শাকিব বিন ওয়ালী
কুমিল্লার সাত কলেজছাত্র নিখোঁজের ঘটনায় চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিটিসি)। তিনি এ ঘটনার হোতা বলে দাবি করেন তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃত শাকির বিন ওয়ালী একজন চিকিৎসক। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য।
তিনি জানান, শাকির কুমিল্লার নিখোঁজ সাত ছাত্রকে আনসার আল ইসলামে যোগদান করান। তিনি ওই সাতজনকে তাওহিদ ও জিহাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। সিটিটিসির প্রধান জানান, শাকিরই ওই সাত ছাত্রকে কথিত হিজরতের নামে ঘর থেকে বের করেন। এখনও পর্যন্ত ওই সাত ছাত্রের খোঁজ মেলেনি। তবে শীঘ্রই তাদের সন্ধান মিলবে। তিনি জানান, কুমিল্লার নিখোঁজ সাত ছাত্রের বিষয় তদন্তে নামে সিটিটিসি গোয়েন্দা দল। এই তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য আবরারুল হক আবরারকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়।
তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীকে রাজধানীর রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শাকির ও আবরারুলের বিরুদ্ধে বুধবার রামপুরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে। সিটিটিসির করা এ মামলায় দুজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিটিটিসি। এদিকে বুধবার গ্রেফতারকৃত চিকিৎসক শাকির ও তার সহযোগী আবরারকে ৫ দিনের রিমান্ড নিয়েছে সিটিটিসি।
সিটিটিসির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে যাওয়া কুমিল্লার সাত তরুণের সহযোগী শাকির। তিনি নানাভাবে তরুণ-যুবকদের জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করে আসছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জঙ্গী সংগঠনটির জন্য সদস্য সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কথিত হিজরতে যেতে সহায়তা করতেন। হিজরতের জন্য ওই সাত ছাত্রের গন্তব্য আফগানিস্তান, পাকিস্তান না অন্য কোন দেশ এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে তারা বাসা থেকে বের হয়।
তাদের আগে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বের হওয়ার পর গন্তব্য বলে দেয়া হবে বলে জানানো হয়। শুধু বের হওয়ার কথা বলার পরপরই তাদের কথামতো বাসা থেকে বের হয়ে যায় ওই শিক্ষার্থীরা। মূলত জঙ্গীবাদে সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট হওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে তারা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এসব নানা বিষয়ে নিয়ে চিকিৎসক শাকির ও তার সহযোগী আবরারুলের জিজ্ঞাসাবাদে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত শাকির ও তার সহযোগী আবরারকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান সিটিটিসির প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান
গ্রেফতারকৃত শাকিরসহ দুজন রিমান্ডে ॥ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য চিকিৎসক ডাঃ শাকির বিন ওয়ালী ও আবরারুল হকের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুুন কবির শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এদিন দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিদের আদালতে হাজির করেন। সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। বিচারক প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শাকিরের বাবা ওয়ালিউল্লাহ যা বললেন ॥ আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে আমার চিকিৎসক ছেলের শাকিরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সবটাই মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক বলে দাবি করেছেন চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একেএম ওয়ালিউল্লাহ। বুধবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করেন তিনি।
চিকিৎসক সাকির বিন ওয়ালীর সঙ্গে জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের দূরতম কোন সম্পর্ক থাকার প্রশ্নই আসে না দাবি করে ওয়ালিউল্লাহ জানান, তার ছেলে চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে আনা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল ও ভিত্তি নেই। আমরা আইনের মাধ্যমে প্রমাণ করব যে এগুলো ভুয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। এ জন্য আমরা আইনের আশ্রয় নিতে চাই। তাকে গত চারদিন ধরে সিটিটিসি অবৈধভাবে আমার চিকিৎসক ছেলে শাকিরকে আটকে রেখেছে।
তার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো আমরা আইনের মাধ্যমেই খণ্ডন করব। চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালী ছাত্রাবস্থায় জামায়াত-শিবির পরিচালিত মেডিক্যাল কোচিং সেন্টার ‘রেটিনা’য় শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। এর বাইরে তার আর কোন পরিচয় বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। তার সঙ্গে কখনও কোন জঙ্গী সংগঠনের দূরতম সম্পর্ক ছিল না বলেও দাবি করেন তার বাবা ওয়ালিউল্লাহ। তিনি বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে কুমিল্লায় সাতটি ছেলে নিখোঁজে আমার ছেলে নাকি জড়িত এটা একটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। আমার ছেলে মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করে দুই বছর হলো ঢাকায় এসেছেন।
সে কুমিল্লার ছেলেদের উস্কানি দিচ্ছে অথচ সে এফসিপিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। এমন সব আনা অভিযোগ কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। আমার ছেলের সঙ্গে ওই কুমিল্লার ছেলেদের কোন ধরনের সম্পর্ক নেই। কোনদিন ছিল না, তাদের সে চিনেও না। এ সময় চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীর স্ত্রী শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আয়েশা বিনতে মোস্তাফিজ, তার দুই সন্তান (বয়স দেড় বছর ও দুই মাস) এবং বোন লাবিনা বিনতে ওয়ালী উপস্থিত ছিলেন।