রহিম শেখ ॥ বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) পদ্ধতির ব্যবসার নাম করে দেশে একযুগ ধরে ব্যবসা করেছে ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা সুকৌশলে জনগণের কাছ থেকে ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা আত্মসাত করেন। এর মধ্যে ৯৬ কোটি টাকা পাচারও করেন তারা। ২০১২ সালে ডেসটিনি বন্ধ হলেও প্রতিষ্ঠানটির ৪৫ লাখ গ্রাহকের কেউই এ পর্যন্ত কোন টাকা ফেরত পাননি। ডেসটিনির আদলে পরবর্তী সময়ে যুবক, ইউনি পে টুসহ একের পর এক এমএলএম কোম্পানি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে ২০০৬ সালে যুবক ২ হাজার ৬০০ কোটি, ২০১১ সালে ইউনিপে টু ইউ ৬ হাজার কোটি আত্মসাত করে উধাও হয়ে যায়। তবুও থেমে থাকেনি এই পদ্ধতিতে প্রতারণা। এখন বদলেছে প্রতারণার ধরন। অনেক প্রতারণামূলক স্কিমে অর্থ বিনিয়োগ করে পুঁজি খুইয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। হালের আলোচিত ই-কমার্স ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, এসপিসি ওয়ার্ল্ড, নিরাপদডটকমসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাহকদের অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকা। শুধু গ্রাহকই নয়, মার্চেন্টদের থেকে পণ্য এনে সেই টাকাও পরিশোধ করেনি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। অভিযোগ উঠেছে অর্থপাচারেরও। এছাড়া রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সমবায় সমিতির নামে দ্বিগুণ মুনাফার কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে উধাও হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৯ সময়ে ২৬৬টি সমবায় সমিতির গ্রাহকদের ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, যুবকের ঘটনায় গঠন করা কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত, সমবায় অধিদফতর ও গ্রাহকদের দেয়া তথ্যমতে, গত দেড় দশকে অন্তত তিন শতাধিক কোম্পানি গ্রাহকের ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। এসব ঘটনায় বহু মামলা হয়েছে। কোন কোন ঘটনায় আসামিরা আত্মগোপন করেছেন। কোন কোন মামলায় আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে কারাবাসও করছেন। কিন্তু গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাননি। কবে নাগাদ কষ্টের জমানো টাকা পাবেন তাও কেউ জানেনা।
জানা গেছে, অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের টাকা লুটের সবচেয়ে বড় দুটি উদাহরণ ডেসটিনি ও যুবক। এ দুটি প্রতিষ্ঠান সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ৬ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে দেখেছে, উচ্চহারে মুনাফার লোভ দেখিয়ে এমএলএম (বহু স্তরের বিপণন) ব্যবসা পদ্ধতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন গ্রুপের পরিচালকরা। ওইসব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন পর্যন্ত ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (ডিএমসিএসএল) সাড়ে আট লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। এ সময় ঋণ প্রদান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি ২৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। সেই অর্থ থেকেই আসামিরা লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সরিয়ে নেন। ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) জন্য ২ হাজার ৩৩৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ অর্থ থেকে ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি বা যুবক। রাজধানীর শাহবাগে আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেটে কয়েকটি দোকান ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করে যুবক। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ সুদের বিনিময়ে আমানত সংগ্রহ ও ঋণদান কর্মসূচী চালু করে। ২০০৫ সালে যুবকের প্রতারণামূলক কার্যক্রম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তদন্তে নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবৈধ ব্যাংকিংয়ের অভিযোগে তখন যুবকের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ টাকা গ্রাহকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়, নাকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, তা নিয়ে কেটে যায় কয়েক বছর। এ দীর্ঘ সময়েও যুবকের তিন লাখ চার হাজার গ্রাহক তাদের পাওনা ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ফেরত পাননি। তাদেরই একজন ছিলেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের একটি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক দীপক দত্ত। ৯ বছর আগে প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। শিক্ষক দীপক দত্ত নিজের সম্বলের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে যুবককে দিয়েছিলেন মোট ২৬ লাখ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাওনা টাকার জন্য দীপক দত্তের স্বজন ও পরিচিতরা প্রতিদিনই তার বাড়িতে এসে চেঁচামেচি করতেন। সহ্য করতে না পেরে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। এরপর পাওনাদারদের চাপে একসময় দীপকের স্ত্রী এলাকা ছাড়েন। আর তার কোন খোঁজ নেই।
কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপেটুইউতে ১০ মাসে দ্বিগুণ লাভের আশায় ৬ লাখ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করা ৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১১ সালের ইউনিপেটুইউর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাত ও পাচারের অভিযোগে মামলা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির ওপর তদন্ত করেও এসব তথ্যের প্রমাণ পায়। এ টাকা ফেরত পেতে বিনিয়োগকারীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে হয়রান। টাকা ফেরত দিতে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই। আবার, কিছু গ্রাহক এমএলএম প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের মামলা করলেও তা বছরের পর বছর ঝুলছে।
অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে ২০১৩ সালে প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আইসিএল গ্রুপ। পরবর্তীকালে নামসর্বস্ব ১৩টি প্রতিষ্ঠান ফেলে উধাও হয়ে যায় গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমানসহ পরিচালকরা। যদিও পরে গ্রুপটির মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী আইসিএল গ্রুপের পরিচালক কাজী সামসুন নাহার মিনা র্যাবের হাতে আটক হন। তবে এখনও প্রতারিত গ্রাহকরা টাকা ফিরে পাননি।
সমবায় অধিদফতরের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০০৮ সাল থেকে ওই বছর পর্যন্ত ২৬৬টি সমবায় সমিতি প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। সমবায় অধিদফতরের যুগ্ম নিবন্ধক (অডিট ও আইন) নবীরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ২০১৭ সালের পরে সমন্বিত আর কোন প্রতিবেদন করা হয়নি। নানা অভিযোগে সমবায় অধিদফতর থেকে নিবন্ধন নেয়া তিন শতাধিক সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। তিনি বলেন, ২৬৬ সমিতির বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করে সমবায় অধিদফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। সমবায় অধিদফতর জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাননি। বেরিয়ে আসছে আরও ঘটনা। গত ১০ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান রাগীব আহসানকে গ্রেফতার করে র্যাব। এহসান গ্রুপ গ্রাহক ও সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে ১১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
জানা যায়, ই-কমার্স কেলেঙ্কারির সব কিছুই হয়েছে প্রকাশ্যে, ডিজিটাল মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েবসাইট খুলে গ্রাহককে বিশাল ছাড়ে পণ্য দেয়ার লোভ দেখিয়েছে। লেনদেন করেছে ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বড় ছাড়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনে আবার বিক্রি করতেন মিরপুরের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। এই ‘রি-সেলিং’ বা পুনঃ বিক্রির ব্যবসায় সর্বশেষ তার বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছিল এক কোটি টাকা, যা এখন আর ফেরত পাচ্ছেন না তিনি। আমিনুল পাঁচটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনতে টাকা জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে দুটির মালিক প্রতারণার মামলায় কারাগারে। একটির মালিক বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দুটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এখন নিঃস্ব। টাকা ফেরত না পেলে আমার পরিবারের কী হবে, সেই দুশ্চিন্তায় দুই মাস ধরে রাতে ঘুমাতে পারি না।’
এমন সব প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বর্তমানে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, কিউকম, এসপিসি ওয়ার্ল্ড, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, দালাল, সিরাজগঞ্জ শপ, নিরাপদ ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, এসকে ট্রেডার্স, প্রিয়শপ, ২৪টিকেট ডট কম, গ্রিনবাংলা, এক্সিলেন্টবিগবাজার, ফাল্গুনিশপসহ প্রায় ২৬টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক, পুলিশ, র্যাব, সিআইডিসহ সরকারের অন্তত নয়টি সংস্থা। জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম) মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা এসপিসি ওয়ার্ল্ড ও ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য পেয়ে মামলা করেছি। তিনি বলেন, আইনানুযায়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ছাড়া কেউ টাকা স্থানান্তর করতে পারে না।’
