ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সদস্যদের জন্য বিশেষ ইউনিফর্ম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ২৫ জুন ২০২৩

সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সদস্যদের জন্য বিশেষ ইউনিফর্ম

গণশুনানি অনুষ্ঠান

দেশের সব বিমানবন্দরে কর্মরত নিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা (এভসেক) এর প্রত্যেক সদস্যের জন্য অভিন্ন ইউনিফর্ম চালু করা হচ্ছে। বিমান বাহিনী, পুলিশ ও আনসার এই তিনটে সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এই এভসেক সদস্যরা এখন দায়িত্ব পালন করেন নিজ নিজ ইউনিটের ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায়। 

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে আয়োজিত এক গণশুনানি অনুষ্ঠানে এ দৈনিক জনকন্ঠের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য প্রকাশ করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এ গণশুনানির আয়োজন করে। এতে বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের সুখ দুঃখের কথা শুনেন চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরা। 

গণশুনানির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেবিচকের সদস্য এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সদস্য মো. মাহবুব আলম তালুকদার, সদস্য (নিরাপত্তা) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফী, প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেক ও বিমানবন্দরের নির্বাহি পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন  ড.কামরুল ইসলাম সহ অন্যরা।

এয়ার ভাইসমার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ, আনসার ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। তারা ভিন্ন ভিন্ন বাহিনীর হলেও তাদের কাজ এভিয়েশন সিকিউরিটি নিশ্চিত করা। যেহেতু তাদের সার্ভিসটা একই তাই আমরা তাদের একটা ইউনিফর্ম প্রবর্তন করবো। ইউনিফর্মের ডিজাইন ফাইনাল করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

এয়ারলাইন্সগুলোর লাগেজ রেখে আসার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, অনেক সময় এয়ারলাইন্সগুলো ন্যারো বডির এয়ারক্রাফটে (ছোট এয়ারক্রাফট) যাত্রীভর্তি করে নিয়ে দেশে আসে। তখন সব লাগেজ আনতে পারে না। আমরা এরই মধ্যে এয়ারলাইন্সগুলোকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছি। 

এছাড়া যারা ন্যারো বডির এয়ারক্রাফট নিয়ে দেশে আসে তাদের আমরা কিছু সিট ফাঁকা রেখে আসতে বলেছি।  এতে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক জানান- থার্ড টার্মিনাল হয়ে গেলে বর্তমান বিমানবন্দরের ১ ও ২ টার্মিনালকে যথাক্রমে অভ্যন্তরীন ও আঞ্চলিক বিমানববন্দরে পরিণত করা হবে। তখন বর্তমান অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ভেঙ্গে ফেলা হবে। 

যাত্রীদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের আচার-ব্যবহারের বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরে আমার বড় কনসার্ন ছিল যেন যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা বিমানবন্দরের সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। 
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণের বাইরেও তাদের সঙ্গে বসছে, আলোচনা করছে। তিনি জানান- এয়ারপোর্টে আগামী জুলাই মাসের মধ্যে এই হটলাইন সেবায় ২৪ ঘণ্টা যাত্রীরা মতামত বা অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন। হট লাইনের মাধ্যমে যে কোনো যাত্রী বা ব্যক্তি যে কোনো জায়গা থেকে বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে অভিযোগ বা মতামত জানাতে পারবেন। যে ধরনের অভিযোগই আসুক না কেন, তা সমাধান করা হবে। জুলাই নাগাদ এই হটলাইন সেবা চালু হবে। দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টা এই হটলাইনে যাত্রীরা যে কোনো অভিযোগ ও বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে মতামত জানাতে পারবে। এই সেবার জন্য জনবল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সেবা দিতে কোনো কমতি রাখা হবে না।

গণশুনানির আয়োজন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, সরকারি সংস্থাগুলো গণশুনানি করলে আগে থেকে জানানো হয়, অথচ বিমানবন্দরের গণশুনানি হলে যাত্রীদের অংশগ্রহণ কম থাকে কেন- এই প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণশুনানির আয়োজন হয় অংশীজনদের নিয়ে। আগামীতে পরিকল্পনা নিয়ে ওয়েবসাইটে গণশুনানির বিষয়ে আগে-ভাগে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। ১৫ দিন আগে তা জানানো হবে।’
এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন-গণশুনানির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চালু থাকবে। বিমানবন্দরে ২৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যাত্রীরা সাধারণত কোনো সমস্যায় পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন। হটলাইন চালু হলে যাত্রীদের ফোন নম্বরে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি টিকিট তৈরি হবে। সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ওই অভিযোগের টিকিট দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা হবে। সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

গণশুনানিতে জাজিরা এয়ারওয়েজের ঢাকা স্টেশন ম্যানেজার রেহনুমা শেখ শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি মেডিসিন কর্নার করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ নেয়া হলে যাত্রী ও বিমানবন্দরে কর্মরতদের অনেক উপকার হবে। এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান গণশুনানিতে জানান, বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ আছে। তবে ওষুধের বিষয়ে পৃথক কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সালাম এয়ারের প্রায় ১ হাজার যাত্রী তাদের লাগেজ পাচ্ছে না, এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সময়মতো যাত্রী লাগেজ পাওয়া নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে। যেসব উড়োজাহাজ সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসছে, তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ছোট আকারের উড়োজাহাজের (ন্যারো বডি) ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। কোনো এয়ারলাইনসকেই ছাড় দেয়া হবে না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বলে কয়েকটি অভিযোগ আছে, এসব অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দরের যারা কাজ করেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যারা যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

দুটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বিদেশফেরত যাত্রীদের বিমানবন্দরে হয়রানি করছেন। এই অভিযোগ দুটির বিষয়ে জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন-সিস্টেম কাজ করছে বলেই এই ঘটনা দুটি জানা গেছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না, সে যে পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোক না কেন। সবার ওপরে নজর আছে। ওই দুইজনের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ সময় তারা জানান- কোনভাবেই বিমানবন্দরের চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছেনা। এতে অবশ্যই বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার কেউ না কেউ জড়িত। 
 

 

এমএস / আজাদ

সম্পর্কিত বিষয়:

×