ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দুর্নীতি দূর করতে হলে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে

প্রকাশিত: ২০:১৮, ৯ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ২০:৪৫, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

দুর্নীতি দূর করতে হলে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনকে কার্যকর ও সাহসী পদক্ষেপ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সংস্থাটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘সর্ষের মধ্যে যেন ভূত না থাকে। অন্যথায় দুদক জনগনের আস্থা হারাবে।’

শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজাধানীর শিল্পকালা একাডেমি মিলনায়তনে ২০তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, দুর্নীতি করলে শাস্তি নিশ্চিত করার প্রতিও জোর দেন রাষ্ট্রপতি।

দুদকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে আমি কমিশনের সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের অনুরোধ করবো দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে তারা যেন সর্বোচ্চ ন্যায়নিষ্ঠতা প্রদর্শন করে। সর্ষের মধ্যে যেন ভূত না থাকে, অন্যথায় দুদক জনগনের আস্থা হারাবে।

আবদুল হামিদ বলেন, ছোট বড় ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে সবার বেলায় একই পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষমতা দেওয়া হয় দায়িত্ব পালনের জন্য দেখানোর জন্য নয়। তাই দুদকের সকল কর্মচারীকে ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে।

১৯৯৫ সালের ২১ জুলাই জেলা গভর্ণরদের উদ্দেশে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণের কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। ওই ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়া করাপশন নয়, এই সম্বন্ধে আমার কথা হলো, করাপ্ট পিপলকে সাহায্য করাও করাপশন। নেপোটিজমও টাইপ অব করাপশন। স্বজন প্রীতিও এক ধরণের করাপশন, আপনারা এসব বন্ধ করুন।’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতিবাজ, কালোবাজারী ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর উন্নয়নের সেই গতি থমকে দাঁড়ায়।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে সংবিধানে যে নির্দেশনা আছে সে কথাও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ২০ এর ২ অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রের এমন অবস্থার সৃষ্টির চেষ্টা করলে যেখানে সাধারণ নীতি হিসেবে কোনো ব্যক্তি অনুপার্জিত আয় ভোগ করিতে সমর্থ হইবে না।’ এই মর্মবাণীকে ধারণ করে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

দুর্নীতি শুধু বাংলাদেশ নয় দুর্নীতিকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দুর্নীতি এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। আমি মনে করি, মানুষের মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী চেতনা তৈরি ও দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে দুর্নীতি কমিয়ে আনা সম্ভব।

তিনি বলেন, একটা সময় ছিল ঘুষখোর, সুদখোর ও দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বলেই চলে। কালের বিবর্তনে সেই মূল্যবোধ ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে। শহর বন্দর সবখানেই টাকাওয়ালাদের জয় জয়কার। টাকা কিভাবে এলো সৎ নাকি অসৎ পথে এসব নিয়ে কারো কোনো মাথা-ব্যথা নেই। এটা নিয়ে ভাববার ফুরসতও নেই। সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি হয়ে গেছে টাকা।

সমাজের সর্বন্তরের মানুষের টাকার পেছনে ছুঁটার বিষয়টিকে অশনি সংকেত আখ্যা দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, চাকরিজীবী, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী, শ্রমিক ব্যবসায়ী সবাই দেখি টাকার পেছনে দৌড়াচ্ছে। সরকার ও দুদক সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর করে দেবে আমরা বসে বসে দেখব তা কোনোভাবেই সম্ভব না। দুর্নীতি দূর করতে হলে সকলকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। ঘুষখোরদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, নানান চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আর্থসামাজিক উন্নতি প্রতিটি সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে পদ্মাসেতু। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আজ অভিজাত স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য।

দুদকের কাজের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ক্ষমতার অপপ্রয়োগকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয় সমাজে এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আশার কথা হলো, দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম যুগপৎ পরিচালনা করছে।

দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬ এর প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, দুদকের হটলাইন সেবাও একটি প্রসংসনীয় উদ্যোগ। দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধকে আরও বেগবান করতে কমিশনকে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে দুর্নীতিবাজদের কৌশলও পাল্টেছে। তবে তাদের আইনের আওতায় আনতে হলে দুদককে আরো প্রশিক্ষিত হতে হবে।

দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহর সভাপতিতে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার জহুরুল হক, ড. মোজাম্মেল হক খান ও  সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন প্রমুখ।
 

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×