সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, পাটখাত উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম, পাট বীজ আমদানিতে নির্ভরশীলতা হ্রাস, পাট বীজ উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন, প্রচলিত ও বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখার জন্য এ বছর পাট দিবসে ১১টি ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও পাট সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ৭টি শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হবে।
রবিবার (৫ মার্চ) দুপুরে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সেলিনা আক্তার, পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান রাহাত আনোয়ার, বস্ত্র অধিদপ্তরে মহাপরিচালক নুরুজ্জামন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হোসেন, তসলিমা কানিজ নাহিদা (অতি: সচিব) সহ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, সোনালি আঁশ পাটের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শুধু তাই নয়, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার হিসেবে পাটের ভূমিকা একটি স্বীকৃত ইতিহাস। পরিবেশবান্ধব তন্তু হিসেবে পাটের গুরুত্ব বিবেচনায় পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাট ও পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে সোনালি আঁশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরার লক্ষ্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ৬ মার্চ ‘জাতীয় পাট দিবস ২০২৩’ উদযাপন করতে যাচ্ছে।
এবারের জাতীয় পাট দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে‘পাট শিল্পের অবদান-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পাটজাত পণ্যকে বর্ষপণ্য-২০২৩ এবং সোনালী আঁশ পাটকে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক পজ্ঞাপন জাড়ি করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে, পাটপণ্যকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় নানামুখী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। সে লক্ষ্যে পাটখাতের অংশীজনসহ বছরব্যাপী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রদর্শনী, সেমিনার, সভা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে ও পাটসমৃদ্ধ ফরিদপুর জেলায় পাট ও পাটজাতপণ্য প্রদর্শনী ও মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়াও ১২-১৬ মার্চ শিল্পকলা একাডেমিতে ০৫ (পাঁচ) দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্য প্রদর্শনী ও মেলা আয়োজন করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) এর মাধ্যমে পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকার বহুমুখী পাটজাত পণ্যের উদ্ভাবন ও ব্যবহার সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করেছে। জেডিপিসির নিবন্ধিত উদ্যোক্তারা বিভিন্ন রকম দৃষ্টিনন্দন পাটপণ্য উৎপাদন করছেন- যার অধিকাংশই বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। বহুমুখী পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করতে প্রচার প্রচারণাসহ বিদেশে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করার কাজ চলমান রয়েছে। এসব মেলা পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ব্যবহারকারী এবং বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে অধিক যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, বিজেএমসি’র মিলগুলো সরকারি মালিকানায় রেখে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬টি জুট মিল ইজারা প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩টি মিলে বাণিজ্যিক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আরও ৫টি মিলের ইজারা প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে।
তিনি জানান, উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের পাটবীজ ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প জমিতে অধিক পাট উৎপাদন, পাট বীজের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করে পাটবীজ উৎপাদন পাটচাষিদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা, পাটচাষের আধুনিক কলাকৌশল সম্পর্কে পাটচাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের নিমিত্ত পাট অধিদপ্তরের অধীন ‘উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রাসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ প্রকল্পটি দেশের ৪৬টি জেলার ২৩০টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। মানসম্মত পাট বীজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে পাঁচ বছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথ উদ্যোগে একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে । আশা করি, বাংলাদেশ উন্নত পাটবীজ উৎপাদনে স্বনির্ভর হবে। প্রয়োজনীয় পাট বীজ সংগ্রহে আমদানি নির্ভরতা আর থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলন জাননো হয়, আগামী ৬ মার্চ ২০২৩ তারিখ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন, ঢাকায় পাট দিবসের মূল অনুষ্ঠান এবং মতিঝিলস্থ করিম চেম্বারে বহুমুখী পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করা হবে।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উক্ত অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি মির্জা আজম এমপি বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও দেশব্যাপী বর্ণাঢ্য র্যালি, আলোচনা সভা ও বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।
এসআর