পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরঞ্জাম বহনকারী রুশ জাহাজ ভারতের হলদিয়া বন্দরে
বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সরঞ্জাম বহনকারী রুশ জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে না-পেরে ভারতের হলদিয়া বন্দরে মাল খালাস করতে যাচ্ছে। সেখানে মাল খালাসের পর সরঞ্জাম সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠানো হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনীতিক পর্যায়ের আলোচনার পর কলকাতায় জাহাজটির খালাসের বিষয়টি নির্ধারিত হয়।
ভারতের কলকাতা-হলদিয়া পোর্ট ট্রাস্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, চ্যানেলে কুয়াশার অবস্থা কেমন থাকে তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই জাহাজটি হলদিয়া বন্দরে ভিড়তে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কূটনীতিক সূত্রে জানিয়েছে, সরঞ্জাম বহনকারী জাহাজটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির আপত্তিতে বাংলাদেশ বন্দরে ভিড়তে দেয়নি। বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রুশ জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করছে, তাই এখন ভারতের একটি বন্দরকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল ঘুরপথে নিজেদের দেশে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনও রুশ জাহাজ ভারতের কোনও বন্দরে ভিড়লে সরকারের তাতে কোনও সমস্যা নেই।
গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিকের তথ্য অনুযায়ী, রুশ পতাকাবাহী ওই জাহাজটি বৃহস্পতিবার সকালে ভারতে সাগরদ্বীপের কাছে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। এর আগে বেশ কয়েকদিন জাহাজটিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা যায়।
গত ২৯ ডিসেম্বর বিবিসি বাংলার এক নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাবে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, এই রুশ জাহাজটির গতিবিধির ব্যাপারে আমার কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই, তবে এটি যদি ভারতের কোনও বন্দরে ভিড়ে থাকে বা ভিড়তে আসে, তাহলে তাই! তথাকথিত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আগেও যা ছিল এখনও তাই - ভারতের সেই নীতিতে কোনও পরিবর্তন হয়নি, জানান তিনি। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ভারত যে মোটেই আমল দিচ্ছে না, সেটা পরিষ্কার করে দিয়ে মি বাগচী আরও বলেন, আজকের এই টেকনিক্যাল দুনিয়ায় কোনটা নিষেধাজ্ঞা, কোনটা নয় তা নিয়েও বহু বিতর্ক আছে। কিন্তু আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে পৃথিবীর যেখান থেকে আমরা সহজে তেল পাব সেখান থেকেই আনব, এটাই আমাদের নীতি। তেল ছাড়া অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। উরসা মেজর নামে রুশ জাহাজটি যে এখন ভারতের একটি বন্দরে ভিড়ে মাল খালাস করছে-তা থেকে স্পষ্ট বাংলাদেশ সরকার ভারতের এই ‘ডিফায়ান্ট’ অবস্থানেরই কূটনৈতিক ফায়দা নিচ্ছে।
এর আগে ‘উরসা মেজর’ নামে এই জাহাজটি গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টের সরঞ্জাম নিয়ে বাংলাদেশের দিকে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকারকে জানায়, এটি আসলে তাদের নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’ নামে একটি রুশ জাহাজ, সেটির রং আর নাম পাল্টে ‘উরসা মেজর’ নামে চালানো হচ্ছে। এই জাহাজটিকে বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে তা যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হবে, সেটাও তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
এরপরই বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয় উরসা মেজর-কে বাংলাদেশের মোংলা বা অন্য কোনও বন্দরেই ঢুকতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তের কথা ঢাকায় রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কিকেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে গত ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, রূপপুরের মতো একটি মেগা-প্রকল্পকে বাংলাদেশ সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।