
সেন্ট্রাল হাসপাতাল। ফাইল ফটো
- কর্মসূচি স্থগিত করলেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা
- আবারও শুরু চেম্বার ও অপারেশন কার্যক্রম
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে নবজাতকের মৃত্যু ও মায়ের জীবন মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার দুই চিকিৎসক জামিন পেয়েছেন। জামিন পাওয়া দুই চিকিৎসক হলেন হলেন ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মোস্তাকি। মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান উদ্দিন সোহাগ তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। আর এই রায়ের পরপরই চেম্বার বন্ধ এবং অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। ফলে এদিন বিকাল থেকেই বেসরকার হাসপাতালগুলোতে পুনরায় চেম্বারে রোগী দেখা শুরু করেন তারা। এবং স্বাভাবিকভাবে শুরু হতে থাকে অপারেশন কার্যক্রমও। তবে এর আগে পর্যন্ত দেশের প্রায় সব হাসপাতালেই সোমবার সকাল থেকে বন্ধ ছিলো চেম্বারে রোগীদেখাসহ অপারেশন। এতে করে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ।
দুই চিকিৎসকের জামিন পাওয়া সাপেক্ষে চলমান কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব সার্জনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বিকাল থেকে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন চলবে।
সেন্ট্রাল হসপিটালে প্রসূতি ও নবজাতক মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোমবার (১৭ জুলাই) ও মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে প্রাইভেট চেম্বার ও অপারেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে চিকিৎসকদের অন্য সংগঠনগুলোও। ফলে সোমবার থেকে দেশের কোথাও বেসরকারি হাসপাতালে চেম্বারে রোগী দেখেন নি চিকিৎসকরা। হয় নি পূর্বনির্ধারিত কোনো অপারেশনও। মঙ্গলবার সকালেও রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসক না পেয়ে রোগীরা ফিরে গেছেন। কেউ বা জরুরি চিকিৎসা নিতে গেছেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে। ফলে চলমান ডেঙ্গুর তীব্রতায় ডেঙ্গু রোগীদের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালগুলোতে অন্যান্য রোগীদেরও চাপ বাড়ে। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে পেটের তীব্র ব্যাথা নিয়ে চিকিৎসক দেখাতে এসেছেন মগবাজারের আশেকুর রহমান। তিনি বলেন, সাধারণত সরকারি হাসপাতালের ভীড় এড়াতে বেসরকারি হাসপাতালেই যাই। সকালে যখন পেটের ব্যাথা তীব্র হয় তখনই মৌচাকের সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে যাই। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয় কোনো ডাক্তার চেম্বারে নেই। তাই বাধ্য হয়ে এখানে এসেছি। একইভাবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগেও বাড়ে রোগীর চাপ। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের আশেপাশে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কোনোটিতেই চেম্বারে ডাক্তার না থাকায় এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানান হাসপাতালটির পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, এমনিতেই আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় বাড়ছে প্রতিদিন। এর ওপর অন্যান্য রোগীও বেড়েছে মঙ্গলবার। তবে বিকালে স্বাভাবিক হয়ে আসে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র।
রাজধানীসহ দেশের সবগুলো বেসরকারি হাসপাতালেই পুনরায় চেম্বার শুরু করেন চিকিৎসকরা। ওজিএসবি’র নেতা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রুশদানা রহমান তমা জনকণ্ঠকে বলেন, কোনো ডাক্তারই চায় না তার রোগী মারা যাক। তারপরও কোনো রোগীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগেই কেনো গ্রেফতার করা হবে। তাই আমরা এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবে দুই চিকিৎসকের জামিন হওয়ায় আজ (মঙ্গলবার) বিকাল ৪ টা থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি। তবে ভবিষ্যতে যেনো এরকম কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটে সে জন্য আমরা পরবর্তীতে হাইকোর্টে একটি রিট করার চিন্তা করছি।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লার তিতাস উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমানকে গত ৯ জুন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বাভাবিক প্রসবের ইচ্ছা ছিল তার। মাহবুবাকে যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হয়, সেই চিকিৎসক তখন দেশে ছিলেন না। তার অনুপস্থিতির কথা রোগী বা রোগীর স্বজনদের জানানো হয়নি। অন্য একজন চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্রোপচার করেন। ১১ জুন নবজাতকের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে মাহবুবার শারীরিক অবস্থাও খারাপের দিকে যায়। তার আইসিইউ দরকার ছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালে তা ছিল না। তাকে পাশের ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ১৮ জুন তার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় নবজাতকের বাবা ইয়াকুব আলী চিকিৎসায় অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু ও স্ত্রীর জীবন মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছে, এমন অভিযোগ এনে সেন্ট্রাল হাসপাতালের মোট ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় কয়েকজন ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামির কথাও উল্লেখ করা হয়।
স্বপ্না