সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তোলা হলে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত। দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার কিংবা বিচারপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে বাধা নেই।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে ইসি থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।’
সিইসি বলেন, দুদক আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী কোনো কমিশনার অবসরের পর লাভজনক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেয়নি। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী তাকে নির্বাচিত করেছে। নিয়োগ এবং নির্বাচিত দুটি প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে বলেও মত দেন তিনি।
১৯৯৬ সালে উচ্চ আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কমিশনার কিংবা বিচারপতি পদ থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে বাধা নেই। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে অবান্তর প্রশ্ন তোলা হলে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘একটি প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রার্থীর সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে। এটা সত্য যে দুদক আইনে ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে কর্মাবসানের পর কোনো কমিশনার প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোনো পদে নিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না। এটা আছে। এটার আলোকে বিষয়টি বিবেচ্য। এতে করে অনেকে বলতে চেয়েছেন যে, রাষ্ট্রপতির পদটি একটি লাভজনক পদ।’
রায়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচনী কর্তা হিসেবে ওই রায়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলাম। কারণ পরীক্ষা করার সময় যেটাকে বাছাই বলে সেটা কিন্তু একটা দায়সারা গোছের দায়িত্ব নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে, প্রার্থী যাই বলুক কমিশনারেরও দায়িত্ব আছে বাছাই করে দেখা যে, প্রার্থীর কোনো সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে কি-না। আমরা দেখলাম প্রথমত স্পষ্টত কোনো আইনগত অযোগ্যতা নেই। এই কারণে, ৯ ধারায় (দুদক আইনের) বলেছে, কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না। আমরা কিন্তু এখান থেকে প্রার্থীকে নিয়োগ দান করিনি। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দান করেননি। প্রধান বিচারপতিও নিয়োগ দান করেননি। কেউ নিয়োগ দান করেননি এবং কেউ নিয়োগ দান করতে পারেন না। উনি নির্বাচিত হয়েছেন। আইন তাকে নির্বাচিত করেছে প্রচলিত প্রথা অনুসরণ করে।’
নির্বাচন এবং নিয়োগের মধ্যে যে পার্থক্য এটা বুঝতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘এটাকে আলোচনায় না এনে উনাকে লাভজনক পদে বসানো হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। আমাদেরকে নির্বাচন এবং নিয়োগের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। তাকে যদি এখান থেকে নিয়োগ দান করা হতো, তাহলে সেটি অবশ্যই অবৈধ হতো। কারণ নিয়োগ দানের কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃত্ব আমাদের নেই, কারোই নেই।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চূড়ান্ত একটি রায় বলে দিয়েছে যে, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ঠিক তেমনি একজন অবসরপ্রাপ্ত দুদকের কমিশনার রাষ্ট্রপতি পদে কোনোভাবেই অবৈধ নয়। সেই দিক থেকে এই প্রশ্নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বিভিন্ন ধরনের মতামত দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিটা অনাবশ্যক বা সমীচীন হবে না বলে আমি মনে করি।’
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সিইসি বলেন, ‘উনি নির্বাচিত হয়েছেন পরোক্ষভাবে। পুরো দেশবাসীর পক্ষে, প্রত্যক্ষভাবে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দ্বারা। যেহেতু একজনমাত্র প্রার্থী ছিলেন এবং তাঁর দুটি মনোনয়নপত্র ছিল। আমি সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখেছি এবং প্রচলিত যে আইন কানুন সংবিধান সবকিছু বিবেচনা করে দেখেছি। তার (মো. সাহাবুদ্দিন) এই পদে নির্বাচিত হতে কোনো ধরণের অযোগ্যতা নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘বিচারপতি সাহাবুদ্দীন নির্বাচিত হয়েছিলেন, নিয়োগপ্রাপ্ত হননি।’
এমএস