ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিশেষ প্রণোদনার দাবি 

প্রকাশিত: ২০:২৯, ৩১ আগস্ট ২০২২

প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিশেষ প্রণোদনার দাবি 

জুম মিটিং

শারীরিকভাবে কঠিন কঠিন প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করেও উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিবন্ধী নারীরা। তাদের কর্ম উদ্যমের কাছে হার মেনেছেন অনেক প্রতিষ্ঠিতরাও। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো ধরনের প্রণোদনা বা সুবিধা না পাওয়ায় তাদের এগিয়ে যাওয়া বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। 

তাই প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিশেষ প্রণোদনাসহ ব্যবসায়ের বিভিন্ন নিয়ম-নীতি শিথিল করার তাগিদ দিয়েছেন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

বুধবার (৩১ আগস্ট) অনলাইনে “প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন : গণমাধ্যমের ভূমিকা” শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তারা। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে এবং ইমএমকে সেন্টারের সহায়তায় সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন করেন আয়োজক সংস্থার চেয়ারপারসন মহুয়া পাল। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তারা সুযোগ পেলে সাফল্য অর্জন করতে পারে।

অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ও প্রবন্ধ উপস্থাপক অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের ১৬টি জেলার ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাকে তিন দিন করে দুইটি ব্যাচে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য বিভিন্ন কর্মাস প্ল্যাটফর্মে তাদেরকে যুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

তিনি প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলেন, ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতার অভাব, ই-কমার্স ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণার অভাব, প্রযুক্তিগত ধারণার অভাব, ব্যবসা শুরু ও সম্প্রসারণে মূলধনের অভাব, পরিবারের সহযোগিতা না পাওয়া, ট্রেডলাইসেন্স, ভ্যাট-রেজিস্ট্রেশন, টিআইএন ও অন্যান্য সনদ প্রাপ্তিতে বাঁধা, সরকারি এবং বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থা/ব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তিতে বৈষম্য, সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সব ধরনের প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রবেশগম্য নয়, প্রতিবন্ধী নারীদের উৎপাদিত পণ্যের উপর ক্রেতাদের জন্য প্রবেশগম্য নয়, প্রতিবন্ধী নারীদের উৎপাদিত পণ্যের উপর ক্রেতাদের আস্থার অভাব, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও প্রকল্প থাকলেও এসব সুবিধায় প্রতিবন্ধী নারীরা যুক্ত হতে পারে না। শুধু তাই নয় উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক নীতি মালায় প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই যেমন এসএমই নীতিমালা-২০১৯ এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি অনুপস্থিত। 

তিনি বাঁধাগুলো দূর করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে গণমাধ্যম বিভিন্ন প্রচারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সফল প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম গণমাধ্যমে তুলে ধরতে পারে। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে এবং নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্লেষণধর্মী এবং তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে। 

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা আমাকে বিস্মিত করেছে। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন সফল হওয়া কঠিন নয়। শুধু প্রয়োজন সহযোগীতা। আমাদের দায়িত্ব তাদের বিষয়গুলো সমাজের সামনে তুলে ধরা। 

আমি মনে করি, রাষ্ট্রের উচিত তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমি আয়োজক সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই এ ধরনের কাজ করার জন্য। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তার সাফল্যের কথা আমরা প্রচার করতে চাই। আমি উদ্যোগ গ্রহণ করবো যাতে  সাংবাদিক বন্ধুরা প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা আরো বেশি করে প্রচার করেন। 

এ সময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন বলেন, প্রতিবন্ধী নারীদের ৩টি বিষয় উল্লেখযোগ্য। তিনি পারেন, নারী হিসেবে পারেন এবং প্রতিবন্ধী নারী হিসেবে পারেন। একজন সাংবাদিক পারেন একজন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি বাড়াতে। কারণ প্রচারেই প্রসার। তাই তাদের বিষয়গুলো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। 

ইএমকে সেনন্টারের সমন্বয়কারী (উদ্যোক্ত উন্নয়ন) আয়শা সিদ্দিকা বলেন, উদ্যোক্তা হওয়া সহজ নয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তারা তা প্রমাণ করেছেন। 

সেমিনারে প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে নাটোর থেকে আরেফা পারভীন, সাতক্ষীরা থেকে অষ্টমী মালো, ময়মনসিংহ থেকে চুমকি বিশ্বা এবং শেফালী আক্তার এবং থাকা থেকে কামরুন নাহার তাদের ব্যবসা চালাতে যে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা তুলে ধরেন এবং বাঁধা উত্তরণে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা কামনা করেন। সভায় সাংবাদিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্থার কর্মী, প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাসহ মোট ৫২ জন অংশ নেন। 

×