অপরিশোধিত তেল
রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল শোধন করা সম্ভব নয় বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ইস্টার্ন রিফাইনারির (ইআরএল) টেকনিক্যাল কমিটি। ৫০ বছরের পুরনো ইস্টার্ন রিফাইনারিতে মূলত মারবান এবং অ্যারাবিয়ান লাইট ক্রুড অয়েল রিফাইন করা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের ইয়েল্ড প্যাটার্ন এভাবেই তৈরি। এই প্যাটার্নে অন্য কোনো ক্রুড অয়েল রিফাইন করা সম্ভব না। তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল অ্যারাবিয়ান অপরিশোধিত তেলের চেয়ে ভারি। তাই ইস্টার্ন রিফাইনারির মতো পুরনো স্থাপনায় রাশিয়ার ক্রুড পরিশোধন করা সম্ভব না। যেহেতু ইআরএল ছাড়া দেশে তেল শোধনগার আর নেই তাই আপাতত দেশে রাশিয়ার তেল পরিশোধন করা যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত ২০ পাতার একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে জমা দিয়েছে ইআরএল কর্তৃপক্ষ।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জারুবেঝনেফ জেএসসি তাদের বাংলাদেশি এজেন্ট ন্যাশনাল ইলেকট্রিক বিডি লিমিটেডের প্রতিনিধির মাধ্যমে তেলের নমুনা পাঠায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। সেসময় ইআরএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান তেলের চালানটি গ্রহণ করেন। নমুনা চালানে ৫টি প্লাস্টিক জারে ৫০ কেজি অপরিশোধিত তেল ছিলো। টানা ২০ দিন নানামুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এটিকে শোধনযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ তথ্য নিশ্চিত করে বিপিসি’র চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। ২০ পাতার প্রতিবেদনের মতামত অংশে ইআরএল’র টেকনিক্যাল কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির বর্তমান কাঠামোতে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না।
প্রতিবেদনে আর কি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ২০ পাতার ওই প্রতিবেদনের প্রায় পুরোটাই টেকনিক্যাল কথাবার্তা। যা সাধারণ মানুষও যেমন ঠিকঠাক বুঝবে না আমরা পুরোপুরি বুঝবো না। তবে প্রতিবেদনের সারমর্ম যেটা আমরা পেয়েছি তা হলো ইআরএল’র বর্তমান মেশিনারিজ দিয়ে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব নয়। অন্যান্য মতামতগুলো খুবই টেকনিক্যাল বিষয়।
এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবেদনের খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা শেষে আমরা আগামী দু-একদিনের মধ্যে অফিসিয়ালি রাশিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেবো।
ইআরএল সূত্রে জানা যায়, ২০ পাতার প্রতিবেদনের শেষ দিকের অংশে মতামত দিয়েছে ইআরএল’র টেকনিক্যাল কমিটি। এই কমিটির প্রধান ছিলেন ইআরএল’র মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহমদ। সদস্য সচিব ছিলেন ব্যবস্থাপক (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) সামিউল ইসলাম।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের উর্ধ্বমূল্যের কারণে বেশ কিছুদিন থেকেই রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে করা নিয়ে সরকারের নানা পক্ষ থেকে আলোচনা চলছিলো। আলোচনায় ঘি ঢালে ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূতের আলেকজান্ডার ভি মান্টিটক্সির এক বক্তব্যে। গত মাসের শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে তেল দিতে প্রস্তুত রাশিয়া। আমদানির সিদ্ধান্ত একান্ত বাংলাদেশের। এই বক্তব্যের বাস্তব রূপ হিসেবেই গত মাসে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য ঢাকা এসে পৌঁছে দেশটি থেকে অপরিশোধিত তেল। তবে বিপত্তি বাঁধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকের এক সিদ্ধান্তের পর। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের কোনো চিন্তা করছে না সরকার বলে জানানো হয়। কিন্তু আবার আশার আলো জাগান প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী। তিনি রাশিয়া থেকে তেল আনার পক্ষে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, রাশিয়া থেকে তেল আনলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি থাকবে না। এতে করে থাকছে না কোনো কূটনৈতিক প্রতিবন্ধকতা। আর যেহেতু দেশটি থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে তাই তেল আমদানি করতেও মুদ্রা বিনিময় কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে বিশ্বের অন্যান্য বাজার থেকে প্রায় অর্ধেক মূল্যে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যার ফলে দেশের জ্বালানির চলমান সংকট কাটবে বলে আশা করা হলেও ইআরএল এর এই প্রতিবেদনের ফলে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়টা পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে গেলো।