ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

গত ১০ মাসে বাইক দুর্ঘটনায় ২০৯৭ প্রাণহানি, শিক্ষার্থী ৭৬৪

প্রকাশিত: ১৮:৫০, ২০ নভেম্বর ২০২২

গত ১০ মাসে বাইক দুর্ঘটনায় ২০৯৭ প্রাণহানি, শিক্ষার্থী ৭৬৪

সড়ক দূর্ঘটনা 

গত বছরের তুলনায় এবার মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েছে। এবার জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ২০০৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৯৭ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭৬৪ জনই শিক্ষার্থী। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২৮৬ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে সারাদেশে সড়কে বাইক দুর্ঘটনার এই চিত্র তুলে ধরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

রবিবার (২০ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায় সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা সংগঠনটি। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩৭৪টি (১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ), মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ৬২৯টি (৩১ দশমিক ৪০ শতাংশ), মোটরসাইকেলে অন্য যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ৯৫৮টি (৪৭ দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২টি (২ দশমিক ০৯ শতাংশ)।

এসব দুর্ঘটনার মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৩৭৪টি (১৮.৬৭%)। এছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬২৯টি (৩১.৪০%), মোটরসাইকেলে অন্য যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ৯৫৮টি (৪৭.৮২%) এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২টি (২.০৯%)।

দুর্ঘটনার জন্য বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও পথচারীদের দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে। দুর্ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৩৭টি (৪১.৭৮%) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী। বাস চালক দায়ী ৮.৪৩% (১৬৯টি দুর্ঘটনা), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি চালক দায়ী ৩৭.০৪% (৭৪২টি দুর্ঘটনা), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী ২.৭৯% (৫৬টি দুর্ঘটনা), থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-নসিমন-ভটভটি-টমটম) চালক দায়ী ৫.৯৪% (১১৯টি দুর্ঘটনা), প্যাডেল রিকশা ও বাইসাইকেল চালক দায়ী ০.৮৪% (১৭টি দুর্ঘটনা) এবং পথচারী দায়ী ৩.১৪% (৬৩টি দুর্ঘটনায়।

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৯৫টি (৩৪.৬৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ৮৭৯টি (৪৩.৮৮%) আঞ্চলিক সড়কে, ৩২৯টি (১৬.৪২%) গ্রামীণ সড়কে এবং ১০২টি (৫.০৯%) শহরের সড়কে সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৩,৫৬১টি। মোটরসাইকেল ২,১৩৩টি, বাস ২১৪টি, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ৭৫৬টি, ড্রাম ট্রাক-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ইত্যাদি ১২৯টি, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ১০৩টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-অটোরিকশা-অটোভ্যান-নসিমন-ভটভটি-টমটম) ২০৭টি এবং প্যাডেল রিকশা ও বাই-সাইকেল ১৯টি।

সময় বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোরে ৩.১৪%, সকালে ২৬.৮০%, দুপুরে ১৬.৩৭%, বিকালে ১৯.৬৭%, সন্ধ্যায় ১০.৬৩% এবং রাতে ২৩.৩৬% দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে- কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো; অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেল ক্রয়ে সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি; মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;  দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা; কিশোর-যুবকদের গতির প্রতি আকৃষ্ট করতে মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপনের উত্তেজনাকর ভাষা-ভঙ্গি; পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেয়া ইত্যাদি।

দুর্ঘটনা বন্ধে ১৩টি সুপারিশ

দুর্ঘটনার তথ্য উপাত্ত দেওয়ার পাশাপাশি ১৩টি সুপারিশ দিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে :-

১. কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ 
২. মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি
৪. গণপরিবহন চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা
৫. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা
৬. ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা
 ৭.মোটরসাইকেল ও স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য মহাসড়কে সার্ভিস রোড নির্মাণকরা
৮. পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা
৯. যানবাহনের গতি মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা
১০. গণপরিবহন উন্নত ও সহজলভ্য করে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করা
১১. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার 
১২. বিস্তৃত করে সড়ক পথের ওপর থেকে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের মতো পণ্যবাহী 
১৩. যানবাহনের চাপ কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×