রাজধানীর মালিবাগ এলাকায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করে
পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি না নিয়েই মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে মালিবাগ হয়ে পল্টনের দিকে যাচ্ছিল তারা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এতে পুলিশের ১০ জন এবং জামায়াতের দুজন কর্মী আহত হন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনাস্থল থেকে জামায়াত-শিবিরের ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মালিবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে গণমিছিল শান্তিপূর্ণ হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। পল্টনে সরকারবিরোধী মিছিল করায় ৩ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পল্টন থানা পুলিশ।
জামায়াত নেতারা বলছেন, গণমিছিল করার অনুমতি চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তারা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, এমন কোনো চিঠি তারা পাননি।
দেখা যায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর রামপুরা আবুল হোটেলের সামনে থেকে মিছিল বের করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে মালিবাগ রেলগেট হয়ে মৌচাকের দিকে আসে নেতাকর্মীরা। এ সময় মৌচাক মোড়ে পুলিশের কিছু সদস্য বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সেই বাধা উপেক্ষা করে তারা মালিবাগ মোড়ে আসে। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কাঁদানে গ্যাসে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে অলিগলিতে ঢুকে যায়। সেখান থেকেও পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এভাবে কয়েক মিনিট ধরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পুলিশ ধাওয়া করে কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটকও করে।
সংঘর্ষে জামায়াতের দুই কর্মী আহত হন। তারা হলো- আল আমিন (২৫) ও আব্দুস সোবহান (৬২)। আলআমিন তেজগাঁও এলাকার ইউনিট (২৫ মেট্রো) জামায়াতের বাইতুল মাল সম্পাদক। বাসা নাবিস্কো এলাকায়। আর আব্দুর সোবহান জামায়াতকর্মী বলে জানা গেছে। আল আমিনের মাথায় এবং আব্দুর সোবহান হাতে আঘাত পান। পরে পুলিশ তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম শফিক। আটক অন্যরা হলো- কাউছার ইসলাম, হুমায়ুন কবির, সালা উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল আউয়াল, সাইজ উদ্দিন, মোতালেব, আরিফুল ইসলাম ও মঈন উদ্দিন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মালিবাগ মোড়ে ওই মিছিলের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ বেশকয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দোকানিরা দ্রুত দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, অনুমতি না নিয়েই জামায়াত-শিবিরের ব্যানারে মিছিলটি বের করা হয়। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। কিন্তু মিছিলকারীরা তা না মেনে মালিবাগ হয়ে পল্টনের দিকে যাচ্ছিল। পুলিশ ফের বাধা দিলে মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে রমনা ও নিউমার্কেট জোনের এসিসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ডিসি জানান, ঘটনাস্থল থেকে ১১ জন জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। রাতেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হবে।
এদিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার থেকে আহত ১০ জন পুলিশ সদস্যের নাম জানানো হয়েছে। তারা হলেন- নিউমার্কেট জোনের এসি শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান, রমনা জোনের এনি মো. বায়েজীদুর রহমান, রমনা থানার এসআই শহীদুল ওসমান মাসুম, এসআই সুবীর কুমার কর্মকার, এসআই হাবিবুর রহমান, এসআই মোহাইমিনুল হাসান, এএসআই কবির হোসেন, এএসআই মো. ফিরোজ মিয়া এবং পিওএম পূর্ব বিভাগের কনস্টেবল সৌরভ নাথ ও কনস্টেবল সাদী মোহাম্মদ। তারা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। তাদের খোঁজখবর নিতে আজ শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে হাসপাতালে যাবেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এ দিকে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত গণমিছিল শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গণমিছিল উপলক্ষে জুম্মার নামাজের পর থেকেই নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মহানগরীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পার্টি অফিসে আসেন। বেলা সোয়া ৩টার দিকের গণমিছিল কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক হয়ে মালিবাগ মোড়ে আসে। মালিবাগ মোড়ে ছোট্ট একটি মঞ্চ তৈরি করে সেখানে দাঁড়িয়ে মাইকে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও আগত মিছিলকারীদের ব্যানার গুটিয়ে যে যার মতো চলে যাওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। দেখা যায়, মৌচাক থেকে বিভিন্ন ব্যানারে একের পর এক মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা মগবাজারের দিকে আসছিলেন। তারা মগবাজার মোড়ের কাছাকাছি এসে ব্যানার গুটিয়ে মগবাজার রেলগেট, বাংল মোটর, বেইলী রোডের দিকে শান্তিপূর্ণভাবে চলে যান। তবে কয়েকটি মিছিল মগবাজার অতিক্রম করতে চাইলেও পুলিশি বাধায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।
গণমিছিল উপলক্ষে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, নয়াপল্টন, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, নাইট্যাঙ্গেল মোড়, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম এলাকা, পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিল। পল্টন থেকে নয়াপল্টনে আসতে রাস্তায় ডাইভারশন দেয় পুলিশ। পুরো নয়াপল্টনের এলাকা যান চলাচল বন্ধ করে অন্যদিক দিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এ কারণে এসব এলাকায় কিছুটা যানজটের সৃষ্টিও হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে বিএনপির গণমিছিল পুরোপুরি সম্পন্ন হয়। এরপর ওইসব এলাকার রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে দুপুরে পল্টন মোড়ে বিএনপির গণমিছিল নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে আমরা নিরাপত্তা বলয় রেখেছি যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়। ঢাকা শহরে যেহেতু জামায়াতে ইসলামীকে গণমিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি তারা কোথায় করবে আমরা তা জানি না। জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে আমরা ঢাকা শহরে পুলিশ মোতায়েন করেছি। আজ শনিবার থার্টি ফার্স্ট নাইট আর রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের কর্মসূচি রয়েছে। সেই বিবেচনায় অন্য কোনো ঘটনা যেন না ঘটতে পারে সেই লক্ষ্যে আমরা পুলিশ মোতায়েন করেছি।
এদিকে বেলা সোয়া ২টার দিকে পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় সরকারবিরোধী স্লোগান দেয়ার সময় ৩ জনকে আটক করেছে পল্টন থানা পুলিশ। পুলিশ জানায়, বেলা সোয়া ২টার দিকে পল্টন এলাকায় কিছু লোক জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। এ সময় সরকারের সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে থাকে তারা। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এরপর সুরমা টাওয়ার থেকে তিন জনকে আটক করা হয়। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ছালাউদ্দিন মিয়া বলেন, তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের হয়নি।