ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

টাকার মেশিন ফুটপাথ ॥ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ৩

দৈনিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে চাঁদা

ফজলুর রহমান

প্রকাশিত: ২৩:২২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২

দৈনিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে চাঁদা

রাজধানীর কলাবাগানের ফুটপাথ ভাসমান হকারদের দখলে

যে ধানমণ্ডিতে বসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে ধানমণ্ডি বাঙালী জাতির অভ্যুদয়ের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক, সেই ধানমণ্ডি আবাসিকের ঐতিহ্য হারাচ্ছে। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে ধানমণ্ডির পর্যটন স্পটগুলো। ফুটপাথজুড়ে বসানো হচ্ছে হকার। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করছে পর্যটন স্পটগুলোর ইজারাদাররা।

বসতির তুলনায় অধিক খাবার ও বাজারজাত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক, ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ। সব মিলিয়ে আবাসিকের সেই ঐতিহ্য আর নেই ধানমণ্ডি এলাকার। দিনদিন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ধানম-িপ্রেমী পর্যটকরা। ঐতিহ্য বিনষ্ট করার পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাই ভূমিকা পালন করছেন। ধানম-ির দক্ষিণে ১ নম্বর সড়ক, উত্তরে ২৭ নম্বর (পুরোনো) সড়ক, পূর্বে গ্রিন রোড ও মিরপুর রোড এবং পশ্চিমে সাতমসজিদ সড়ক ও পুরোনো ১৯ নম্বর সড়কের মধ্যবর্তী এলাকাই মূলত ধানমণ্ডির মূল আবাসিক এলাকা।

১৯৫২ সালে আবাসিক এলাকা হিসেবে ধানমণ্ডি গড়ে ওঠে। এই এলাকায় ১ নম্বর সড়ক থেকে ২৭ নম্বর পর্যন্ত মোট ৩১টি সড়ক আছে। ৩১টি সড়কে প্রায় ১ হাজার ১০০টি ভবন আছে। এর মধ্যে আবাসিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৮০০টি। নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে অর্ধশতাধিক। বাকিগুলো শুধু বাণিজ্যিক ও আবাসিক কাম বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অর্থাৎ মোট ভবনের শতকরা ৫২ ভাগ আবাসিক। বাকি ৪৮ ভাগ আবাসিক কাম বাণিজ্যিক এবং শুধু বাণিজ্যিক।
এলাকার ফুটপাথে হকারের কারণে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ নাই। হকারদের কারা বসাচ্ছে, এদের কাছ থেকে কি পরিমাণে চাঁদা তোলা হচ্ছে, চাঁদার এই ভাগ কার কার পকেটে যায়- এসব জানতে অনুসন্ধান চালায় জনকণ্ঠ। প্রতিবেদক বেশ কয়েকদিন হকার সেজে এবং বিভিন্ন কৌশলে অনুসন্ধান চালান। এতে উঠে আসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের নাম।

এদের মধ্যেই ভাগাভাগি হয় উঠানো চাঁদা। হকার ছাড়াও ধানমণ্ডি এলাকায় মাদক বিক্রি ও সেবন প্রধান একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লেকসহ পর্যটন স্পটগুলোর ইজারাদাররা নির্ধারিত সীমানার বাহিরে অতিরিক্ত জায়গা দখল নিয়ে দোকান বসাচ্ছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে। কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ধানম-ির ঐতিহ্য ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেলেও সেখানেও বাধ সাধছেন এসব নেতা। প্রশাসন তা দেখেও যেন দেখছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধানমণ্ডির ৬/এ সুগন্ধা কমিউনিটি সেন্টারের সামনের রাস্তায় প্রতিদিন ভোর বেলা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত শাকসবজি, মাছ, মুরগি, ডিম, নারিকেলসহ হরেক রকমের পসরা সাজিয়ে বসেন প্রায় ৪০ জন হকার। ১০টার দিকে এসে বসেন ধানমণ্ডি ঈদগাহ মাঠের বিপরীত পাশের রাস্তায়। শুধু তাই নয়, ৬/এ’র ওই সড়কে চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে স্থানীয়ভাবে বসানো হয়েছে ৪টি ভাতের দোকান। পাশেই করা হয় রান্না।

