রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ ইতিহাস-ঐতিহ্য আর আন্দোলন-সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে আলোকিত এক প্রাচীন জনপদ শেরপুর। এ জনপদ বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে মেঘালয়ের তুষার-শুভ্র মেঘপুঞ্জ ও নীল গারো পাহাড়ের স্বপ্নপটে মানস সরোবর থেকে হিমালয় ছুঁয়ে নেমে আসা ব্রহ্মপুত্র এবং ভোগাই, নিতাই, কংশ, সোমেশ্বরী, মহারশি ও মালিঝির মতো অসংখ্য জলস্রোতের হরিৎ উপত্যকায় গড়ে ওঠা। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, প্রাচীনকালে এ জনপদ কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে ‘শেরপুর পরগণা’, ‘শেরপুর সার্কেল’ ও ‘দশকাহনীয়া’ হিসেবে পরিচিতি পায় শেরপুর। তারই ধারাবাহিকতায় খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনায় দশকাহনীয়ার জায়গীরদার- দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর সফলতার সঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণকারী গাজী বংশের শেষ জমিদার কিংবদন্তীখ্যাত শাসক শেরআলী গাজীর নামানুসারে নামকরণ হয় দেশের প্রান্তিক ও সীমান্তবর্তী জেলা ‘শেরপুর’। ময়মনসিংহ বিভাগের আওতায় থাকা ছোট্ট এ জেলার আয়তন ১৩৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার এবং তার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ। ৫টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভা, ৫২টি ইউনিয়ন ও ৬৭৮টি গ্রাম সমৃদ্ধ এ জেলায় সংসদীয় আসন ৩টি। এ জেলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে কৃষি। একসময় অধিকাংশ জমি ছিল একফসলি। পরবর্তীতে অধিকাংশ জমি ২ বা ৩ ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করা হয়। যে কারণে খাদ্য উৎপাদনে অনেকটাই এগিয়ে শেরপুর। এখানকার সুগন্ধি তুলসীমালা চাল এবং সীমান্তের পাহাড়ঘেরা পর্যটন এলাকা স্থান পেয়েছে জেলা ব্র্যান্ডিং-এ। আর তার সেøাগান করা হয়েছে ‘পর্যটনের আনন্দে, তুলসীমালার সুগন্ধে’। এ জেলা যেমন সুজলা-সুফলা ও শস্য-শ্যামলায় ভরপুর, তেমনি কৃষি ও খাদ্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও অত্যন্ত সমৃদ্ধ। একইসঙ্গে ইতিহাস-ঐতিহ্যও বেশ গৌরবময়।
সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিদ্যুত সাব-স্টেশন, বিআরটিএ অফিস, পাসপোর্ট অফিস, ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, শেরপুর সরকারী কলেজ ও শেরপুর সরকারী মহিলা কলেজসহ সরকারী-বেসরকারী প্রায় ১০টি কলেজে চালু করা হয়েছে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স। শতশত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বহুতল একাডেমিক ভবন। ফলে বর্তমানে এ জেলার অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন মজবুত ও প্রশস্ত, আধুনিকায়নে গতিশীল কৃষি, খাদ্য উদ্বৃত্ত, শিল্প-বাণিজ্যে প্রসারের পাশাপাশি বিপুল সম্ভাবনায় পর্যটনকে করে তুলেছে আকর্ষণীয় ও নান্দনিক। তথ্য প্রযুক্তির দিক দিয়ে এগিয়ে যেতে জেলার ৩১টি স্কুল, ৮টি কলেজ ও ৬টি মাদ্রাসায় স্থাপন করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’। এছাড়া আরও রয়েছে ২২টি বিসিবি ল্যাব ও ৬টি আইসিটি লার্নিং ল্যাব। শহর থেকে তৃণমূলের সবখানেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। খাদ্য উদ্বৃত্ত হওয়ায় এ জেলায় ২০টি ভারি ও প্রায় ২ শতাধিক মাঝারি চাতাল শিল্প রয়েছে। সরকারের কৃষি খাদ্য ও শিল্পনীতির আওতায় সহজেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বেসরকারী তফসিলি ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় পরিচালিত ওই চাতাল শিল্প অর্থনৈতিক ভিতকে করেছে মজবুত। সেই সঙ্গে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার নারী-পুরুষ শ্রমিকের। জেলায় ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চা সহজতর করতে জেলা সদরে একটি বৃহৎ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স এবং প্রতিটি উপজেলা সদরে একটি করে মডেল মসজিদ স্থাপন করা হচ্ছে। সনাতনসহ ভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও বাস্তবায়ন করা হয়েছে বেশ কিছু প্রকল্প। নাব্যতা ফিরিয়ে এনে নৌপথ চালুর লক্ষ্যে পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শেরপুর অংশে খনন এবং অভ্যন্তরীণ খরস্রোতা নদী ও খাল খননেও চলছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা মেগা ও মাঝারি প্রকল্প বাস্তবায়ন। এছাড়া জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সন্তোষজনক হওয়ার পাশাপাশি জেলা সদরসহ ৫টি উপজেলায় প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন ও জেলাটি ইতোমধ্যে ‘বাল্যবিবাহমুক্ত’ হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিতেও শেরপুর অবদান রাখছে। শেরপুর সদরের চরপক্ষীমারী এলাকায় ৩৭০ একর জায়গাজুড়ে ‘অর্থনৈতিক জোন’ গড়ে তোলার মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে স্থাপিত হবে বিধায় গ্যাস ও বিদ্যুত সুবিধাসহ সড়কপথ, রেলপথ ও নদীপথে যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এতে সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। সেই সঙ্গে উন্নত হবে এলাকার জীবনমানের। একই সঙ্গে শেরপুরের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে আরও যোগ হবে নতুন মাত্রা।
