ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চিকিৎসা বিজ্ঞান

করোনা টিকার জন্য নোবেল

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২ অক্টোবর ২০২৩

করোনা টিকার জন্য নোবেল

কাতালিন কারিকো ও ড্রিউ ওয়েইজম্যান

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উন্নয়নে অবদান রাখায় এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শরীরতত্ত্বে নোবেল পেয়েছেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান বিজ্ঞানী কাতালিন কারিকো এবং মার্কিন বিজ্ঞানী ড্রিউ ওয়েইজম্যান। বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নোবেল জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রথা অনুযায়ী, প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার শুরু হয় নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা। সে হিসেবে সোমবার প্রথম দিন ঘোষণা করা হলো চিকিৎসায় নোবেল। খবর এএফপির।
করোনার বিরুদ্ধে এমআরএনএ টিকার বিকাশে সহায়ক নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তন আবিষ্কারে এই পুরস্কার পেলেন তারা। তারা যে প্রযুক্তিটি আবিষ্কার করেছেন, করোনা মহামারির আগে তা পরীক্ষামূলক ছিল। এখন তা ব্যবহার করে বহু মানুষকে প্রাণঘাতী করোনার প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও মডার্নার করোনা টিকা এমআরএনএ প্রযুক্তির। একই প্রযুক্তি ক্যান্সারের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণা কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। নোবেল পুরস্কার কমিটি ঘোষণায় বলেছে, আধুনিক সময়ে মানব স্বাস্থ্যে সবচেয়ে বড় হুমকির ভ্যাকসিন উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছেন বিজয়ীরা। 
এ মাসের ছয়দিন মোট ছয়টি বিভাগে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়। ৩ অক্টোবর পদার্থে, আর ৪ অক্টোবর রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর ৫ অক্টোবর সাহিত্যে, আর ৬ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম জানা যাবে। দুদিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতির নোবেল। চিকিৎসা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার সুইডেনের বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে এবং তার রেখে যাওয়া অর্থে দেওয়া হয়। 
সুইডিশ শিল্পপতি নোবেল ডিনামাইটের উদ্ভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে এ পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় অর্থনীতি। ১৯৬৮ সাল থেকে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলফ্রেড নোবেলের অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে অবদানের কথা স্মরণ করে এ পুরস্কার দেওয়া শুরু করে। প্রতি বছর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুদিবস ডিসেম্বরের ১০ তারিখে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ তুলে দেওয়া হয়। এ সময় তাদের একটি করে সনদ ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। তবে এ বছর থেকে পুরস্কারের অর্থমূল্য ৮৯ হাজার মার্কিন ডলার বাড়িয়ে ৯ লাখ ৮৯ হাজার ডলার করা হয়েছে (১১ লাখ ক্রোনা)।
কাতালিন কারিকো ॥ ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির সোলনক শহরে জন্ম নেওয়া কাতালিন কারিকো দেশটির সেগেড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর জৈব রসায়ন শাস্ত্রে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন তিনি। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর হাঙ্গেরিয়ান একাডেমি অব সায়েন্সেসের অধীনে সেগেড বিশ্বিবিদ্যালয়েই পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় মনোযোগী হন কাতালিন। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন তিনি। পরে সে বছরই হাঙ্গেরি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান কাতালিন। সেখানে দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য পেনসিলভেনিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স, বেথসেডায় পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা সম্পন্ন করার পর ১৯৮৯ নালে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। 
এই পদে তিনি ছিলেন ২০১৩ সাল পর্যন্ত। ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়া থেকে অবসর নেওয়ার পর জার্মানির শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বায়োএনটেক আরএনএ ফার্মাসিউটিক্যালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন কাতালিন। উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রথম আরএনএ করোনা টিকা ফাইজার অ্যান্ড বায়োএনটেক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে মার্কিন কোম্পানির অংশীদার ছিল বায়োএনটেক। ২০২১ সালে ফের সেগেড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান কাতালিন এবং পূর্ণাঙ্গ অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। কাছাকাছি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনে অতিরিক্ত অধ্যাপক হন। এখনো এ দুই পদে আছেন তিনি।
ড্রিউ ওয়েইজম্যান ॥ কাতালিন কারিকোর সঙ্গে যুগ্মভাবে নোবেলজয়ী ড্রিউ ওয়েইজম্যান ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের লেক্সিংটন শহরে জন্ম নেন। দেশটির ব্র্যান্ডিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে এনজাইমোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি নেওয়া ওয়েইজম্যান ১৯৮৭ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুজীববিজ্ঞানে (মাইক্রোবায়োলজি) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের অধীন বেথ ইসরাইল ডিকোনেস মেডিক্যাল সেন্টার থেকে ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ ও যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ থেকে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন ড্রিউ ওয়েইজম্যান। ১৯৯৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ার অধীন পেরেলম্যান স্কুল অব মেডিসিনে গবেষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। এখনো এই পদেই আছেন তিনি।

×