ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

আলোর নিচে অন্ধকার

মগবাজার উড়াল সেতুর নিচেও বেহাল দশা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মগবাজার উড়াল সেতুর নিচেও বেহাল দশা

ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গা দখল করে ডাস্টবিনের গাড়ি ও আর্বজনা স্তুূপ করে রাখা হয়েছে

রাজধানীর মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি চালু হয় ২০১৬ সালে। প্রায় কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারে ওঠা-নামার জন্য রয়েছে ১৭টি র‌্যাম্প। এগুলো হলো-সাতরাস্তা অংশে ২টি, হলিফ্যামিলি হাসপাতাল অংশে ২টি, বাংলামোটর-মগবাজার ওয়ারলেস অংশে ৪টি, কাওরানবাজার অংশে ১টি, রাজারবাগ অংশে ৩টি, শান্তিরনগর অংশে ৩টি এবং মালিবাগ আবুল হোটেল অংশের ২টি র‌্যাম্প দিয়ে যানবাহন ফ্লাইওভারে ওঠা-নামা করে।

কিন্তু এসব র‌্যাম্প ফ্লাইওভারের নিচের অবস্থা খুবই খারাপ। ফ্লাইওভারের নিচে ভাতের দোকান থেকে শুরু করে মুরগির দোকান, মাছ-মাংসের দোকান, টং ঘর, গাড়ি রাখার গ্যারেজ, অবৈধ পার্কিং, পুলিশ ট্রাফিক বক্স, রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের কার্যালয়, গোডাউন, শৌচাগার-এমনকি থাকার ঘরও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া আবর্জনা রাখার জন্য ফ্লাইওভারের নিচে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এসব এসটিএসের গেট খোলা থাকায় দুর্গন্ধে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হয় বলে স্থানীয়রা জানান।

অথচ ফ্লাইওভারের নিচের অংশের মিডিয়ানের সৌন্দর্যবর্ধন করার কথা ছিল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কিন্তু দীর্ঘ সাত বছরেও ফ্লাইওভারের নিচের মিডিয়ানের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়নি। এমনকি মগবাজার ফ্লাইওভারের মিডিয়ানের বিভিন্ন স্থানের উঁচু বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে রাখার কারণে নিচের সড়ক ছোট হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন সময় সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট।

ফ্লাইওভারের ওপর নিচ দুটোই জনগণের সম্পত্তি। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ফ্লাইওভারের নিচে এমন করে দখলের নজির নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। এজন্য নিচের অংশ গণপরিসরে ব্যবহারের উপযোগী করার পরামর্শ তাদের।

বিষয়ে পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব জনকণ্ঠকে বলেন, ‘উড়াল সেতুর নিচের অংশ যাতে গণপরিসরে ব্যবহার উপযোগী করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই নির্দেশনার আলোকে সিটি করপোরেশন তাদের ফ্লাইওভারের নিচের মিডিয়ানে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে ফ্লাইওভারের নিচ এমন করে দখল হয় না। ফ্লাইওভারের নিচে কোনো স্থাপনা থাকতে পারে না। ফ্লাইওভারের ওপর নিচ দুটোই জনগণের সম্পত্তি। কোনো ব্যক্তি, কোনো গোষ্ঠী, কোনো সংস্থার নয়।

নিচে যদি কোনো স্থাপনা করতে হয়, তাহলে যাদের সম্পত্তি, অর্থাৎ সাধারণ মানুষের মতামত নিয়েই করতে হবে। শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা হতে পারে।নিচের অংশে এসটিএস, পুলিশ বক্স বা টয়লেট-পুরোটাই অবৈধ, অন্যায় কাজ বলে জানান তিনি। সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ঘুরে দেখা গেছে, নয় কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারের বেশিরভাগ মিডিয়ানের অংশে ---- অবস্থা। রাজধানীর মগবাজার চৌরাস্তা থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত ফ্লাইওভারের পিলারে বিভিন্ন রংতুলির ডিজাইন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কিন্তু মিডিয়ানের ফাঁকা জায়গা নোংরা অবস্থা ফেলে রাখা হয়েছে। এসব স্থানে ভবঘুরে মাদবসেবীদের আড্ডার স্থানে পরিণত হয়েছে।