সড়ক যোগাযোগ ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারের টানা ৩ মেয়াদের প্রায় ১৩ বছরে অন্যান্য দফতরের পাশাপাশি জেলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩শ’টি বড় ও মাঝারি ব্রিজ নির্মাণ এবং নকলা-নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থালবন্দর সড়ক উন্নয়ন ও নির্মাণে মেগা প্রকল্পসহ প্রায় ২শ’ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ওইসব প্রকল্পের মধ্যে ২৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮.৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নকলা-নালিতাবাড়ী-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়ক ২ লেনে প্রশস্তকরণ, ৮১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সীমান্ত সড়কের শেরপুর অংশ প্রশস্তকরণ, ৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বনগাঁও-নন্নী সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ ও ১১ কোটি টাকা ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০.১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শেরপুর-নকলা-ফুলপুর-ময়মনসিংহ সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দু’টি সড়ক উন্নয়নের আওতায় ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নালিতাবাড়ী-পাপিয়াঝুড়ি সড়ক উন্নয়ন, ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নকলা-শিববাড়ী সড়ক উন্নয়ন, নকলা সীমান্ত সড়কের ভোগাই নদীর ওপর ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে ভোগাই সেতু ও ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৭ মিটার দৈর্ঘ্যের বগাডুবি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৪.৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও সড়ক প্রস্তকরণ, ৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শেরপুর (আখেরমামুদের বাজার)-লঙ্গরপাড়া-শ্রীবরদী-মামদামারী জেলা সড়ক প্রশস্তকরণ, ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নকলা বাইপাস সড়ক প্রশস্তকরণ, ৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে শ্রীবরদী-ভায়াডাঙ্গা-ঝিনাইগাতী সড়ক, ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জুলগাঁও-ঝিনাইগাতী-সন্ধ্যাকুড়া সড়কসহ ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুগধা সেতু নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ (রঘুরামপুর)-ফুলপুর-নকলা-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণ কাজ, ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৪.৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ, প্রায় ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নন্দীরবাজার-ঝগড়ারচর-শ্রীবরদী-বকশীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণ কাজ, ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কানাশাখোলা-অষ্টমীতলা সংযোগ সড়ক, ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে নালিতাবাড়ী-বড়ুয়াজানি-বাঘাইতলা-হালুয়াঘাট সড়ক, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বনগাঁও-নালিতাবাড়ী সড়ক, নন্দীরবাজার কজওয়ে এলাকায় প্রায় ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি ব্রিজসহ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে শেরপুর সড়ক বিভাগের আওতায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে আরও বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
এলজিইডি ও জেলা পরিষদসহ পৌরসভা ॥ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল, জেলা পরিষদ ও প্রথম শ্রেণীর মর্যাদার ঐতিহ্যবাহী শেরপুর পৌরসভাসহ ৪টি পৌরসভার অধীনে এ সরকারের টানা প্রায় ১৩ বছরে সড়ক উন্নয়ন ও সেতু খাতে আরও ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এলজিইডির অধীনে ১২ বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১ হাজার ৩২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন, ৩ হাজার ৪১০ মিটার সেতু নির্মাণ, ২৬৭টি কমপ্লেক্স/একাডেমিক ভবন নির্মাণ এবং ৬ হাজার হেক্টর জমির পানি সম্পদ উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলায় বর্তমানে ৩শ’ কিলোমিটার সড়ক, ৪১০ মিটার সেতু/কালভার্টসহ ২২টি কমপ্লেক্স/একাডেমিক ভবন ও ১০টি হাটবাজার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণাধীন রয়েছে। এলজিইডির তথ্যমতে, জেলায় ৬৪০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন এবং ৩৯২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলায় ১৭২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক নির্মাণাধীন ও ৭০ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণাধীন রয়েছে। এক দশকে জেলায় ৩ হাজার ৪১০ মিটার সেতু/কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বর্তমানে জেলায় ৪১০ মিটার সেতু/কালভার্ট নির্মাণাধীন রয়েছে। একই সময়ে জেলায় ৩টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ২৯টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স, ৭টি হাট-বাজার ও ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে জেলায় একটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, ২টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ও ১০টি হাট-বাজার নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন ও নলজোড়া বাজার শেড নির্মাণ। একই সময়ে জেলায় ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ৪টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এবং ৫২টি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নকলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও সূর্যদী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ।
