ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

হজের সব সংকট কেটেছে 

হাবের উদ্যেগে এজেন্সীর প্রতারিত সবাই এখন মক্কার পথে

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২১ জুন ২০২৩

হাবের উদ্যেগে এজেন্সীর প্রতারিত সবাই এখন মক্কার পথে

হজ ফ্লাইট

এসএম ট্রাভেলসের প্রতারণার শিকার হওয়া হজযাত্রীরা শেষ পর্যন্ত সৌদির পথে। আটকে পড়া ৩৩৯ জন হজযাত্রী বুধবার সন্ধ্যায় বিমানের (বিজি৪০০৯) ফ্লাইটে তারা ঢাকা ছেড়েছেন। এনিয়ে তিন ধাপে ৫৩৮ জন হজযাত্রীকেই সৌদি পাঠিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

এ ছাড়া হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়া আরও অন্তত ৫ হাজার হজযাত্রীর সৌদি গমন নিশ্চিত হলো। সৌদি সরকার বিমানকে আরও ৮টি অতিরিক্ত শ্লট দেয়ায় এখন আর কারোর হজফ্লাইট নিয়েই কোন ধরণের অনিশ্চয়তা বা জটিলতা নেই। 

শুক্রবারের মধ্যে এবারের কোঠার সব হজযাত্রীকেই সেীদি পাঠানো সম্ভব হবে বলে নিশ্চিত করেন হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম। তিনি বলেন- প্রতারকরা যতোই প্রভাবশালীই হোক না একজন হজযাত্রীও বাদ যাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে- কোন ভাবেই কাউকে রেখে হজ ফ্লাইট সমাপন ঘোষণা করার কোন সুযোগ নেই। যে কারণে প্রতারণার শিকার এসএম ট্রাভেলসের সব হজযাত্রীকেই  সৌদি পাঠানো হয়েছে। 

সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যায় ৭টার সময় তিন শতাধিক হজযাত্রীকে সৌদিতে পাঠানো হয়। কোনো হজযাত্রী বিপদে পড়লে তার পাশের দাঁড়ানোর দায়িত্ববোধ থেকেই হাব এ উদ্যোগ নিয়েছে। হজযাত্রীদের ভিসা, টিকিটসহ সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করেছি। তারা হজে যেতে পারছেন এটাই সুসংবাদ।

জানা গেছে, এর আগে দুটি ফ্লাইটে সৌদি গেছেন এ এজেন্সির ২২৭ জন। বুধবার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট নং- বিজি-৪০০৯ ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭টার ফ্লাইটে সৌদিতে রওয়ানা হন বাকিরা। এদিন বিকালের  মধ্যেই তারা হজ ক্যাম্পে ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন। বুধবার হজ ফ্লাইটের টিকেট ও ভিসা পেয়ে হজযাত্রী মামুন বলেন- প্রতারণার শিকার হয়ে সবাই আমরা সবার আগে হাব সভাপতি তসলিম সাহেবের কাছে আশ্রয় নিই। উনার বলিষ্ট ভুমিকায়  ধর্ম মন্ত্রনালয় ও সৌদি আরবে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেনদরবার করে অবশেষে এই জটিলতার নিরসন হয়েছে। সেজন্য আমরা হাব তথা তসলিম ভাইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ। 

এ বিষয়ে হাব জানিয়েছে- চলতি মৌসুমে এসএম ট্রাভেলস থেকে ৫৩৮ হজযাত্রীর হজ পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৭৫ জনের ভিসা হয়েছে। ৯০ জনের টিকিট কনফার্ম হওয়ার পর গত ১৪ জুন থেকে এজেন্সির মালিক শাহ আলম পালিয়ে যান। এসব হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের টাকা জমা ছিল। এছাড়া সৌদি আরবের হোটেল ভাড়া প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বুকিং করা ছিল। ভিসা ফি বা অন্যান্য খরচ যা প্রয়োজন হজযাত্রীদের কোনো পরিশোধ বকেয়া ছিল তা হাব সম্পন্ন করে হজের পাঠানোর উদ্যোগ নেয়।

কিভাবে এই জটিলতার অবসান হলো জানতে চাইলে শাহাদত হোসাইন তসলিম বলেন- এটা খুব কঠিন ও জটিল বিষয় ছিল। প্রতিবছরই দু’একটি এজেন্সীর এমন প্রতারণার দরুণ আমাদের গোটা হাবকে চিন্তিত থাকতে হয়। এবারও এসএম ট্রাভেলসের প্রতারণার শিকার হজযাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর পরই আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্বন্বয়ে ঢাকা-সৌদিতে দেনদরবার করি। কেননা সৌদি কর্তৃপক্ষ ভিসার প্রক্রিয়া ব্লক করে দিয়েছিল। সেটা চালু করে ভিসার ব্যবস্থা করেছি। তারপর ঢাকায় ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার করে বিমানের টিকেটের বন্দোবস্ত করি। এক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছুটা গাফিলতি ছিল। তারা এজেন্সীর কাছ থেকে টিকেটের সব টাকা বুঝে না নেযায় টিকেট দিতে রাজী হয়নি। কিন্তু বিশেষ  অনুরোধের দরুণ তারা তাতে রাজী হওয়ায় টিকেট নিয়ে যাত্রীদের হাতে বুঝিয়ে দেই। এভাবেই সন্ধ্যায় তারা ফ্লাইটে ওঠার সুযোগ পান। 