মগবাজার চৌরাস্তার মোড় থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের প্রায় কিলোমিটার অংশের অবস্থা আরও খারাপ। এই অংশে মিডিয়ানের দুই পাশে উঁচু বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এই অংশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে নোংরা করে রাখা হয়েছে।

স্থানীয়রা বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই ডাস্টবিনের কারণে এলাকার বাতাস আরও দূষিত হয়ে গেছে। সারাক্ষণ বাতাসে ভেসে বেড়ায় পচা দুর্গন্ধ। মগবাজার মোড় থেকে বাংলামোটর পর্যন্ত রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক আবাসিক এলাকা। এরমধ্যে অকুনোভা হাসপাতাল, মিনা বাজার, ব্যাংকসহ অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। আবর্জনার এসটিএসের আশপাশে রয়েছে উন্মুক্ত খাবারের দোকান, হোটেল, জাতীয় চার্চ পরিষদ এজি চার্চ স্কুল, স্যাকিড হার্ট স্কুল, ওয়াকফ ভবনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক, শিশু শিক্ষার্থীরা এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। এসটিএসের গেট খোলা থাকায় দুর্গন্ধে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হয় বলে জানান তারা।

আবু ইউসুফ নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা জনকণ্ঠকে বলেন, পৃথিবীর কোথাও ফ্লাইওভারের নিচে এভাবে ময়লার ভাগাড় বানানো হয় না। আগে আবর্জনা থাকতো রাস্তায়। এখন রাস্তার চারদিকে বাউন্ডারি দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু দুর্গন্ধ সেই আগের মতোই।’ 

ইস্কাটন মোড়ে আরিফ নামের এক দোকানদার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গত এক-দেড় বছর যাবত মহা সমস্যায় আছি। দোকানে বসা যায় না দুর্গন্ধে। সারা এলাকার আবর্জনা এখানে ভাগ করা হয়। আবর্জনা রাখার জন্য একটি ঘর বানাইছে সিটি করপোরেশন। কিন্তু সব ময়লা এনে রাস্তার ওপর রাখা হয়। ছোট ছোট ময়লার গাড়িগুলো সব রাস্তার ওপর রাখা হয়। আবর্জনা রাখার ঘরের গেট ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে।এতে দুর্গন্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান তিনি।    

মালিবাগ মোড়ে আনোয়ার নামের এক চা দোকানদার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘গত তিন থেকে চার বছর যাবত এখানে টং দোকানে চা বিক্রয় করি। আমার দোকান যে কোন সময় সরিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু নিচে আবর্জনা ফেলে খারাপ অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। আবর্জনার গাড়ি রাস্তার আবর্জনা নেয়। কিন্তু বাউন্ডারির ভেতরের আবর্জনা নেয় না। ময়লা পচা গন্ধে এখানে দোকান করা যায় না। এছাড়া মশার কাঁমড়ের ঝালাপালা ইঁদুরের যন্ত্রণায় এখানে খুব সমস্যা হয়। বাউন্ডারি ঘেরা জায়গার কয়েক হাজার ইঁদুর রয়েছে বলে জানান তিনি।

ফ্লাইওভারের নিচের সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মগবাজার ফ্লাইওভারের অর্ধেক উত্তর সিটি করপোরেশন অংশে পড়েছে। এরমধ্যে সাতরাস্তা থেকে মগবাজার মোড় পর্যন্ত কিছু অংশ রংতুলি দিয়ে সৌন্দর্য করা হয়েছে। বাকি অংশের বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। মিডিয়ানের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।পর্যায়ক্রমে সব অংশে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে বলে জানান তিনি।

×