ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২

ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

সম্পর্কে নয়া দিগন্তের সূচনা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৪১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২; আপডেট: ০২:০১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

সম্পর্কে নয়া দিগন্তের সূচনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেনতিনি বলেন, এখনও নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় সময় বাকি আছেনির্বাচনে আমাদের সঙ্গে কে থাকবে না থাকবে, নতুন জোট হবে কি হবে না-অসুবিধা নেইসবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটাই আমরা চাইআর যদি কেউ নির্বাচন না করে ওটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত

সেজন্য তো আমাদের সংবিধানিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখতে পারি নাআমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুকআর দেশের জন্য এত কাজ করার পর এবং চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে দেশের জনগণ তাদের ভোট অবশ্যই আওয়ামী লীগকে দেবে, এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করিউন্নয়ন না চাইলে তো কিছু করার নেই, সেটা জনগণের ইচ্ছানির্বাচনে আমাদের সঙ্গে যারা সবসময় ছিল, তারা আমাদের সঙ্গে থাকবেএতে আমাদের কোন আপত্তি নেই

বুধবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ভারত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেনকোভিড মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর তাঁর এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছিবাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের সব দল-মত এক থাকেএটাই বড় কথা

সরকার প্রধান বলেন, ভারত সফরের সময় দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ যাঁদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে সবাই খুব আন্তরিকতা দেখিয়েছেনআপনি যদি নিজে ভাল বন্ধু হন তো সবাই ভাল থাকবেসব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছেউভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেনসংবাদ সম্মেলনে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেনপ্রধানমন্ত্রী প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী ভারত সফরে অর্জিত সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি সিনিয়র সাংবাদিকদের প্রশ্নের স্বভাবসুলভ হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে জবাব দেন

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দরজা খোলা আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগ ১৪ দল না কি মহাজোটগত ভাবে করবে এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়টা তো সময় এলে বলতে পারবআমরা ১৪ দল করেছিআমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করেছিজাতীয় পার্টি আমাদের সঙ্গে ছিলতারা আলাদা নির্বাচন করেছেআমাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা ছিলআর আগামী নির্বাচনে কে কোথায় থাকবে, সেটা তো সময়ই বলে দেবেআর আওয়ামী লীগ উদারভাবে কাজ করে, আওয়ামী লীগের দরজা খোলা

তিনি বলেন, আমরা সরকারে আসার পর সারাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছিযোগাযোগ ব্যবস্থা, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু, গৃহহীনদের গৃহ তৈরি করে দেয়া, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, গবেষণার সুযোগ তৈরি করা; এভাবে সার্বিক দিক থেকে অর্থনীতি থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান করেছিআমাদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় কথা একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে আমরা উন্নয়নটা করে যাচ্ছিবিনা পয়সায় করোনার টিকা দিয়েছিএত কাজ করার পরে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি- অবশ্যই জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে, যদি এই চলমান উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখতে চাননা চাইলে তো কিছু করার নেইসেটা জনগণের বিষয়

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটাই আমরা চাইআর যদি কেউ না আসে তবুও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবেআওয়ামী লীগ একটানা ক্ষমতায় আছে তাই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছেহয়ত অনেকে ভুলে গেছে, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পরে যে বার বার ক্যু হচ্ছিলএকটা মিলিটারী ডিক্টেটরের পরে আরেকটা মিলিটারী ডিক্টেটর বা তার স্ত্রী ক্ষমতা নিয়ে গেল ক্যান্টনমেন্টের ভেতরেতখন জনগণের কি ছিল? তাদের কী আদৌ কোনো অধিকার ছিল?

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে পরিবর্তনের বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোন নির্বাচনে নমিনেশন পরিবর্তন এটা তো খুবই স্বাভাবিক বিষয়ক্ষেত্র মতো অবশ্যই আমরা যাচাই করে দেখবকার জেতার সম্ভাবনা আছে, কার নেইঅথবা বেশকিছু নিবেদিতপ্রাণ কর্মী আছেহয়ত বেশি দিন বাঁচবে না, হয়ত বয়স বেশি হয়ে গেছেতাদের আর কষ্ট দিতে চাইনি, মনোনয়ন দিয়েছিফলে এগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে সবকিছু বিবেচনা করেই দেয়া হয়এখনো তো নির্বাচনের প্রায় এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে, সময় যত যাবে এই বিষয়টা ততই পরিষ্কার হবে

৭৫ পরবর্তী দীর্ঘ ২১ বছরে দেশের বাস্তব অবস্থা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন টকশো করেন যে যার মতো কথা বলেন? একটা কথা জিজ্ঞাসা করি আওয়ামী লীগ সরকারে আসার আগে, কে এত কথা বলার সুযোগ পেয়েছে বলেন তো? কেউ পেয়েছে কখনো সুযোগ? পায়নিএখন শুনি সব কথা বলার পর বলে কথা বলার অধিকার নেইআজকে রাস্তায় আন্দোলনে জনগণ সাড়া না দিলে সেটা তো আমাদের দায়িত্ব না