ফুটপাথটির দক্ষিণপ্রান্ত দখল করে বক্স আকৃতির সিটি কর্পোরেশনের একটি কক্ষ বানানো হয়েছে। উত্তরপ্রান্তে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স। পথচারীরা ওই ফুটপাথ ধরে কোনভাবেই হাঁটতে পারছেন না। ফুটপাথ দখলের পর মূল সড়কেও বসেছে ডিম ব্যবসায়ী, আখ মাড়াইয়ের মেশিন, মোবাইলের সিম বিক্রয় প্রতিনিধি, ফ্লেক্সিলোড ও ডাব নারিকেলের ভাসমান দোকান। প্রত্যেক মাছ ব্যবসায়ীকে দৈনিক ৫০০ টাকা, ভাতের দোকানিকে ২০০-৩০০ টাকা, অন্যান্য হকারদের দোকান ও ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার এই ভাগ পায় সংশ্লিষ্ট সবাই।

গত দুই মাসে সিটি কর্পোরেশন ছয়বার অভিযান চালিয়ে মাছসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে গেছে। তবুও আবার বসছে এই হকাররা। জীবিকা নির্বাহের তাগিদেই তাদের বসতে হচ্ছে। হকারদের কাছ থেকে দৈনিক ও সাপ্তাহিক চুক্তিতে চাঁদা নেয় হয়।
আবাহনী মাঠের চতুর্দিক ঘিরে রয়েছে প্রায় ২০টি নার্সারির দোকান। চায়ের দোকানের পাশাপাশি রয়েছে ভাসমান ভাতের দোকান, রিক্সা-সাইকেল ঠিক করার অস্থায়ী ওয়ার্কশপ। ওই মাঠে সকালে ব্যায়াম করতে আসা স্থানীয়রা ও খেলতে আসা যুবকদের প্রতিনিয়িত বিড়াম্বনা পোহাতে হচ্ছে। অথচ মাঠটির পূর্ব প্রান্তেই রয়েছে পশ্চিম ধানম-ি আদর্শ পুলিশ ফাঁড়ি। তবুও কেউ যেন দেখার নেই। হকারদের অভিযোগ, তারা পুলিশকে চাঁদা দিয়েই ওখানে ব্যবসা পরিচালনা করছে।

পশ্চিম ধানমণ্ডি আদর্শ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) রাজবী হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ফুটপাথ থেকে ফাঁড়ির কোন পুলিশ সদস্যের চাঁদা নেয়ার বিষয়ে কোন হকার কখনও অভিযোগ করেনি। কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ও তার ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের ৩২ নম্বরের অনুষ্ঠান ঘিরে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই অন্য এলাকায় একটু কমই সময় দেয়া হয়।
রবীন্দ্র সরোবর যেতে ব্রিজে ওঠার আগেই মহিলা কলেজের বিশাল বড় সাইনবোর্ডের খুঁটি পড়েছে ফুটপাথে। পশ্চিম পাশের ফুটপাথে সাজানো হয়েছে নার্সারির দোকান। ৩০নং রোডে প্রতিনিয়ত বসছে সবজি, চা, ডাব, নারিকেলসহ হরেক রকমের দোকান। এদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা তোলে একজন হকার্স নেতার লাইনম্যান। ডিঙ্গি পর্যটন স্পটের আশপাশে গড়ে উঠেছে চাসহ কয়েকটি ভাসমান দোকান।

