স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছবিটি আঁকা হয়েছিল একাত্তরের উত্তাল সময়ে। চিত্রিত হয়েছিল পাকি জেনারেল ইয়াহিয়ার বিকৃত মুখচ্ছবি। সেই মুখাবয়বে মানুষের বদলে ফুটে উঠেছিল হিংস্র জানোয়ারের প্রতিচ্ছবি। পরবর্তীতে সেই ছবিটি প্রকাশিত হয় পোস্টাররূপে। পাকবাহিনীর নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সেই পোস্টারে লেখা ছিল- এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে। ছবিটি এঁকেছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান। স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষ্যবহ সেই ঐতিহাসিক পোস্টারটি এখন শোভা পাচ্ছে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে। পথিকৃৎ এই চিত্রশিল্পীর মৃত্যুর দশ মিনিট আগের শেষ স্কেচটিরও দেখা মেলে গ্যালারির দেয়ালে। পাশের চিত্রকর্মে কোন সবুজ-শ্যামল গ্রামের দুই নারীকে ঝোপঝাড়ের ভেতর থেকে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইরত অবস্থায় দেখা যায়। ছবিটির শিরোনাম মুক্তিযোদ্ধা রমণী। আন্দোলন-সংগ্রামসহ নিসর্গের নান্দনিকতা, গ্রামীণ জীবন, নানা অভিব্যক্তিতে উপস্থাপিত নারীর সৌন্দর্য, ফসলের মাঠে ব্যস্ত কৃষকের কর্মতৎপরতা, জলের বুকে মাছ ধরা কিংবা অন্তরীক্ষে বকের ওড়াউড়িÑ কামরুল হাসানের সৃষ্টির বৈভবময় জগত নিয়ে সজ্জিত শিল্পায়োজনটির শিরোনাম ‘পটুয়া কামরুল হাসানের শতচিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী’।
এই প্রদর্শনীর সূচনা হয় সোমবার বিকেলে। কামরুল হাসানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে জাদুঘরের সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগ। জাদুঘরের সংরক্ষিত শিল্পীর ১ হাজার ৮৪৫টি শিল্পকর্মের মধ্যে বাছাইকৃত ১০০টি চিত্রকর্ম নিয়ে সজ্জিত হয়েছে এই শিল্পসম্ভার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পীকন্যা সুমনা হাসান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুমনা হাসান বলেন, বিলম্বে হলেও এই প্রদর্শনী আয়োজনের জন্য জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তবে এই প্রদর্শনীটি গত দোসরা ডিসেম্বর কামরুল হাসানের জন্মশতবর্ষের দিনে আয়োজন করা হলে আরও বেশি খুশি হতাম। কারণ, কামরুল হাসানের বিশাল একটি শিল্পভা-ার জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। সেই হিসেবে কামরুল হাসানকে নিয়ে এ ধরনের প্রদর্শনী তাদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে। কামরুল হাসানের শিল্পীসত্তার মূল্যায়নে অন্য বক্তারা বলেন, তার সৃষ্টির জগত বিচিত্র ও বিশাল। শিল্প আন্দোলনসহ এদেশের প্রতিটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে তিনি আমৃত্যু সম্পৃক্ত থেকেছে। শিল্পকলার নানা মাধ্যমে বৈচিত্র্যময়তা, বহুমাত্রিকতা এবং লোককলার সাধে আধুনিক চিত্রকলার রেখার মেলবন্ধনের দক্ষতাই তাঁকে দেশের শিল্পকলা জগতের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। চিত্রকলা সৃষ্টিতে কামরুল হাসান ধাবিত হয়েছে বিচিত্র পথে। সেই সুবাদে জল রং, তেল রং, প্যাস্টেল রং, পোস্টার রং, লিনোকাট, কাঠখোদাই, সেরিগ্রাফসহ বিভিন মাধ্যমে সরল সাবলীল শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছেন। এর বাইরে দক্ষতা দেখিয়েছেন ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে প্রচ্ছদ, পোস্টার ও কার্টুন আঁকায়।
সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান স্মরণ ॥ দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে অনন্য এক নাম আজাদ রহমান। বাংলা খেয়ালের জনক এই অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার। সেই সুবাদে ‘ভালবাসার মূল্য কত’, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই’, ‘ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’সহ অজস্র জনপ্রিয় গানের জড়িয়ে আছে তার নামটি। এসব গানের কোনটির সুরকার তিনি, কোনটির সঙ্গীত পরিচালক। সোমবার গানের সুরে ও কথনে প্রখ্যাত এই সঙ্গীতজ্ঞকে স্মরণ করল সাংস্কৃতিক সংগঠন সরগম ও সংস্কৃতি কেন্দ্র। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আজাদ রহমান স্মরণে আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।