গণপূর্ত বিভাগ ॥ সরকারের টানা ৩ মেয়াদের চলমান সময়কালে গণপূর্ত বিভাগের আওতায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ তলা ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতাল ভবন নির্মাণসহ প্রায় ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫০টি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য ॥ বর্তমান সরকারের চলমান সময়কালে জেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আওতায় ৯২.৩৬ ভাগ নিরাপদ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প ॥ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ ও ২ এর আওতায় শেরপুরের ৫টি উপজেলায় পৃথক পৃথক আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা ঘর পেয়েছেন ৪৫৮ পরিবার। ওইসব পরিবারকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নানা সহায়তায় আত্মস্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চলছে। প্রায় ৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নালিতাবাড়ীর সীমান্তবর্তী সোহাগপুর বিধবাপল্লীর ২৯ জন বিধবাকে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটি করে পাকাবাড়ির আবাসনে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
পর্যটন ॥ শেরপুরের সীমান্তবর্তী ৩টি উপজেলা নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী গারো পাহাড় অধ্যুষিত হওয়ায় খোদ ওই বৃহৎ এলাকাটিই গড়ে উঠেছে অঘোষিত পর্যটন এলাকা হিসেবে। এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রয়াসে নানা শৈল্পিক সংযোজনে আকর্ষণীয় ও নান্দনিক করে গড়ে তোলায় ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ ও নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্ক আধুনিক ভ্রমণপিপাসু/পর্যটকদের অনন্য এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গজনীতে ইতোমধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাদুঘর।
নাকুগাঁও স্থলবন্দর ॥ নালিতাবাড়ীর নাকুগাঁও স্থলবন্দরটিকে আধুনিক ও পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে নকলা বাইপাস সড়ক থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি ২ লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি আমদানি-রফতানি অফিসসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে মাঝখানে দীর্ঘদিন স্থবির হয়ে থাকলেও এখন ক্রমেই তা সচল হয়ে উঠছে। দিনদিন বাড়ছে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রফতানি। সেইসঙ্গে বাড়ছে রাজস্ব আয়। কর্মসংস্থান হচ্ছে শতশত শ্রমজীবী মানুষের। অন্যদিকে এ বন্দর হয়ে বাংলা-ভুটান ও নেপালের সঙ্গে ট্রানজিট বা সড়ক যোগাযোগ সহজতর করতেও আন্তঃদেশীয় তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়াম ॥ ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে শেরপুর জেলা সদরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামকে আধুনিকায়ন এবং নকলা, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতীতে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ-সংস্কারের পাশাপাশি শ্রীবরদীতে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্টেডিয়ামটিকে ২০ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতার অত্যাধুনিক জেলা স্টেডিয়াম হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এতে রয়েছে আধুনিক ইনডোর স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম ও মিডিয়া সেন্টার।
সরকারের টানা ৩ মেয়াদে শেরপুরে উন্নয়ন প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ভিশন-২০২১ ও ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের আওতায় এ জেলায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়িত হয়েছে। যে কারণে সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রায় এ প্রান্তিক জেলাও এখন পিছিয়ে নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা হবে’- সরকারের এ নীতিগত সিদ্ধান্তের আলোকেই আশা করছি সেগুলোর দ্রুত সমাধান হবে। এছাড়া রেলপথ সম্প্রসারণের প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন বলেই আমরা জানি। এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মোমিনুর রশীদ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় দেশ ‘অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’য় এগিয়ে যাচ্ছে। তারই আওতায় প্রান্তিক জেলা শেরপুরেও কৃষিতে আধুনিকায়ন ও বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ এবং সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী বিস্তৃত করার পাশাপাশি পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, সড়ক যোগাযোগ ও সেতু, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হয়েছে।