সিআইডি সূত্রমতে, ধামাকা শপিং গ্রাহকের ৫৯৮ কোটি টাকা নিয়ে পলাতক রয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১১৭ কোটি টাকা পাচারের ‘প্রমাণও পেয়েছে’ সিআইডি। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমডি জসিম উদ্দিন চিশতিসহ তার স্ত্রী ও তিন সন্তান ও ধামাকা শপিংয়ের এক পরিচালক এবং চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারা। ই-অরেঞ্জ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ প্রতারণামূলকভাবে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের কয়েকজন গ্রেফতারের পর এখন কারাগারে। আরেক মালিক পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা ভারতে আটক হয়েছেন। বিভিন্ন ছাড়ে পণ্য কিনতে এ প্রতিষ্ঠানে যারা টাকা দিয়েছিলেন তারা এখন চিন্তায় আছেন আদৌ টাকা ফেরত পাবেন কিনা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয় সময়ের আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে। চটকদার ছাড়ের মাধ্যমে সারাদেশে বিপুল পরিমাণ গ্রাহক তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। তবে দীর্ঘদিন ধরেই গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে পারছিল না তারা। র্যাব বলছে, ইভ্যালি অন্তত ১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। এদিকে গ্রাহক অর্থ পরিশোধ করলেও পণ্য না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রিয়শপ ডট কমের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) দফতরে জমা পড়েছে অসংখ্য অভিযোগ। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নিয়ে ছায়া তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে ই-কমার্সের নামে যাত্রা শুরু করে এমএলএম কোম্পানি এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আল আমিন প্রধানের নেতৃত্বে অন্য সহযোগীরা গত বছরের জানুয়ারি থেকে নবেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১১ মাসে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব প্রতিষ্ঠানই নয়, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোয় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা ধরনের ই-কমার্স ও এমএলএম কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের লাভের লোভ দেখিয়ে আকৃষ্ট করে অর্থ আত্মসাত করে আসছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, যারা গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের আইনী প্রক্রিয়ায় জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। দেশের আইনী কাঠামো যথেষ্ট শক্তিশালী। তিনি বলেন, আইনে সুযোগ থাকলেও দেশে তার প্রয়োগ নেই। যে কারণে গ্রাহকেরা কখনই টাকা ফেরত পান না। ই-কমার্সের নামে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে আজকের দুঃখজনক পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
দীর্ঘদিনেও মামলা নিষ্পত্তি হয়নি ॥ ২০১২ সালে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ উঠলে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। তবে ২০১২ সাল থেকে রফিকুল আমীন কারাগারে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেসটিনি প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে পাঁচ হাজার কোটির বেশি টাকা সংগ্রহ করে। ডেসটিনির বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়কারী মোশারফ হোসেন দাবি করেন, ডেসটিনির সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকার। এত সম্পদ থাকার পরও যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়া যাচ্ছে না। ২০১৪ সালে যুবকের চেয়ারম্যান আবু মোহাম্মদ সাঈদসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পুলিশ মামলা করে। মামলাটি পরে দুদকে যায়। এখন মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছে সিআইডি। যদিও তদন্ত শেষ হয়নি। অভিযোগপত্রও দেয়া হয়নি। আসামিদের সবাই জামিনে রয়েছেন। ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে ইউনিপে টু ইউ ১০ মাসে দ্বিগুণ লাভের লোভ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করে। আমানতকারীরা জানিয়েছেন, ইউনিপে টু ইউতে মোট ছয় লাখ বিনিয়োগকারী ছয় হাজার কোটি টাকা জমা রেখেছিলেন। কেউ টাকা ফেরত পাননি। তবে দুদকের মামলায় ইউনিপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মুনতাসির হোসেনসহ ছয়জনের সাজা হয়েছে। মুনতাসির এখন কারাগারে।