এসবের চাঁদাও লাইনম্যানের মাধ্যমে যায় হকার নেতার পকেটে। ধানমণ্ডি ১৫নং এলাকায় ফল, ফুল ও ফ্লেক্সিলোডের দোকানিদের কাছ থেকেও লাইনম্যানের মাধ্যমে চাঁদা নেয়া হয়। ভোর বেলায় ফুটপাথসহ লেক, রবীন্দ্র সরোবরের সিঁড়িতে গৃহস্থালি তৈজসপত্র, প্রসাধনী নিয়ে বসছেন মহিলারা। ভ্যানে করে ডাব নারিকেল বিক্রি করছেন ভাসমান হকাররা। এদের কাছ থেকেও চাঁদা তোলা হয়।
ধানম-ি হকার্স সমবায় ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড নামে সংগঠনটির সদস্য ধানম-ি ও হাজারীবাগ থানাধীন ৩ হাজারের বেশি হকার। হকারদের এই সংগঠনের সদস্য করার সময় ৫০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। সংগঠনের লাইনম্যান, ফিল্ড অফিসার, ক্যাশিয়ার রয়েছে। লাইনম্যান হেঁটে হেঁটে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তোলে। ফিল্ড অফিসার হকারদের দোকান বসাতে সমস্যা হলে সেটি দেখভাল করে।

যেই পরিমাণ চাঁদা তোলা হয় তার একটি অংশ অফিস খরচ বাবদ রাখা হয়, আরেকটি অংশ নির্দিষ্ট ব্যাংক এ্যাকাউন্টে রাখা হয়। সংগঠনের আওতাধীন ৩ হাজার সদস্যের কথা বলা হলেও বাস্তবে এই দুই থানাধীন আরও বেশি সংখ্যক হকার রয়েছে। এদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা তোলা হয়।
সংগঠনটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হায়াত জানান, তার সংগঠনটি নিবন্ধিত। সরকারকে ট্যাক্স দেয়া হয়। হকারদের কাছ থেকে তোলা চাঁদার একটি ভাগ লাইনম্যানসহ অফিস স্টাফদের বেতন বাবদ খরচ করা হয়। বাকি টাকা স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে এবং পুলিশকে দেয়া হয়। সংগঠনের নামে হকারদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেয়ার বিষয়টি আবুল হায়াতের দৃষ্টিতে চাঁদাবাজি নয়।

তিনি হকার প্রতি ৪০-৫০ টাকা করে নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে তোলা হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে। কাউন্সিলর বাবলা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্থায়ী বাজার বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই ৬/এ রোডের বাজারটি মেয়রের নির্দেশে বসানো হচ্ছে। ওই বাজারসহ ধানম-ি এলাকায় বসা হকারদের কাছ থেকে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর, পাতাম, ডিঙ্গি, পানসি, সাপ্পান, সুধাসদন এলাকার নাইওরীসহ সাতটি পর্যটন স্থান দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়ে আবার সাব-ইজারা দিয়েছেন মূল ইজারাদাররা। দেখা যায়, এ সকল পর্যটন স্পটে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। ফুটপাথ দখল করে নির্ধারিত চেয়ার-টেবিলের বেশি চেয়ার-টেবিল বসানো হচ্ছে। সরকার রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধ করার নিয়ম করলেও এই নিয়ম তোয়াক্কা করছে না দোকানিরা। রাত ১১টার পরেও ওখানকার খাবার দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে।

পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা না করায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ডিঙ্গি ব্রিজের নিচে, রবীন্দ্র সরোবরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তের একটু অন্ধকার স্থানে গাঁজার গন্ধে হাঁটা মুশকিল। জানতে চাইলে রবীন্দ্র সরোবর, পাতাম ও নাইওরীর ইজারাদার গোলাম মোস্তফা হিরু জনকণ্ঠকে বলেন, চেয়ার বসানোর বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে নির্ধারণ করা হয়নি। চেয়ার না বাড়ালে ঘুরতে আসা বয়স্ক, মহিলা-শিশুদের জায়গা দেবো কিভাবে।