আওয়ামী লীগ সব সরকারের আমলে নির্যাতিত হয়েছে উল্লেখ করে দলটির প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের উপর তো সবাই চড়াও হয়েছেসেই জিয়াউর রহমান থেকে শুরু, তারপর থেকে একের পর একলাশ টানতে টানতে আর আহতদের চিকিসা করতে করতে নাভিশ্বাস উঠেছিল আমাদেরএখন কি সেই পরিবেশ আছে? তা তো নাইএমনকি আমার পার্টির কেউ যদি কোন অন্যায় করে আমরা কিন্তু ছেড়ে দেই নাদলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে কিছু বলব না; তা নয়যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেব এবং নিচ্ছিএ ধরনের কর্মকা- আমি কখনো সহ্য করব না

বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা কী এত সহজ ছিল? যদি সুষ্ঠুভাবে, সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে না পারতাম, যদি অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি না হত, যদি গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত না হত, তাহলে তো এই অর্জনটা সম্ভব হতো নাসমালোচনা যারা করবে, করুক নাকরা তো ভালআমাদের কোন আপত্তি নাইআমরা শুনবসেখান থেকে যদি ভাল কিছু আসে গ্রহণ করবমন্দ থাকলে পরিহার করবআমরা পরিকল্পনা নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি বলেই দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, যার সুফলটা দেশের মানুষ পাচ্ছেদেশের মানুষ ভালো আছে কি না, সেটাই আমার কাছে বড় কথা

বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের সব দল এক ভারত সফরে গিয়ে দেশটির আন্তরিকতা উপলব্ধি করেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের সব দল-মত এক থাকেএটাই বড় কথাভারত সফরের সময় দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ যাঁদের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে সবাই খুব আন্তরিকতা  দেখিয়েছেনআপনি যদি নিজে ভাল বন্ধু হন তো সবাই ভাল থাকবে। 

ভারত সফরে গিয়ে বাংলাদেশ কী পেয়েছে-সেই প্রশ্ন যারা করেন তাদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ কী পায়নি? ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেল, এটা আপেক্ষিক প্রশ্নবন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র হিসেবে ভারত সব বিষয়েই সহযোগিতা করে যাচ্ছেএ সফরেও আমরা একেবারে শূন্য হাতে ফিরেছি, এটা বলতে পারব নাতিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যার সবদিকে ভারতএকপাশে ছোট্ট একটুখানি মিয়ানমার সীমান্তবাকি সীমান্তজুড়ে বঙ্গোপসাগর, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবেসবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের সব দল-মত এক থাকে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সফরে গিয়ে যথেষ্ট আন্তরিকতা পেয়েছিযাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে সবাই খুব আন্তরিক ছিলেনতবে বড় কথা হলো, বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের সব দল একযেমন, আমাদের এখানে একাত্তরে সব দল-মত এক হয়ে সমর্থন দিয়েছিলআবার যখন আমরা আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি, যখন ছিটমহল বিনিময় করি, ভারতের পার্লামেন্টে যখন স্থলসীমান্ত বিল পাস হয়, সব দল মিলে কিন্তু আইনটা পাস করেছিল

তিনি বলেন, ভারত বন্ধুপ্রতিম দেশ, তাদের সঙ্গে অবশ্যই সুসম্পর্ক থাকবেএটাও বাস্তব, পাশাপাশি একটি  দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারেতবে আমি মনে করি আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সমাধান করা যায়আমাদের নিজেদের জন্যই দরকারতিনি বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর অনেক রেল যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলএখন একে একে আমরা এগুলো খুলে দিচ্ছিআমাদের উত্তরের যে জেলা-উপজেলাগুলো আছে সেগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন যাতে আরও গতিশীল হয় সেজন্যই এটা হচ্ছেকাজেই আন্তরিকতার আমি কোন অভাব দেখিনি

তিনি আরও বলেন, আপনি যদি নিজে ভাল বন্ধু হন তো সবাই ভাল থাকবেআর যদি নিজে একটু এদিক-ওদিক করেন, তবে সবাই ভাল থাকে না, তাই না? আর আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতেই তো বলা আছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে আমরা এটা মেনে চলছিবন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে সমুদ্রসীমা মিটমাট করলামআমাদের বন্ধুত্ব কিন্তু নষ্ট হয়নি

