শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে কবি সুফিয়া কামালের কবরস্থানে। ছবি: জনকণ্ঠ।
কবি সুফিয়া কামালের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আজিমপুর কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আলোচনা সভা করেছে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
রবিবার (২০ নভেম্বর) সকালে কবি সুফিয়া কামালের কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আজিমপুর কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে কার্যকরী সভাপতি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন হালদার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লায়ন মীযানুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক জয়দেব রায়, আশরাফুজ্জামান মিতু মাতব্বর, চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, অভিনেত্রী পারুল আক্তার লোপা, অভিনেত্রী সোনিয়া পারভীন শাপলা, রাজ সরকার, ডক্টর নাহিদ হোসাইন, মাসুদ করিম-সহ জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা ১৯৭৬ সালে যখন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট গঠিত হয় তখন সুফিয়া কামাল জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ এবং সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক অকুতোভয় যোদ্ধা। তার জন্ম ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালে। তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের লেখাপড়ার সুযোগ একেবারে সীমিত থাকলেও তিনি নিজ চেষ্টায় লেখাপড়া শেখেন এবং ছোটবেলা থেকেই কবিতা চর্চা শুরু করেন। সুললিত ভাষায় ও ব্যঞ্জনাময় ছন্দে তার কবিতায় ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও সমাজের সার্বিক চিত্র।
বক্তারা আরও বলেন, তিনি নারীসমাজকে অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। মহান ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার, মুক্তিযুদ্ধসহ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলনে তিনি আমৃত্যু সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তিনি ছিলেন তার অন্যতম উদ্যোক্তা। কবি সুফিয়া কামাল পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের শিক্ষা ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন শুরু করেছিলেন এবং গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’।
বক্তারা বলেন, বিভিন্ন গণতান্ত্রিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অবদানের জন্য তাকে ‘জননী সাহসিকা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি বেগম সুফিয়া কামালের সাহিত্যে সৃজনশীলতা ছিল অবিস্মরণীয়। শিশুতোষ রচনা ছাড়াও দেশ, প্রকৃতি, গণতন্ত্র, সমাজ সংস্কার এবং নারীমুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখনী আজও পাঠককে আলোড়িত ও অনুপ্রাণিত করে।
১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করলে এর প্রতিবাদে গঠিত আন্দোলনে এ কবি যোগ দেন। বেগম সুফিয়া কামাল শিশু সংগঠন ‘কচি-কাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে ছাত্রী হল নির্মাণ করেছে। কবি বেগম সুফিয়া কামাল যে আদর্শ ও দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা যুগে যুগে বাঙালি নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে নির্মমভাবে হত্যা করে যখন এদেশের ইতিহাস বিকৃতির পালা শুরু হয়, তখনও তার সোচ্চার ভূমিকা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের গণতান্ত্রিক শক্তিকে নতুন প্রেরণা যুগিয়েছিল।
পাকিস্তান সরকার ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র সঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন এবং তিনি ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে তিনি মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা দেন। স্বাধীন বাংলাদেশে নারী জাগরণ ও নারীদের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ কার্ফু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেন।
এমএইচ