ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অক্টোবরেই উদ্বোধন শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল

প্রকাশিত: ১৬:৪০, ২৭ জুন ২০২৩

অক্টোবরেই উদ্বোধন শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল

সংবাদ সম্মেলন

এই অক্টোবর মাসেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সফট ওপেনিং করার জন্য প্রকল্প এলাকায় দিন রাত কাজ চলছে। তবে যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি খুলে দেয়া সম্ভব হবে আাগামী বছর। এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। 

মঙ্গলবার  বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের অগ্রগতি বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজিত হয়েছে নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালে।

এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সব থেকে দ্রুততম সময়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধনের (সফট ওপেনিং)। 

এই জন্য প্রকল্প এলাকায় দিন রাত কাজ চলছে। আপনারা জানেন আজ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখানে ৩-৪ হাজার শ্রমিক ছুটিতেও কাজ করে যাবেন। তারা শুধুমাত্র ঈদের দিন কাজ করবেন না, এরপরের দিন থেকে তারা আবার কাজ শুরু করবেন। 

আশা করছি সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে সফট ওপেনিং উদ্বোধন করা হবে। আমরা অক্টোবরের আগে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে চাই। আশা করি সময়ের আগে কাজ শেষ হবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ৭৭.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবর মাসে সফট উদ্বোধন হলেও এই টার্মিনাল পুরোপুরি ফাংশনাল হবে ২০২৪ সালে।

এ প্রকল্পে আমাদের স্ট্রাকচারাল সব কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। লিফট, এসকেলেটর লাগানো শহর টাইলসের কাজ চলছে। এখানে আরও অনেক সিস্টেম ইনস্টলের কাজ চলছে। এসব ইনস্টলেশনের কাজ আগামী ৬ মাসের মধ্যে শেষ হবে। আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকল্পের কাজে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন- চুক্তি অনুযায়ী আমরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন করতে যাচ্ছি। তবে এটাকে ফাংশনাল করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন। বোডিং ব্রিজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন যন্ত্র লাগানোর পর এগুলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়ার পর এগুলো আমরা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে পারব। কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে সবকিছু বুঝিযে দেবে। 

এছাড়া তারা আমাদেরকে প্রশিক্ষণও দেবে কীভাবে প্রকল্প সংশিষ্ট বিষয়ের মেইনটেনেন্স করা যায়। সফট ওপেনিং বলতে আমরা বোঝাচ্ছি টার্মিনালের কিছু কিছু অংশ আমরা ব্যবহার করতে পারব। তবে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগে পুরোপুরি এটা ব্যবহার করতে পারব না।

বিশ্বমানের এই এয়ারপোর্টের গ্রাউন্ডহ্যান্ডলিংয়ের কাজ জাপানকে দেয়ার সিদ্বান্ত কতোটা যৌক্তিক হয়েছে দৈনিক জনকন্ঠের এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন- জাপানও মান সম্মত কাজ করতে পারবে তেমনটি নিশ্চিত হয়েই দেয়া হয়েছে। জাপান নিজের দেশ নারিতা ও হানাদা এয়ারপোর্টে বেশ দক্ষতার ও সুনামের সঙ্গেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করছে। তারপরও আমাদের  পর্যবেক্ষণ থাকবে। তারা প্রয়োজনে বিশ্বের সেরা কোম্পানীর ইকুপমেন্ট ও দক্ষ জনবল দিয়েই কাজ করবে। আর আমরাও তাদের কাছ থেকেই দেখে দেখে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলব যাতে একটা সময়ের পর আমরা নিজেরাই এ দায়িত্ব পালন করতে পারি। 

প্রকল্পে আর বাড়তি অর্থ লাগবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি গর্ব করে বলতে পারি এ প্রকল্পের প্রথম ধাপে আমাদের অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজ হচ্ছে না। এই একটা মাত্র প্রকল্প যেখানে আমরা কিছু সাশ্রয় করেছিলাম। কিছু টাকা বেঁচে যাওয়ার কারণেই কিন্তু আমরা অতিরিক্ত কাজ করার সাহস করেছি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে অতিরিক্ত কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। এজন্য বাড়তি অর্থের প্রয়োজন আছে বলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আমাদের জানিয়েছে। এই প্রকল্পে আমাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করছে জাপানের প্রতিষ্ঠান জাইকা। তাদেরকে আমরা জানিয়েছি, অতিরিক্ত কাজের জন্য আমাদের কিছু অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। তারা আমাদের বলেছে বিষয়টি তারা বিবেচনা করছে।

তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন হেল্ডিংয়ের কাজ কারা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের বিষয়টি পিপিপি দেখছে। যতটুকু জানি আমাদের একটি বন্ধু রাষ্ট্রের অনুরোধে সে দেশের একটি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কাজ দেওয়া হতে পারে। তবে তাদের কী ট্রামস অ্যান্ড কন্ডিশনে দেওয়া হবে সেটা জানি না। পিপিপি এ বিষয়ে ফিজাবিলিটি স্টাডি করছে এবং তা কী কী ট্রামস অ্যান্ড কন্ডিশনে করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে। আমরা আশা করছি ঠাট্টা মিনারের উদ্বোধনের পর আমরা গুণগতমানের সেবা পাব। আমরা আশা করি তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর মানুষজন এটা ব্যবহার করে আমাদের ধন্যবাদ দিয়ে যাবে।

নতুন টার্মিনালের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও আমরা অন্যান্য দপ্তরের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা ইতোমধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সঙ্গে তৃতীয় টার্মিনালের যোগাযোগ স্থাপন করেছি। এছাড়া মেট্রোরেলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আমরা ইতোমধ্যে টানেল বানিয়ে রেখেছি।
প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন- এ প্রকল্পের কাজের মান নিয়ে বাহির থেকে অনেকেই অনেক কথা বলেন। আমরা এটা দৃঢ়তার সঙ্গে স্পষ্ট করতে চাই, আমরা ভেতর থেকে দেখছি। এ ধরণের প্রকল্পের বিশ্বের সেরা কোম্পানীগুলো সেরা জিনিস দিয়েই গুণমত নিশ্চিত করছে। দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা সেটার সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করছেন। একজন বা একটি কোম্পানী ইচ্ছা করলেই তার মতো মান নিয়ে কোন ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। শতভাগ নিরাপদ মান নিশ্চিত করেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কাজ হচ্ছে। 

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করছে স্যামসাং গ্রুপের কনস্ট্রাকশন ইউনিট স্যামসাং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ট্রেডিং (সিঅ্যান্ডটি) করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মিত স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে বুর্জ খলিফা, পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১, সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল, দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আবুধাবির ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও সম্ভাবনা উন্মোচনের মাধ্যমে নির্মাণে আধুনিকতা নিয়ে এসেছে স্যামসাং সিঅ্যান্ডটির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন গ্রুপ। 

এছাড়া টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াঞ্জুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ইসলামাবাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ভবনের নকশা তৈরি করেন।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। নির্মাণ কাজে অর্থায়ন করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বৃহৎ এই থার্ড টার্মিনাল প্রকল্পটির ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য প্রকল্প ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হয়েছে। তবে এ টার্মিনালের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হবে মডার্ন টার্মিনাল বিল্ডিং। দুই লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংয়ের ভেতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া।

আজাদ সোলেমান

সম্পর্কিত বিষয়:

×