ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

মশক নিধন অভিযানে সাড়ে ২৮ লাখ জরিমানা 

সরকারি অফিসে এডিস পাওয়া অত্যন্ত লজ্জাকর 

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১০ জুলাই ২০২৩; আপডেট: ১৯:৩০, ১০ জুলাই ২০২৩

সরকারি অফিসে এডিস পাওয়া অত্যন্ত লজ্জাকর 

ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাজধানীতে মশক নিধন অভিযানের তৃতীয় দিনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ১৬টি মামলায় ২৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত। 

সোমবার কারওয়ান বাজারে কয়েকটি সরকারি অফিসে ঝটিকা অভিযানের নেতৃত্ব দেন মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। 

এ সময় তিনি বলেন- সরকারি প্রতিষ্ঠানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক, অত্যন্ত হতাশার। আমাদের মন্ত্রণালয়ে মিটিং হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হয়। একাধিকবার মিটিং হয়েছে। আমরা সবাই কিন্তু বলেছি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবো।  দায়িত্ব পালন করবো। সবাই মুখে বলে কিন্তু বাস্তবে কেউ দয়িত্ব পালন করছে না।

এদিন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ঝটিকা অভিযানে গিয়ে কারওয়ান বাজারে সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি ভবন পরিদর্শন করেন। এসময় জাহাঙ্গীর টাওয়ার, কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন (পেট্রোবাংলা), যমুনা অয়েলের নির্মাণাধীন ভবন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের বেজমেন্টে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টাকা করে মোট ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

মেয়রের উপস্থিতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বির আহমেদ। এছাড়াও মেয়র ওয়াসা ভবনসহ আরও কয়েকটি ভবনের বেজমেন্ট পরিদর্শন করেন। অভিযানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেঃ জেনাঃ এ.কে.এম শফিকুর রহমান।

কারওয়ান বাজার ছাড়াও ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলেই একযোগে অভিযান পরিচালনা করেছে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ।
আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী  ম্যাজিস্ট্রেটদের অভিযানে ১১টি মামলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও ৩টি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। 

কারওয়ান বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'বাস্তবে যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাই দায়িত্ব পালন করতো তাহলে আজকে এই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যেতো না। যে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে তা হয়ত লাগতো না, যদি তারা মাত্র ৫০০ টাকা খরচ করতো। তাদের দায়িত্ব ছিল এখানে ওষুধ ছিটিযে দেওয়া একটু ব্লিচিং পাউডার, একটু কেরোসিন ব্যবহার করা। 

তিনি বলেন- আমি মনে করি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটা সবাইকে নিতে হবে। দায়িত্ব কিন্তু একা সিটি কর্পোরেশনের না। এই শহর আমাদের সবার। এই শহরটাকে সবাইকেই ভালোবাসতে হবে। আমরা এডিস মশা বিরোধী সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মসজিদের ইমাম, খতিব, ক্যাডেট কোর, শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে স্কুল কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমরা মেসেজ দিচ্ছি যার যার প্রতিষ্ঠান অঙ্গন যেন আমরা পরিষ্কার রাখি। 

সবাই যার যার প্রতিষ্ঠান, ভবন পরিষ্কার রাখলে আমরা এডিস মশা থেকে অনেকখানি রক্ষা পেতে পারি। এতে করে শহরবাসীও রক্ষা পাবেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গত পরশু দিন আমরা রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাপান গার্ডেন সিটিতে অভিযান পরিচালনা করেছি, সেখানকার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সেখানে ২৭টা বিল্ডিংয়ের নিচে অভিযানে দেখেছি এডিস মশার লার্ভার চাষ হচ্ছে। 

আজকে আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে এসে দেখলাম এডিস মশার চাষ হচ্ছে। গ্রাউন্ড ফ্লোরে যেখানে গাড়ি রাখে, সেখানে ড্রেনে পানি। সেখানে মশার চাষ হচ্ছে। ভবনের ভিতরে বেজমেন্ট পরিষ্কার করার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, 'সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করছে। কিন্তু অফিসের, মার্কেটের, ও বাড়ির বেজমেন্ট পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ভবন মালিক বা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। 

এসময় ডিএনসিসি মেয়র অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, বাসা-বাড়ি, আমরা নিজ নিজ অঙ্গন পরিষ্কার রাখি। আমরা কিছুদিন ধরে দেখছি কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আমরা টেলিভিশন পত্রিকা অনলাইন খুললে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জানতে পারছি। 

সবার সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।তিনি  বলেন- সামনে, ঢাকার পরিস্থিতি আরো ভয়ানক অবস্থা সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। আমরা গতপরশুদিন জরিমানা করেছি প্রায় ৯ লাখ টাকা। তার আগের দিন জরিমানা করা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা। অভিযান চলছে, চলবে।  আমার অনুরোধ আপনারা জরিমানা না দিয়ে পরিষ্কার রাখুন নিজ নিজ অঙ্গন। আমরা যেখানেই এডিস মশার লার্ভা পাবো সেখানে জরিমানা করবো।

 

আজাদ সোলেমান

×