ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী

দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে, সতর্ক থাকুন

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১৩ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৮:১৯, ১৩ অক্টোবর ২০২২

দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে, সতর্ক থাকুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন আগামীতে ক্ষমতায় না আসে সেজন্য সতর্ক থাকুন। 

বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ৫০টি মুজিব কেল্লা, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫টি জেলা ত্রাণ  গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্রেরও উদ্বোধন করেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

তিনি ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ঘুর্ণিঝড়ের পর যে দলটির প্রধান বলেছিলেন, ‘যত লোক মারা যাওয়ার কথা ছিল তত লোক মারা যায় নাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ৯১ সালে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায়, তখন দেশে এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্নিঝড় হল। সেই ঘূর্নিঝড়ের পর সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরে নাই। আমি তখন তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আর কত মানুষ মারা গেলে আপনার মনে হবে যে তত মানুষ মারা গেছে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে থাকলেও সে সময় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায়। পরবর্তীতে সরকারে এসে সেই ঘুর্ণি দুর্গতদের জন্য খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরী করে তাদের পুনর্বাসনসহ সেই সময় কুতুবদিয়া থেকে ছোট্ট একটি ছেলেকে ঢাকায় এনে পুনর্বাসন করার একটি ঘটনাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের দেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাটা (দুর্যোগ মোকাবিলায়) নিজেদেরই করে নিতে হবে। কাজেই উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষায়ণের মাধ্যমে যতবেশি আপনারা একে সবুজে আচ্ছাদিত করতে পারবেন তত বেশি আমরা আমাদের দেশকে বাঁচাতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় সারাদেশকে দুর্যোগের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে একে ৬টি দুর্যোগ হটস্পটে বিভক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, দুর্যোগের সাড়াদান প্রস্তুতি ও দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০২১-২০২৫ সাল মেয়াদের জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। 

আজকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে একটি অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যতই দুর্যোগ আসুক আমরা সেটা মোকাবিলায় সক্ষম, আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

সরকার প্রধান সারাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী-১৯৯৭ প্রণয়ন করেছিলাম। পরবর্তীতে আমরাই আবার ২০১০ সালে এটি হালনাগাদ ও জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করি। ২০১২ সালে আমাদের সরকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে, যা দুর্যোগ মোকাবেলা, ঝুঁঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমাদের সরকার পূর্বের মুজিব কিল্লাসমূহ সংস্কারসহ নতুন করে আরও ৩৭৮টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভ্যন্তরীণ বাস্তুহারা মানুষের দুর্দশার বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ২০১৫ সালে আমরা একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন এবং জাতীয় রিজিলিয়েন্স পরিকল্পনা গ্রহণ করি, যা সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক ও এসডিজি’র সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। 

তিনি বলেন, আমরা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছি। বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় পূর্বাচলে একটি স্টেজিং এরিয়া নির্মাণ করা হচ্ছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে গত কয়েক বছরে সারাদেশে ৪২৩টি বন্যা ও ৪২০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র আমরা নির্মাণ করেছি। দুর্যোগের সঙ্গে সঙ্গে যাতে স্বল্প সময়ে জেলা ও প্রান্তিক পর্যায়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো যায় সে লক্ষ্যে ৬৪ জেলায় ৬৬টি ‘জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য কেন্দ্র’ স্থাপন কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনও আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। 

তিনি বলেন, আজ ২৫টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র, ৫০টি মুজিব কিল্লা ও ৮০টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে। আমি আশা করছি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস তথা জানমালের সুরক্ষায় এগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখবে।   
  
তিনি বলেন, যে কোনো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ আর প্রাকৃতিক দুর্যোগই মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর একদিকে করোনা তারওপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন-এসব মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হচ্ছে।

সূত্র: বাসস

এসআর

×