ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী

২০৩০ সালের মধ্যে ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে ঢাকা

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩; আপডেট: ১৮:৩৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

২০৩০ সালের মধ্যে ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যানজট নিরসনে ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী একটি ভিন্ন রেল যোগাযোগের সাক্ষী হবে। এতে মানুষের যোগাযোগ, যাতায়াত এবং আমাদের তেলের খরচ-অনেক কিছুই বাঁচবে। ঢাকা শহর যানজটও মুক্ত হবে। সেভাবেই আমরা আমাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাহ্নে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩টি প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ৬৯ দশমিক ২০ কি.মি. রেলপথে রূপপুর (ঈশ্বরদী), শশীদল (কুমিল্লা) এবং জয়দেবপুর (গাজীপুর) স্টেশন থেকে যুগপৎভাবে ট্রেন চলাচল এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপপুর, শশীদল ও জয়দেবপুরে একযোগে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা মেট্রোরেল উদ্বোধন করেছি- যেটা পরবর্তীতে উত্তরা থেকে কমলাপুর রেলষ্টেশন পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রে আমরা পাতালেও যাচ্ছি। ইতিমধ্যে এমআরটি লাইন-১ এর অধীনে পাতাল রেলের নির্মাণ কাজেরও শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। রেল খাতে সকল প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নব-দিগন্তের সূচনা হবে এবং রেল পরিসেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থেকে মন্দবাগ ও কুমিল্লার শশীদল থেকে রাজাপুর পর্যন্ত ডাবল লাইনে ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ, একই সঙ্গে ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ কিলোমিটার ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল এবং পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় রূপপুর রেলস্টেশন, নবনির্মিত ও সংস্কার করা ২৬ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেললাইন উদ্বোধন করেন।

সরকার প্রধান বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় যেসব রেল-লিংক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল,আওয়ামী লীগ সরকার সেগুলো একে একে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি-১) এর অর্থায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে ৩য় ও ৪র্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (ডিটিজেডিএলপি)’- শীর্ষক প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এই প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ১১ দশমিক ০৯ কিলোমিটার রুটে ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এই সেকশনে ডাবল লাইনে ট্রেন চালু করা হলে ধীরাশ্রম স্টেশনে ক্রসিং এর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। ফলে সকল ট্রেনের যাত্রা সময় বাঁচবে এবং দুর্ঘটনার আশংকা হ্রাস পাবে।

রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির স্বাগত বক্তব্য দেন। আরো বক্তব্য দেন ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ। অনুষ্ঠানে রেলের তিনটি প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এরপর আমরা দেখেছি রেল নিয়ে নানা খেলা চলছে। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারি সামরিক স্বৈরশাসকরা এদেশের কোন মঙ্গল বা উন্নতি চায় নি। যার কারণে সাধারণ মানুষের যাত্রী পরিবহনের যে কয়টা মাধ্যম ছিল একে একে তার সবই ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এমনকি রেল লাভজনক নয়, এই অজুহাত তুলে রেলকেও বন্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়। রেলের লোকবল গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেয়া হয়। শুধু তাই নয় অনেক রেল লাইনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী তখনই এটা করা হয়।

সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেলপথ সংযোগ স্থাপনসহ রেলকে পুণর্গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বার সরকারে এসে তাঁর সরকার রেলের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে। কারণ, রেল মন্ত্রণালয় সড়কের সঙ্গে থাকায় অধিকাংশ বরাদ্দই সেখানে চলে যেত। 

তিনি বলেন, আমরা ১০৬টি লোকোমোটিভ, ২০ সেট ডিইএমইউ, ৫৩৫টি যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং ৫১৬টি মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করেছি। ১৩০টি স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছি। ইতোমধ্যে ৪৪টি নতুন এবং বর্ধিত রুটে মিতালী এক্সপ্রেসসহ মোট ১৪২টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা-বরিশাল-পায়রা বন্দর রেললাইন, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন, খুলনা-দর্শনা ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া ডুয়েলগেজ রেল লাইন নির্মাণ করছে। তাছাড়া, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর ডুয়েলগেজ ডাবল-লাইন,রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র রেল-লিংক, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন, ধীরাশ্রম আইসিডি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সরকার নতুন নতুন রেল লাইন করে যাচ্ছে যাতে সারা বাংলাদেশে একটি রেল যোগাযোগের নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

সরকার রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য ‘সিগন্যালিংসহ রেল লাইন সংস্কার ও নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যার আওতায় লুপ-লাইনসহ মোট ২৬ দশমিক ৫২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক, রূপপুর রেলওয়ে স্টেশন ভবন, ৭টি কালভার্ট, ১৩টি লেভেল ক্রসিং গেট এবং সিগন্যালিং-টেলিকম কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এর ফলে প্রকল্প এলাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলো।

সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরকে ডাবল-লাইনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিপূর্বে এই করিডোরের ৩২১ কিলোমিটারের মধ্যে ২৪৯ কলোমিটার ডাবল-লাইন নির্মাণ সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ৭২ কিলোমিটার ডাবল-লাইন নির্মাণের উদ্দেশে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেস্ট ব্যাংক এবং নিজস্ব অর্থায়নে ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। 

এছাড়া লাকসাম-কুমিল্লা ট্রেন চলাচল চালু করা হয়েছে। এখন শশীদল হতে রাজাপুর এবং কসবা হতে মন্দবাগ পর্যন্ত রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে যা আজকে উদ্বোধন করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৩৩ কিলোমিটার রুটে ডাবল লাইন এ বছরের জুনে সমাপ্ত হবে ইনশাআল্লাহ। 

সরকার প্রধান বলেন, আজকে লুপলাইন ও আপ-ডাউন লাইনসহ মোট ৩২ কিলোমিটার নবনির্মিত লাইন উদ্বোধনের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে ট্রেন চলাচল অধিকতর নিরাপদ ও দ্রুততর হবে এবং অধিক সংখ্যক ট্রেন চালু করা সম্ভবপর হবে।

সূত্র: বাসস

 

এসআর

×