বিআরটি প্রকল্পের মানচিত্র
উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে বিআরটি কর্তৃপক্ষ। এখন প্রতিদিনই চোখে পড়ে কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ আর পরিদর্শন। শুক্রবারও এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত উর্ধতন কর্মকর্তাদের জোর তৎপরতা দেখা গেছে। তারা নিরাপত্তা বজায় রেখে বাকি কাজ শেষ করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। জনসাধারণের দুর্ভোগের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যেই বাকি কাজটুকু খুব গুরুত্ব ও জোর দিয়েই করা হবে বলে জানানো হয়। এদিন তারা বেশ জোর দিয়েই বলেছেন, আগামী জুনেই খুলে দেয়া হবে এই প্রকল্প।
তারা বলছেন, নগরবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে এমন নিশ্চয়তা এখন দেয়া যেতেই পারে। কেননা প্রকল্পটির ৭৯ দশমিক ২৪ শতাংশ কাজ এখন সম্পন্ন হয়ে গেছে। প্রকল্পটির এমডি শফিকুল ইসলাম বলেছেন, উত্তরা ও টঙ্গী এলাকার বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সাড়ে ২০ কিলোমিটার ফ্লাইওভার ও রাস্তার ফিজিক্যাল নির্মাণকাজ ৭৯.২৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে চলাচলের জন্য এগুলো খুলে দেয়া হবে ।
শুক্রবার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবং ঢাকা বিআরটি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এ এম আমানুল্লাহ নুরী। তার সঙ্গে ছিলেন সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ), সেতু কর্তৃপক্ষ, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে গাজীপুর চৌরাস্তায় সাংবাদিকদের ডেকে সর্বশেষ অগ্রগতিও অবহিত করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর বিমানবন্দরের বলাকা কার্যালয়ের সামনে থেকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে বিআরটি করিডর পরিদর্শন করেন কর্মকর্তারা। এ সময় তারা জানান, প্রকল্পের আওতায় রয়েছে এয়ারপোর্ট ফ্লাইওভার, জসীমউদ্দীন ফ্লাইওভার, হাউসবিল্ডিং থেকে স্টেশন পর্যন্ত নির্মিত ফ্লাইওভার, টঙ্গীতে ফ্লাইওভার অংশে নির্মাণাধীন স্টেশন, সমতলে নির্মাণাধীন স্টেশন (তারাগাছ স্টেশন), বিআরটি করিডরের নির্বাচিত সড়কের অংশ, গাজীপুর চৌরাস্তা স্টেশন ও ফ্লাইওভার, বিআরটি ডিপো (নলজানি, গাজীপুর)।
শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের ফিজিক্যাল নির্মাণকাজ আরএসবি অংশের ১৬ কিলোমিটারের ৮২.৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিবিএ অংশের সাড়ে ৪ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৭২.৩৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে মোট নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৭৯.৯ শতাংশ। বাকি কাজ সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় সক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শতভাগ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারলে যথাসময়ে কাজ শেষ করা যাবে।
তবে এখন পর্যন্ত শতভাগ কাজ আমরা পাইনি। চাপ অব্যাহত রেখেছি। তাদের তিনটি শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফান্ড ও লোকবলের ঘাটতি দূর করা এবং মেজর সেফটি শতভাগ নিশ্চিত করা। এসব শর্ত পূরণে চাপ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শর্তগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরুর অনুমতি দেয়া হবে না। তবে শীঘ্রই শর্ত পূরণের পর কাজ শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে মেজর কাজগুলো শেষ হবে। বাকি কাজ ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ওই বছরের জুন নাগাদ প্রকল্পটি চালু করা যাবে বলে আমরা আশা করি।
এ সময় জসীমউদ্দীনে গার্ডার দুর্ঘটনার বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে। কার কার দায় আছে, সেটি তারা দেখবে। তবে কনসালটেন্টেরও দায়িত্ব থাকে।’
উল্লেখ্য, নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি না করেই গার্ডার সরানোর সময় সেটি প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যাওয়ায় গত ১৫ আগস্ট ঘটনাস্থলেই এক পরিবারের ৫ জন নিহত হন। এ ঘটনায় তোলপাড় চলে। কেননা এর আগেও এই প্রকল্পে একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তরায় প্রাণঘাতী এ দুর্ঘটনার পরই জনক্ষোভের মধ্যে এই ঘটনায় প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তদন্তের আওতায় আনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাদের তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে আছেন বিআরটির প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলামও।
এর আগে বিআরটি প্রকল্পটিকে ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সড়ক ভবনে গেল বছরের ২২ আগস্ট সাসেক রোড কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-২-এর চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, গাজীপুর বিআরটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে আর প্রকল্প বাড়াবেন না। যতটুকু আছে, এটাই আগে শেষ করুন। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের চেরাগআলী এলাকায় চলমান ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। কিন্তু গেল ডিসেম্বরে শেষ হয়নি। এখন আবার বলা হচ্ছে, আসছে ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
এ বিষয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। এ সময়ের মধ্যে সব না হলেও কিছু কাজ মার্চে শেষ করা হবে। আর জুনেই খুলে দেয়া হবে বিআরটি।