মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার সকালে বনানী সেনা কবরস্থানে পিলখানা হত্যাকা-ে নিহতদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, আমি কিছুদিন আগে কারাগারে ছিলাম। সেখানে দেখেছি, অনেক প্রাক্তন বিডিআরের সদস্য যাদের এ মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তারা ১৩ থেকে ১৪ বছর ধরে সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তাদের পরিবার নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমরা এ দাবি করব, যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা অতি দ্রুত সম্পাদন করে তাদের একটা ব্যবস্থা করা উচিত, তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। এ মানুষগুলোকে তাদের পরিবার পরিজনের কাছে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার একটা সুযোগ সৃষ্টি করা হোক।
৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ পিলখানা হত্যাকা-ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা এ দিনে সেই সব চৌকস কর্মকর্তা, যারা আমাদের সম্পদ ছিলেন দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা ছিল তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহতা’য়ালার কাছে এ দোয়া চাইছি তিনি যেন তাদের বেহেশত নসিব করেন। অন্য আরও যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে, আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এবং দলের অসংখ্য নেতাকর্মীর পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারির দিনটি দুঃখজনক ও কলঙ্কের দিন। এ দিনে আমাদের তখনকার বিডিআর যাকে আমরা সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বলি সে বাহিনীর ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে অত্যন্ত নৃশংসভাবে তাদের পরিবার পরিজনসহ হত্যা করা হয় এবং একটা ভয়াবহ নৃশংস ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়। এই হতাকা-ের একটা চক্রান্ত ছিল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। চক্রান্ত ছিল আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে ফেলার।
মির্জা ফখরুল বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আমাদের যে সার্বভৌমত্ব, আমাদের যে স্বাধীনতা তা প্রচ-ভাবে সেদিন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। আমাদের যে মহান মুক্তিযুদ্ধ সে মুক্তিযুদ্ধেও এতজন সেনা কর্মকর্তা আমরা হারাইনি। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে যে প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে, তার উদ্দেশ্য ছিল মূলত আমাদের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার দিন সকাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল বলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের দেওয়া বক্তব্যকে সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীন একটা কমেন্ট বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। এত বড় একটা ঘটনা যাতে জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটা ঘটার পর এর সুষ্ঠু তদন্ত করা হলো না।
অথচ একজন ব্যক্তি যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে তিনি এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তিনি এদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, বাংলাদেশের এক সেনাপ্রধান যিনি স্বাধীনতার ঘোষক সেই জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিনি এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এখনো অন্তরীণ হয়ে আছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব কমেন্ট একেবারেই ডাইভারসন করা। তাদের সমস্যাটা হচ্ছে, তারা মূল সমস্যায় না গিয়ে সব সময় অন্য দিকে যেতে চান। কারণ, এ ঘটনাগুলো তারা সেভাবে সমাধান করতে পারেননি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মনে করি, সকল সংকটের মূলে রয়েছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করা, একটি সত্যিকার অর্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং সে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সংকটগুলোর সমাধান করতে পারব। আমরা মনে করি যে, এ ঘটনার যেভাবে তদন্ত হওয়ার দরকার ছিল, যেভাবে প্রকৃত অপরাধীদের এবং এর পেছনে যারা ছিলেন তাদের বের করে নিয়ে আসা উচিত ছিল সেটা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হয়নি। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি যে, সেনাবাহিনী একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ চেহারা দেশবাসী জানতে পারেননি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিডিআর হত্যাকা-ের পর যে বিচারের ব্যবস্থা হয়েছে, সে বিচারের ব্যবস্থায় আমরা দেখেছি- দুই বিষয়ে বিচার হয়েছে। একটি হলো বিদ্রোহ এবং হত্যা, আরেকটি হলো বিস্ফোরক। সাজা হয়েছে কিছু মানুষের, কিছু মানুষের মৃত্যুদ- দেওয়া হয়েছে, কিছু মানুষকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৭ হাজারের মতো সৈনিক যারা অনেকে দাবি করেন যে, তারা সম্পূর্ণভাবে নির্দোষ তাদের কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার শুনানি শেষ করা হয়নি।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) ফখরুল আজম, রিয়ার এডমিরাল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল আলম, কর্নেল (অব.) ফয়সাল, কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। বিএনপি মহাসচিব বিডিআরের ঘটনায় নিহত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে যান।