ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সিপিডির মিডিয়া ব্রিফিং

সুশাসনের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও সুলভে দেওয়া যাচ্ছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০২, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২

সুশাসনের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও সুলভে দেওয়া যাচ্ছে না

জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রাকে অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী

২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রাকে অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এজন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর বিপক্ষে সিপিডি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানম-িতে সিপিডির কার্যালয়ে ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) : পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি এ দাবি জানায়। এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সুশাসনের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও গ্রিডে দিতে পারছি না জানিয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে পৌঁছে দিতে পারছি না। অন্যদিকে ক্রমান্বয়ে বিরাট অংকের ভর্তুকি দিচ্ছি। যাদের ভর্তুকির দরকার নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে।

এমন একটা ক্রিটিক্যাল সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে, যখন মূল্য যৌক্তিকীকরণের কথা বলি, তখন সেটা সাধারণ মানুষের ওপর এসে পৌঁছায়। যেখানে সুশাসন দিয়ে বড় রকমের সাশ্রয় করতে পারি, আধুনিক টেকসই জ্বালানি খাত তৈরি করতে পারি, সেটার দিকে নজর দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, অন্যান্য বড় লক্ষ্যমাত্রার মতোই ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্য করা একটা অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, লক্ষ্যমাত্রাটা একটা স্লোগানের মতো। কপ-২৬ এর আগে বিভিন্ন দেশ ঘোষণা করেছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা, সেই তালেই কি আমরা বলেছি, নাকি বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলেছি? আমাদের এখন পর্যন্ত যে অর্জন, ২০৪০ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রায় আমরা যেতে পারব কি? তবে একটি কথা আছে এখানে, প্রযুক্তি ও অর্থায়নের প্রয়োজন আছে। সেটা থাকলে আমরা ত্বরান্বিত করতে পারব। আগে যে হারে যাচ্ছি সে হারে না, এটাকে আরও উল্লম্ফন দিয়ে যেতে হবে।

এখানে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। তিনি বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছি। সেখানে যে ধরনের প্রযুক্তির কথা বলা হচ্ছে, অনেক দেশ এগুলো বাদ দিয়ে যাচ্ছে। কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ, অনেকে এটা এখন আর ব্যবহার করছে না। এটা বর্জন করছে। এটা ব্যবহারে প্রচুর অর্থের ও জায়গার প্রয়োজন পড়ে। সেখানে যে বিনিয়োগ হয় সেটা কস্ট ইফেকটিভ ব্যয় সাশ্রয়ী হয় না। আমরা যেটা উৎপাদন করব সেটা কস্ট ইফেকটিভ না হলে আমরা সেটা করব না। যেটা বর্জন হয়ে আছে উন্নত দেশে, সেগুলো আমরা করব না।

আইইপিএমপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এমন একটা খাত, এখানে অনেকেরই স্বার্থ রয়েছে। এই স্বার্থ দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরেও। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত উপাদান, বাইরের স্বার্থকে পেছনে ফেলে দেশের স্বার্থটা কী হবে সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। আইইপিএমপি প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ নেওয়া হলেও তা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় জ্বালানি খাতে আমরা পিছিয়ে আছি।

আইইপিএমপি এ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি উপেক্ষিত হয়নি, তবে অবহেলিত হয়েছে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন যেভাবে চিন্তা করা দরকার সেটা পর্যাপ্ত হয়নি। ডকুমেন্টটি এখন পর্যন্ত যেভাবে রয়েছে প্রকারান্তরে তা এলএনজিকে উৎসাহিত করছে। ক্ষেত্রবিশেষ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেও উৎসাহিত করছে।

×