এদিকে আটকে পড়া হজযাত্রীরা ফ্লাইটের টিকেট পাওয়ার পর মুফতি আল আজিজ হজ কাফেলা দুই যাত্রী অভিযোগ করেন তারাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন।  প্রতারিত নওগার শরিফুল ইসলাম ও তার ভাই দুপুরে হজ পরিচালক সাইফুল ইসলামের কাছে তিনি তাদেরকে হাব সভাপতি তসলিমের কাছে পাঠিয়ে দেন। রাতে তাদের হজে পাঠানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত সময় কাটান তিনি। যেভাবেই হোক তাদেরও ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন তাসলিম। 

জানা গেছে- এবার হজ ফ্লাইট শুরুর পরদিনই হজ এজেন্সী মালিকদের প্রতারণা দরুণ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। সৌদিতে ৯ লাখ রিয়াল নিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন কোবা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. মাহমুদুর রহমান এবং তার ছেলে ইউরো ও আহসানিয়া হজ মিশনের মালিক সাদ বিন মাহমুদ। তাদের অধীনে ৮২৩ হজযাত্রীর ১ জুন সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। 

কিন্তু মালিক আটক হওয়ায় ওই তিন হজ এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত ৮২৩ জনের হজ পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরে হাবের মধ্যস্থতায় তাদের সৌদিতে পাঠানো হয়। ২, ৪ ও ১৩ জুন তিনটি ফ্লাইটে ৬৮৫ জন এবং সর্বশেষ ১৪ জুন বাকি ১৩৮ জনকে সৌদিতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে হাব সভাপতি বলেন, সৌদি পুলিশের হাতে মালিকরা আটক হওয়া পর থেকে ৮২৩ হজযাত্রীর যাত্রার বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। আমরা শুরু থেকে সবাইকে হজে পাঠানোর বিষয়ে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম এবং প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করি। বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় তিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, মক্কা হজ মিশন ও সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় একটি এজেন্সি ৫৩৮ জন হজযাত্রীর টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায়  শ্যামপুরের জুরাইন এলাকায় এজেন্সির সামনে  লাগাতার বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগীরা। 

শ্যামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. নজরুল ইসলাম জানান- পাঁচশ বেশি হজযাত্রীর কাছ থেকে টাকা নিলেও মাত্র কয়েকজনের ভিসা লাগিয়েছেন ওই এজেন্সিতে। সাধারণ হজযাত্রীরা অনেক আশা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা দেয়। তারা যদি প্রতারিত হয় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এজেন্সির মূল মালিক পলাতক রয়েছেন। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের কয়েকজনকে পাওয়া গেছে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। 
বাংলাদেশ থেকে চলতি বছর এখন পর্যন্ত (২১ জুন রাত ২টা ৫৯ মিনিট) ১ লাখ ৭ হাজার ১০২ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৯ হাজার ৭৯৮ ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ৯৭ হাজার ৩০৪ জন। এখন পর্যন্ত  ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫০টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীর ভিসা ১০০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ভিসা ১০০ শতাংশ।
বুধবার হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস ঢাকা এবং সৌদি আরব সূত্রে এ তথ্য জানিয়েছে আইটি হেল্পডেস্ক। 

এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, সেটা কেটে গেছে। বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইটের শ্লটের জন্য সৌদি আরবের অনুমোদন পাওয়া গেছে। সর্বশেষ আরও ৮টি অতিরিক্ত শ্লট পাওয়ায় এখন আরও অন্তত ৫ হাজার হজযাত্রী আজকের মধ্যে ঢাকা ছাড়তে পারবেন বলে জানা গেছে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘হজ ফ্লাইট নিয়ে আর কোনও শঙ্কা নেই। যতটুকু ক্যাপাসিটি লস হয়েছে, তা কভার করতে অতিরিক্ত ফ্লাইটের জন্য সৌদি আরবের অনুমোদন পাওয়া গেছে। ফলে বাংলাদেশে থেকে হজ ফ্লাইটের কারণে কারও সৌদি যেতে সমস্যা নেই।

জানা যায়, হজ এজেন্সিগুলো সময় মতো বাড়ি ভাড়া ও ভিসা না করায় অনেকগুলো হজ ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। ফলে সময়মতো হজযাত্রীদের সৌদি পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। ২০ জুন রাত পর্যন্ত সৌদি আরবে পৌঁছেন ১ লাখ ৭ হাজার ১০২ জন হজযাত্রী। বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পৌঁছানোর  ফ্লাইট। তবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব জানিয়েছে, অতিরিক্ত ফ্লাইট শিডিউল পাওয়া গিয়েছে। ২২ জুনের মধ্যে বাকি ১৫ হাজার ৪৫৬ জন হজযাত্রীর সৌদি আরবে পৌঁছানো সম্ভব হবে। তারপরও যদি কেউ বাকি থাকেন তাদের জন্যও শুক্রবার পর্যন্ত হজ ফ্লাইট চালু রাখা সম্বব হবে। 

জানা গেছে- বুধবার রাত পর্যন্ত সৌদি আরবে গিয়েছেন একলাখ ৯ হাজার ১০২ জন হজযাত্রী। এ পর্যন্ত ইস্যুকৃত ভিসার সংখ্যা এক লাখ ২৩ হাজার ১৫০টি। এবার সৌদি আরবে এ পর্যন্ত ২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। এরমধ্যে পুরুষ ২০ জন এবং নারী ৩ জন। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে ৬০৩টি হজ এজেন্সি।

আগামী ২৭ জুন হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ এজেন্সির সংখ্যা ৬০৩টি। হজ ফ্লাইট শুরৃ হয়েছে ২১ মে। শেষ হজ ফ্লাইট ২২ জুন। হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট ২ জুলাই আর শেষ ফিরতি ফ্লাইট ২ আগস্ট।

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×