মানববন্ধনে মোটরসাইকেল চালকেরা
শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ৩০ কিলোমিটার করার প্রস্তাবের প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন করেছেন মোটরসাইকেলের চালকেরা।
বুধবার (১ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে সেতু ভবনের সামনে শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে চালকেরা এ মানববন্ধনে যোগ দেন।
খসড়া নীতিমালায় তিনটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, মোটরসাইকেলের নিরাপদ ব্যবহার ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান এবং মোটরসাইকেলচালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
মানববন্ধনে মোটরসাইকেল চলাচল নীতিমালা-২০২৩-এর খসড়া প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা অভিযোগ করে বলেন, মোটরসাইকেলচালকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে এ নীতিমালা করা হয়েছে। তাঁরা এটি মানেন না। অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে তাল না মিলিয়ে মোটরসাইকেল ৩০ কিলোমিটার গতিসীমায় চালালে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন চালু করার দাবিও জানান তাঁরা।
ঢাকাসহ শহরের ভেতরে মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি হবে ৩০ কিলোমিটার। মহাসড়কে ১২৬-এর কম সিসির (ইঞ্জিনক্ষমতা) মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে না। এর পাশাপাশি পেছনে আরোহী নিয়ে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণে এসব বিষয় যুক্ত করে একটি নীতিমালার খসড়া করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আনিসুর রহমানের নেতৃত্বাধীন ৯ সদস্যের একটি কমিটি।
বুধবার (১ মার্চ) বেলা তিনটার দিকে ওই মানববন্ধন শুরু হয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় এক হাজার মোটরসাইকেলচালক এতে যোগ দেন। এ সময় অনেকের হাতে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘৩০ কিলোমিটার গতিসীমা প্রস্তাবিত হলো কিসের ভিত্তিতে’, ‘বাইকবিমুখ নীতি প্রণয়নের চেষ্টা বন্ধ হোক’, ‘বাইকবিরোধী নীতিতে ৩০ শতাংশ চাকরিজীবী ও তরুণ উদ্যোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে’ ইত্যাদি। এ সময় মোটরসাইকেলচালকেরা স্লোগান দেন, ‘৩০ কিলোমিটার গতিসীমার নীতিমালা মানি না, মানব না।’
ঢাকার মিরপুর থেকে মানববন্ধনে আসা নাঈম ইসলাম নামের এক যুবক বলেন, ‘নীতিমালাটি বাস্তবসম্মত নয়। ঢাকার কিছু সড়ক রয়েছে, যেখানে ৩০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালালে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।’
মানববন্ধনে যোগ দেন অনেক নারী মোটরসাইকেলচালকও। তাঁদের একজন উম্মে খায়রুল বলেন, ‘আমার বাইকের গতিসীমা যদি ৩০ কিলোমিটার হয়, তাহলে আমার পেছনের গাড়ির গতি কত থাকবে? বাস, প্রাইভেট কার নিশ্চয়ই একই গতিতে চলবে না। এতে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে।’
দুর্ঘটনার ঝুঁকির দিকে ইঙ্গিত করে আরেক নারী চালক বলেন, ‘সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিতে আমি মোটরসাইকেল চালাই। নতুন নীতিমালা হলে আমি সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যেতে পারব না।’
খসড়া নীতিমালায় তিনটি উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো মোটরসাইকেল চলাচল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো, মোটরসাইকেলের নিরাপদ ব্যবহার ও অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান এবং মোটরসাইকেলচালকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
খসড়ায় বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দূরের পথে মহাসড়কসহ সর্বত্র মোটরসাইকেলের চলাচল দেখা যায়। বিশেষ করে উৎসবের সময় মোটরসাইকেলের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। এ জন্য মোটরসাইকেলের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ঈদের সময় মহাসড়কে ১০ দিন মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়।
এমএস