ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

১২ বছরেও চালু হয় নি প্রথম স্টেশন জগতি

জনবল সংকটের কারনে বন্ধ ১১৬ টি স্টেশন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৫ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ২০:০০, ১৫ নভেম্বর ২০২২

জনবল সংকটের কারনে বন্ধ ১১৬ টি স্টেশন

জনবল সংকটের কারনে বন্ধ স্টেশন

এ অঞ্চলে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর প্রথম চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ চালু করা হয়। পরবর্তীতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারিতে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত আরও ৭৫ কিলোমিটার রেলপথ সম্প্রসারণসহ পর্যায়ক্রমে দেশজুড়ে রেলওয়ের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত হয়। তাই বাংলাদেশে রেলওয়ের যাত্রাকে স্মরনীয় করতে প্রতি বছর ১৫ নভেম্বর রেল দিবস পালন করা হয়। এ বছর রেল দিবস উপলক্ষ্যে সেবা সপ্তাহ পালন করবে রেলওয়ে। 

কিন্তু রেলওয়ে প্রথম স্টেশনটি প্রায় ১২ বছর যাবত বন্ধ রয়েছে। কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশনটি দেশের সর্বপ্রথম রেলওয়ে স্টেশন। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার রাণাঘাট থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ চালু হয়। রেলপথ ও জগতি স্টেশন স্থাপনের পর দেশে শুরু হয় রেলওয়ের যাত্রা। কিন্তু অবহেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে দেশের প্রথম রেলওয়ে স্টেশনটি। জনবল সংকটের কারণে স্টেশন দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের বানিজ্য কর্মকর্তা সজিত কুমার বিশ্বাস জনকণ্ঠ’কে বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে কুষ্টিয়ায় জগতি স্টেশনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে রেলওয়ের যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে ২০১০ সাল থেকে স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সহকারি স্টেশন মাস্টার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই জনবল নিয়োগ শেষ হলে স্টেশনগুলো চালু হবে বলে জানান তিনি।
 
স্থানীয় সূত্র জানায়, এক সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও পণ্য পরিবহনে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে জগতি রেলওয়ে স্টেশনটির গুরুত্ব ও কদর ছিল। দোতলা স্টেশন ভবনটির ছাদে জন্মেছে প্রচুর আগাছা। ভবনটিতে ধরেছে ফাটল। অযতœ-অবহেলায় স্টেশন ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্লাটফর্মের ইট ও গাঁথুনি ক্ষয়ে গেছে। প্লাটফর্মের অদূরেই তৎকালে নির্মিত বিশাল আয়তনের ওভারহেড পানির ট্যাংকটি বিলীন হয়ে গেছে। স্টেশন মাস্টারসহ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় স্টেশনটি ২০১০ সাল থেকে স্টেশনটি বন্ধ রয়েছে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

বন্ধ ১১৬ টি রেলওয়ে স্টশন
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪৮৩টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে অপারেটিং (রেলওয়ে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত) স্টেশন রয়েছে ৩৫৯টি। বাকী ১২৪টি স্টেশন ডি ক্লাশ (স্বল্প রিবতিকালীন)। এর মধ্যে প্রায় ১১৬ টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে রয়েছে রেলওয়ে সূত্র জানায়।  

এর সব স্টেশনের মধ্যে সুপার ও মাস্টারের সংকটের কারণে বেশির ভাগ স্টেশন বন্ধ রয়েছে। শতাধিক স্টেশন এক যুগ যাবৎ বন্ধ থাকলেও চালুর কোন উদ্যোগ নেই সরকারের। এতে একদিকে যাত্রীরা যেমন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘদিন রেলস্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় প্রতিনিয়ত রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানায়।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বন্ধ রেখে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন চালু রাখা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতি মাসে আমরা উচ্চপর্যায়ে চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। লোকবল-স্বল্পতার কারণে ২০০৭ সালে একাধিক স্টেশন বন্ধ করে দিতে হয়। 

এরপর ২০০৮ সালে স্টেশন ১৬টি, ২০০৯ সালে ২৬টি এবং ২০১০ সালে ৩৪টি স্টেশন বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বমোর্ট ১১৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া লোকবল না থাকায় চালু থাকা স্টেশনগুলোতেও সেবার মান ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলওয়ের মূল্যবান সম্পদগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

জানা গেছে, রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে মোট ৪৮৩টি রেলস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে রয়েছে ২২৮টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ২৫৫টি স্টেশন রয়েছে। বন্ধ স্টেশনের মধ্যে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে বেশী। রেলওয়ের লালমনির হাট ও পাকশী বিভাগে প্রায় ৭০টি স্টেশন দীর্ঘ ১২ বছর যাবত থেকে বন্ধ রয়েছে। এছাড়া রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৪৬টি স্টেশন সম্পূর্নরূপে বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত।

রেলওয়ে চার শ্রেনীর স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে এ ও বি ক্লাশ স্টেশন রেলওয়ের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এছাড়া ডি ও হল্ট ক্লাশ স্টেশন মাস্টার বিহীন স্বল্প বিরতির জন্য ব্যবহার করা হয়। রেলওয়ের ১২৪টি স্টেশন ডি ও হল্ট ক্লাশের স্টেশন রয়েছে। এছাড়া আংশিক ও এক/দুই শিফট করে বন্ধ রয়েছে অর্ধশত স্টেশন। এসব স্টেশনের অধিকাংশই মাস্টার সংকট কারণে চালু করা যাচ্ছে না বলে জানান রেল কর্তৃপক্ষ।

সম্পর্কিত বিষয়:

×