রেস্টুরেন্টের ময়লা ইজারাদাররা নিয়ে থাকে। লেকেরটা আলাদা বিষয়। ঘুরতে আসা অনেক যুবক গাঁজা সেবন করে। গন্ধে থাকা যায় না। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। তাই লাইটের সংখ্যা বাড়িয়েছি। তার এই ৩টি পর্যটন স্পটে ৯টার পর রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা হয় না বলে দাবি করেন তিনি।
হকার উচ্ছেদ, যত্রতত্র ময়লা ফেলা, পর্যটন স্পট ইজারাদারদের অনিয়মের বিরুদ্ধে বার বার অভিযান চালিয়েও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা নাজনীন জনকণ্ঠকে বলেন, ধানম-ি এলাকার হকারদের বিরুদ্ধে তিনি অন্তত ৩০ বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছেন। তারপরও ওখানকার ফুটপাথ হকার মুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘণ্টাখানেক পর ফের বসে যাচ্ছে। উচ্ছেদের দুই দিন আগে মাইকিংও করা হয়। কোন কিছুতেই কাজে আসছে না। এক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
ধানমণ্ডির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও সুরক্ষিত আবাসিক এলাকা গড়ে তুলতে কাজ করছে ধানমণ্ডিবাসীর সমন্বয়ে গঠিত ‘ধানমণ্ডি সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠন। সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ও অলাভজনক এই সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী উপ-কমিটি গঠনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে লেক, পার্ক ও খেলার মাঠের উন্নয়ন, সবুজায়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনে বৃক্ষরোপণ করেছে।

গেল কোরবানির ঈদে ৫টি ট্রাক ও ১০ জন লেবার দিয়ে এবং নিজ স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা করেছে। উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয় ও সহযোগিতায় ধানমণ্ডির যানজট নিরসন, দুর্ঘটনারোধ ও পথচারীদের নির্বিঘেœ চলাচলের জন্যও কাজ করছে ধানমণ্ডি সোসাইটি।
জানতে চাইলে ধানমণ্ডি সোসাইটির সভাপতি আবু মোহাম্মদ সবুর জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকাকে বাংলাদেশের রাজধানী বলা হলে ধানম-ি ঢাকার রাজধানী। ক্রীড়া-শিক্ষা-সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক কিংবা রাজনৈতিক দিক দিয়েও ধানমণ্ডি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাসের অংশ। দিন দিন ধানমণ্ডি আবাসিকের ঐতিহ্য হারাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীর সমন্বয়ে ইতোমধ্যে অনেক কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

বর্তমানে ইলেক্ট্রনিক্স নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংবলিত নিরাপত্তা কর্মীর মাধ্যমে এলাকার প্রবেশ এবং প্রস্থানমুখের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের কাজ চলছে। ধানম-ির বাসিন্দারা যাতে সর্বাধুনিক ও সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারে, সেটি নিশ্চিতে নিরলসভাবে কাজ করবে ধানম-ি সোসাইটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধানমণ্ডি এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে মোট ১৩৩টি। প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে মোট ৯৯টি। ধানম-িতে বর্তমানে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ১২ হাজার। প্রতি পরিবারের সদস্য সংখ্যা গড়ে ৫ জন ধরা হলে ধানম-িতে বসবাসরত জনসংখ্যা আনুমানিক ৬০ হাজার।

পরিবার, অফিস ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মিলে ভবনগুলোয় ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যা ১১ হাজার ১৫০টি। খেলার মাঠ রয়েছে ৫টি। এর মধ্যে ২টি বড় ও ৩টি ছোট। খাবার ও খাবারজাত প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩০০টি। শপিং মল ও ছোট পরিসরের মার্কেটের সংখ্যা প্রায় ৩০টি। শপিং মল, মার্কেট এবং বিভিন্ন সড়কে অবস্থিত মোট দোকানের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০টি। এ ছাড়া আছে বিউটি পার্লার ৪০টি, ব্যাংকের শাখা ৬২টি।
একাধিক বাসিন্দা বলছেন, ধানম-ি এলাকা এখন বাণিজ্যিক এলাকা হয়ে গেছে। সকালে স্কুলগুলোয় আর রাতে মার্কেট, খাবারের দোকানে আসা গাড়িগুলো রাখা হয় রাস্তায়। যানজট লেগেই থাকে। আর খেলাধুলা, সকাল-সন্ধ্যায় একটু হাঁটা তো অসম্ভব।
ধানমণ্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মাসুম জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য এলাকার তুলনায় ধানম-িতে হকারের সংখ্যা অনেক কম। ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবুও এদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। গত আগস্টেই দেড় শতাধিক হকারকে প্রসিকিউশন দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। জামিনে এসে এরা ফের ফুটপাথে বসে যাচ্ছে। পুলিশের কেউ ফুটপাথের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

×