
ম্যাপে পাগলা উপজেলা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে ব্যস্ত পুরো ময়মনসিংহ। আগামী ১১ মার্চ শহরের সার্কিট হাউস ময়দানে জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। এর আগে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর একই স্থানে সমাবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চার বছর পর এবার বদলে যাওয়া ময়মনসিংহ নগরীকে দেখবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ২০১৮ সালে ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন করা হয়। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রাচীন এই নগরীতে ইতিমধ্যে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে পুরো নগরী। তবে বদলে যাওয়ার পেছনের কারিগর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সমীপে এবার ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানাকে উপজেলায় রূপান্তরের দাবি স্থানীয়দের।
এর আগে এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ স্থানীয় গফরগাঁও সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে গফরগাঁওবাসীর সামনে অচিরেই পাগলা থানা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। যারফলে ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ মূলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাগলা থানা অনুমোদনের গেজেট প্রকাশ করে। ওই বছরের ২৩ মে গফরগাঁও উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে পাগলা থানার যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে একটি ভাড়া বাড়িতে পাগলা থানার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে স্থানীয়দের দেয়া ৩ একর ১ শতাংশ জমিতে চারতলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক থানা ভবন নির্মাণ করা হয়।
সংসদীয় আসন এবং সীমানা অখন্ড রেখে ময়মনসিংহের পাগলা থানাকে পৃথক উপজেলা করার জোর দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয়রা মনে করে- বর্তমান সরকার একটি গণমুখী সরকার। এই সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উন্নয়নের ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে। যা পাগলা থানার ৮টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের আশাবাদী করে তুলেছে। অবস্থানগত দিক থেকে ময়মনসিংহ জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম রেলপথে ঢাকা থেকে এই জেলার প্রবেশপথ পাগলা থানা। ঢাকার পাশের নগর গাজীপুরের সীমানা শেষে ময়মনসিংহ জেলার শুরু পাগলা থানা। ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে পাগলা থানার দূরত্ব সড়কপথে ৬২ কিলোমিটার এবং রাজধানীর ঢাকা থেকে মাত্র ৭৩ কিলোমিটার। অথচ রাজধানীর নিকটবর্তী (জিপিও থেকে মাত্র ৭৩ কি.মি দূরে) অবস্থিত হলেও এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন উপেক্ষিত এবং সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত।
এর উত্তরে ত্রিশাল ও নান্দাইল উপজেলা, দক্ষিণে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলা, পশ্চিমে ভালুকা উপজেলা, পূর্বে ময়মনসিংহের নান্দাইল ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া উপজেলা। প্রশাসনিকভাবে ৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পাগলা থানা। ইউনিয়ন পরিষদগুলো হলো- মশাখালী ইউনিয়ন, উস্থি ইউনিয়ন, পাইথল ইউনিয়ন, পাঁচবাগ ইউনিয়ন, লংগাইর ইউনিয়ন, দত্তেরবাজার ইউনিয়ন, নিগুয়ারী ইউনিয়ন ও টাংগাবর ইউনিয়ন। পাগলা থানাধীন ইউনিয়ান গুলো কৃষিপ্রধান। এখানে ধান, পাট, গম, ডাল ইত্যাদি খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসল জন্মে থাকে। তাছাড়া ভুট্টা, গম, মসুর ইত্যাদি রবিশস্যও খুব ভাল জন্মে। সীমানার প্রায় তিন দিক নদী দ্বারা বেষ্টিত এর পূর্বে ব্রহ্মপুত্র, দক্ষিণে কালীবানার ও পশ্চিমে সুতিয়া নদী। শুধু উত্তর দিকে স্থলভাগ অর্থাৎ গফরগাঁও থানা। এখানে জারি, সারি, বাউল ও কেচ্ছাগান নিয়মিত চর্চা হয়। পালা গান, মঞ্চ নাটকের জন্য পাগলা এলাকা বিখ্যাত।
পাগলা থানাধীন রয়েছে মাওনা-গফরগাঁও হাইওয়ে সড়ক, মশাখালী রেলস্টেশন, স্কুল ও কলেজ, মাদ্রাসা, বৃহৎ কয়েকটি বাজার, অসংখ্য দোকানপাট, বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, এনজিও, নৌ-পথ, রেলপথ ও সড়কপথ। এখানে রয়েছে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি ও মৎস খামার। এই এলাকার রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্বের অনেক গৌরবময় ইতিহাস। এখানে জন্মগ্রহণ করেছেন অনেক আলোকিত মানুষ। বিশেষ করে স্বাধীনতার পক্ষের লড়াকু সৈনিক এবং ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে গফরগাঁও-ভালুকা আসনের এমএলএ মাওলানা শামসুল হুদা পাঁচবাগী (রহ:) এবং দক্ষিণ গফরগাঁওয়ের প্রবাদ পুরুষ শাহ বদরুল হক গেদু মিয়া (গেদু চেয়ারম্যান), বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অবঃ) গিয়াস উদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইতিহাসবিদ অধ্যাপক শেখ রেয়াজ উদ্দীন আহমদ প্রমূখ। ৭০-এর নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে অত্র এলাকার মানুষের গণরায় প্রমাণ করে পাগলা থানার প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চারণভূমি। বর্তমানে ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।
পাগলা থানার বাসিন্দারা জানান, এই থানার প্রত্যন্ত এলাকা (সর্বদক্ষিণের টাঙ্গাবর ও নিগুয়ারি ইউনিয়ন) থেকে উপজেলা সদর বিশেষ করে ৩০-৩৫ কিলোমিটির দূরবর্তী হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সঠিক সময়ে নিয়ে যেতে পারছেন না তারা। এছাড়াও “উপজেলা পরিষদ দূরবর্তী হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রম যেমন-ভূমি সেবা, উপজেলা সমাজসেবা অফিসের বিভিন্ন সেবা, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, উপজেলা নির্বাচন অফিসে জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা, উপজেলা শিক্ষা, কৃষি ও মৎস্য চাষ পরামর্শ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নেওয়ার জন্য দূরবর্তী গফরগাঁও উপজেলা সদরে যেতে হয়। আর উপজেলা সদরের সঙ্গে পাগলা থানার অবহেলিত কয়েকটি ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। ফলে গফরগাঁও উপজেলা সদরে গিয়ে সেবা নিতে স্থানীয়দের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গণমানুষের এসব সমস্যার কথা চিন্তা করে, অচিরেই পাগলা থানাকে উপজেলায় রুপান্তরিত করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে অত্র এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের প্রত্যাশা- বর্তমান সরকার ময়মনসিংহের অবহেলিত পাগলা থানাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে সুবিধাবঞ্চিত এই এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। পাগলা থানার জনসংখ্যা, আয়াতন, এবং অবকাঠামোগত দিকগুলো বিবেচনায় অতি শিগগির ময়মনসিংহের পাগলাকে একটি স্বতন্ত্র উপজেলা করা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত। আমরা আশাকরি, ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলায় রুপান্তর করে আধুনিক সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে ‘গ্রাম হবে শহর’ বর্তমান সরকারের এই শ্লোগানকে বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সরকারের কাছে স্থানীয়দের আকুল আবেদন- সংসদীয় আসন ও সীমানা অক্ষত রেখে পাগলা উপজেলা নামে ময়মনসিংহ জেলার মানচিত্রে নতুন একটি উপজেলা গঠন করে আপনার চিরমমতার পাশে চির কৃতজ্ঞ করুন।
লেখক : মোহাম্মদ আকতার হোসেন
সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী
আহবায়ক, পাগলা উন্নয়ন ফোরাম
ফজলু