ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ধৈর্য্য ধরার আহ্বান প্রতিমন্ত্রীর

ডলার সংকট না কাটলে স্বাভাবিক হচ্ছে না জ্বালানি খাত

প্রকাশিত: ২১:২০, ২৯ মে ২০২৩

ডলার সংকট না কাটলে স্বাভাবিক হচ্ছে না জ্বালানি খাত

প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

ডলার সংকটে কয়লা আমদানি না হওয়ায় মাঝে মাঝেই বন্ধ হয়ে যায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। এবার একই কারণে বন্ধ হতে যাচ্ছে দেশের বিদ্যুতের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও।

ডলার সংকট না কাটলে এ সমস্যার সমাধান আপাতত নেই বলে সাফ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, বৈশ্বিক সংকটের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে নানা প্রচেষ্টা চালানোর পরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে দেশে প্রয়োজনীয় গ্যাস আমদানি কমে গেছে। একই কারণে কয়লারও সংকট হচ্ছে। কয়লাভিত্তিক বড় দুইটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বার বার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ডলার সংকট না কাটলে সমাধান কিছু নেই। তাই সংকটকালীন সময়ে সবাইকে ধৈর্য্য ধরতেই হবে।

সোমবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত নিয়ে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। জ্বালানি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এফইআরবি ও বাংলাদেশ ইন্ডিপিন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগকারীদের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই সংলাপের আয়োজন করে। 

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) গত প্রায় ছয়মাস ধরে বেসরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা পরিশোধ স্থগিত রেখেছে। ফলে সেখানে সরকারের কাছে বিনিয়োগকারীদের পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা পরিকল্পনা মাফিক চললেও প্রাথমিক জ্বালানির ধারাবাহিক সরবরাহ চ্যালেঞ্জে পরেছে। কোভিডের দুই বছর এবং এরপর ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বে জ্বালানি খাতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। আগামীতে এই সংকট কি রকম হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে যাওয়ার। সেখানে কয়লা, গ্যাস, হাইড্রো, নেপাল, ভূটান থেকে যোগানের চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু যখনই আমাদের কয়লার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো আসলো তখন কয়লার দাম বেড়ে গেলো। যেই কলার দাম ৬০ডলার ছিলো সেটা সাড়ে ৪০০ ডলার হয়ে গেলো। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আসলো তখন স্পট গ্যাসের দাম ৭ ডলার তেকে ৬৭ ডলার হয়ে গেলো। তেলের দামও বেড়ে গেলো ১৪০ থেকে ১৬০ ডলার পর্যন্ত। সেই ধাক্কাটা গত একটা বছর মারাত্মকভাবে গ্যাস তৈরি করেছে। এর প্রভাবটা আমরা এখন। 

ডলার সংকট এখন সারাবিশ্বেরই সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারাবিশ্বেই এখন বৈদেশিক মুদ্রার সমস্যা, অর্থনীতির সমস্যা। আমাদের দেশও এর বাইরে না। আমাদের হাতে সব রয়েছে। পাওয়ার প্ল্যান্ট, ট্রান্সমিশন লাইন। কিন্তু জ্বালানির ঘাটতি। এই পরিস্থিতিতে নিজস্ব কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো এবং সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের উপর জোর দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিজস্ব জ্বালানির নিশ্চয়তার কথা অনেকে বলছেন। আমিও মনে করি নিজস্ব গ্যাসের সম্ভাবনা অবশ্যই আছে। কিন্তু একটা কূপ খনন করতে গেলে ৯ থেকে ২১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়। ১০ কূপ খনন করতে গেলে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বাপেক্সের রিগ আছে মাত্র ৩ টা। কোভিডের কারণে ঠিকাদাররাও আসে নি। সব দিকেই আমাদের একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

সোলার প্রজেক্টেও জমির সমস্যা অন্যতম উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০০ মেগাওয়াট সোলার প্লান্ট করতে গেলে প্রায় ৩০০ একর অকৃষি জমি প্রয়োজন। দুই হাজার মেগাওয়াট করতে গেলে লাগবে ছয় হাজার একর জমি। এটা তো প্রায় অসম্ভব। তবু কিছু সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। আগে যা হতো এখন আরও বেশি হচ্ছে। ৫ বছর আগে প্রতি ইউনিট ১৬ সেন্ট, ১৭ সেন্ট অফার করে বিনিয়োগকারীরা তেমন আগ্রহী হয় নি। এখন প্রতি ইউনিট ৯ সেন্টেও অফার পাচ্ছি। আশা করছি গ্যাসেও পরিবর্তন আসবে। আগামী ২/৩ বছরের মধ্যে ৬০০ থেকে ৭০০ এমএমসিএফডি দেশীয় গ্যাস পাওয়ার দিকে আমরা যাচ্ছি। যারা সমালোচনা করছে তাদের কাছে হয়তো এসব তথ্যগুলো সঠিকভাবে নেই।
এসময় আগামী দুই বছরের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট সোলার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট সোলার বিদ্যুতের অফার আছে। পাশাপাশি নেপালের সোলার পাওয়ার আসছে।

নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি ডিমান্ডও বাড়ছে। নির্বাচনের আগে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে না চাইলেও এ খাতে অতিরিক্ত করভার কমাতে এনবিআরকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বাজেটে তার প্রতিফলন পাবার আশা করছে মন্ত্রণালয়। তবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন ধৈর্য ধরতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। 

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১৮ হাজার কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরে থাকার জানালে প্রতিমন্ত্রী বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ধৈয্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একটার পর একটা চ্যালেহ্জ আসছে। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনেক বকেয়া পরে গেছে। আমাদের খারাপ সময়ে এগুলো সাপোর্ট দিয়েছে। এই টাকা তারা তো পাবেই। আজ না হয় কাল। তবে এই মুহুর্তে তাদেরও চিন্তা করা উচিত। দেশতো সবার। অনেকে বলেন টাকা কেনো দিতে পারেনা। এটা তো ডলার না। তারা তেল কিনে ডলার দিয়ে। টাকা দিয়ে তো লাভ নেই। আমরা তো ডলার খরচ করি তেল কেনার জন্য। এই কারণে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। টাকার জন্য। সব দেশেই পরিস্থিতি খারাপ। পরিস্থিতি হয়তো আমাদের এরকম থাকবে না । আমি মনে করি হতাশার কিছু নেই। পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে। হয়তো আমরা আজকে কয়লা আনতে পারছিনা কালকে নিয়ে আসতে পারবো। এটা আমরা ব্যবস্থা করছি। কিছুদিনের জন্য হয়তো আপনাদের ধৈয্য ধরতে হবে।

এফইআরবি’র নির্বাহ পরিচালক রিসান নসরুল্লাহর সঞ্চালনায় ও  এফইআরবি’র চেয়ারম্যান শামী জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে সংলাপে আরও বক্তব্য রাখেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, বুয়েটের অধ্যাপক ড. এজাজ হোসাইন, বিইআরসি’র সাবেক সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের বিশ্লেষক শফিকুল আলম ও বিআইপিপি’র সভাপতি ফয়সাল খান।

 

স্বপ্না

সম্পর্কিত বিষয়:

×