রফতানি বন্ধ করলে আগাম বার্তা দেবে ভারত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রফতানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেবে ভারতসে অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নেবেতিনি বলেন, সফরকালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে সহযোগিতা, ভারতের মধ্য দিয়ে  নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আমদানির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছেবৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে ৭টি এমওইউ বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়

তিনি আরও বলেন, এবারের সফরে গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানিবণ্টনে আমরা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছিএই সমঝোতা স্মারকের ফলে রহিমপুর সংযোগ খালের মাধ্যমে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবেএ ছাড়া পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ প্রযুক্তি, গ্রিন ইকোনমি, সুনীল অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী

আরও অর্থ পাচারকারীর নাম আসবে দেশ থেকে অর্থপাচার নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থপাচারকারী এমন অনেকের তথ্য আছে সেটা আপনারা (সাংবাদিক) লিখবেন কি না সন্দেহআমি সোজা কথা বলি, অনেক স্বনামধন্যের তথ্য আমার কাছে আছেদুর্নীতি দমন কমিশন আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেসামনে তাদের নাম আসবে, তবে আপনারা ছাপাবেন কি না আমি সেটা দেখবসিআইডির মাধ্যমে আমরাই তো অর্থপাচারের ঘটনা বের করেছি, সাংবাদিকরা তো উদঘাটন করতে পারেনি

তিনি বলেন, দ্বিতীয় কথা হচ্ছে অর্থপাচারকারীর তথ্য নেয়া হচ্ছেসুইস ব্যাংকে কিন্তু আমরা বহু আগে ডিমান্ড পাঠিয়েছিলামআমরা তালিকা চেয়েছিলামকিন্তু তালিকা আসেই নাইসবাই হাওয়ায় কথা বলে যায় কিন্তু কেউ সঠিক তথ্য দিয়ে বলে নামানিলন্ডারিং বন্ধে যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেআর ডলার সঙ্কট বাংলাদেশের একার না, বিশ্বব্যাপী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও আমি বলব, আমরা ১৯৯৬ সালের সরকার গঠনের পর রিজার্ভ কত ছিল? করোনার সময় কোন খরচ ছিল না, তখন আমাদের রিজার্ভ বেড়েছেএরপর যখন আমদানি শুরু হয়েছে তখন তো কিছু কমেছেআরেকটা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ যেখান থেকে ঋণ নেয় সবসময় ঠিক সময়ে শোধ করেআমরা কোনদিন খেলাপি হইনিসেটা করতে যেয়েও রিজার্ভে একটু টান পড়ে

তিনি বলেন, ডলার নিয়ে কিছু একটা খেলা শুরু হয়েছিল, কিন্তু ভালভাবে নজরদারি করা হয়েছে বলেই আজকে একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি আছেসঙ্কট তো আন্তর্জাতিক বিষয় থেকে এসেছেএখন যেই সঙ্কট  দেখছেন হয়ত সামনের বছর আরও বেশি সঙ্কট দেখা দিতে পারেযুদ্ধ যদি বন্ধ না হয়, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হয় আমার তো শঙ্কা সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে, চরম অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারেতাই সবাইকে বলব সাশ্রয়ী হতে, সঞ্চয়ী হতেআর এক ইঞ্চি জায়গাও যেন অনাবাদি না থাকেআমাদের খাবার যেন আমরা নিজেই উপাদন করতে পারি

যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছি অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই যার যার ধর্ম যেন শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে, সেই পরিবেশ আমরা বাংলাদেশে ভালভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিকিছু কিছু ঘটনা ঘটে বা ঘটানো হয়, তারপরও যারা অপরাধী আমরা তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা  নেইআমরা তাদের কখনোই ছেড়ে দেই নাআমাদের যখন উসব হয়, পূজা-পার্বণ হয় সেখানে কিন্তু ভারতের অনেকে এসে যোগ দেয়, আবার ভারতে যখন হয় আমাদের এখান থেকেও অনেকে যোগ দেয়

এটা যেমন পূজা-পার্বণে হয়, আবার আমাদের এখানে যখন ইসলামিক কোন অনুষ্ঠান হয় বা ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান হয় সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিধিরা আসেনএটা কিন্তু আছে, একেবারে নাই যে তা নাআর আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করি, বাংলাদেশে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের অধিকার আছেআমি সব সময় বলি ধর্ম যার যার উসব সবারএটা আমরা যথাযথভাবে মেনে চলি

পাইপ লাইনে জ্বালানি আসবে বাংলাদেশে সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি সঙ্কটের সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আসবেফলে তেল পরিবহনের খরচ অনেকটা কমে যাবেএ প্রকল্পের আওতায় ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছেএর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে ১২৬ দশমিক ৫৭ এবং ভারত অংশে ৫ কিলোমিটার পাইপলাইন ভারত সরকারের অর্থায়নে নির্মাণ কাজ চলছেদিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে এই তেলটা থাকবেউত্তরবঙ্গে আর সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে তেল যেতে হবে নারিফাইন করা তেল ওখান থেকেই আসবে

অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বেউত্তরবঙ্গের মঙ্গা আমরা দূর করেছিপাশাপাশি ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছেভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে, সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছেহাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ইতিবাচক, সমস্যা মিয়ানমারের ॥  রোহিঙ্গা ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতকে আমরা বলেছি তারা যেন মিয়ানমার ইস্যুতে সহযোগিতা করেতাদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিসমস্যা হয়ে গেছে মিয়ানমারের সরকারকে নিয়েযে যতই চাপ দিক এরা কোন ব্যাপারই নেয় নাএরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত আছেএখানেই বড় সমস্যাভারত মনে করে এটার সমাধান হওয়া উচিত

তিনি আরও বলেন, আমরা মানবিক কারণে তাদের স্থান দিয়েছি, কিন্তু এখন যে পর্যায়ে যাচ্ছে তারা (রোহিঙ্গা) আমাদের জন্য বড় একটা বোঝা হয়ে যাচ্ছেতারাও তো মানুষ, আমরা তো ফেলে দিতে পারি নাআজকে শরণার্থী তো সব জায়গাতেই হচ্ছেইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে কত মানুষ শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেএ জন্য আমাদের সবসময়ের আহ্বান আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাইমানুষের কল্যাণ হোক সেটাই চাই

তারা তো সবকিছু ভুলে যায় যারা সমালোচনা করে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা একটি স্মারক সই করলামতার মাধ্যমে সিলেট বিভাগের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবেএসব বিষয় নিয়ে যারা সমালোচনা করে তারা কী এনেছিলেন? তারা তো সবকিছু ভুলে যানতিনি বলেন, কুশিয়ারার পানি বণ্টনে সমঝোতা নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করছেনকতটুকু পানি আসল সেটা নিয়ে তাদের এই সমালোচনা

আমরা যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করলাম, এর ফলে পুরো সিলেট বিভাগ বিশেষ করে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, সিলেট সদর, জকিগঞ্জ উপজেলার ৫৩ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবেসেচ প্রদানের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিএতগুলো জমি চাষের আওতায় এসে ফসল দেবে, সেই ফসল আমাদের দেশের মানুষেরই কাজে লাগবে

ভারত সফরে জামদানি শাড়ি পরা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রায় সবটা জুড়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ঐতিহ্য জামদানি শাড়ি পরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এসব জামদানি শাড়ির সৌন্দর্য, বুনট আর ডিজাইন ভারতে সবারই নজর কাড়েবিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রীর জামদানি কূটনীতিহিসেবে উল্লেখ করেন অনেকেতাক্ষণিকভাবে এই ব্র্যান্ডিংয়ের সুফলও মেলেপ্রধানমন্ত্রী সেখানে থাকা অবস্থায়ই দিল্লীতে আন্তর্জাতিক এক মেলায় বাংলাদেশি শাড়ির বিক্রয় কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেসে বলেন, অন্তত একটা বিষয়ে আমি খুশি যে আমাদের তাঁতিরা কাজ পারেনসুফলটা তাদের হাতেই যাবেএটা বাস্তব কথাআমি যখন যেখানে যাই, আমার নিজের দেশের যেটা আছে সেটাই ব্যবহার করিনিজের দেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করিদেশের পণ্যটা মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করিদেশের পণ্য যাতে ভাল বাজার পায় সেই চেষ্টা আমি করিকরব না  কেন?

দুদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে সাম্প্রতিক ভারত সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছেসফরের পুরো সময়ে আমরা ভারতের আন্তরিকতার বহির্প্রকাশ ও স-প্রতিবেশী হিসেবে সমতা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে দুই দেশের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার লক্ষ করেছি

ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদ মাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ করেছি তা সত্যিই অসাধারণএই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাইআর এই সফরে সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবেসব মিলিয়ে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ সফরের মাধ্যমে দুই দেশের একসঙ্গে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছেউভয় দেশের জনগণের কল্যাণে এই সহযোগিতার ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া অচিরেই একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চলে পরিণত হবে

ঐতিহাসিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ভারত আমাদের কাছের প্রতিবেশী এবং বন্ধুরাষ্ট্রভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাষা ও সংস্কৃতির সাযুজ্যের কারণে আমাদের সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়েছেএ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালে সহায়তা ও স্বাধীনতা পরবর্তীকালে সহযোগিতা এ বন্ধুত্বকে বিশেষত্ব দিয়েছেদক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছে

প্রধানমন্ত্রী জানান, ঐতিহাসিক মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়কচালু করা হবেএ সফরের উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে ভারতের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে

×