্বীকৃতিতে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। রণযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও পাকিস্তান সরকারের পতনে বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে সে দেশের সামরিক শাসকরা। যুদ্ধের মাঠের মতো কূটনৈতিক পর্যায়েও একের পর এক পরাজয় ঘিরে ফেলে পাক জান্তাদের। অন্যদিকে সম্মুখযুদ্ধে একের পর এক জেলা জয় করে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা জয় করতে ক্রমশ ঃ এগিয়ে আসতে শুরু করে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিতে প্রহর গুণতে তাকে বাংলার মুক্তি পাগল দামাল ছেলেরা। 
বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে স্মরণ করছে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য আত্মউৎসর্গকারী শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, ঘৃণা-ধিক্কার জানাচ্ছে স্বাধীনতার শত্রু এ দেশীয় রাজাকার-আলবদর-আলশামস ও তাদের দোসরদের।

×