ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

জিআই পণ্য বিজয়পুরের সাদামাটি

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২৩ জুন ২০২১

জিআই পণ্য বিজয়পুরের সাদামাটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নেত্রকোনা, ২২ জুন ॥ দুর্গাপুরের ‘বিজয়পুরের সাদামাটি’ ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশান প্রোডাক্ট বা জিআই পণ্য) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদফতরের (ডিপিডিটি) ভৌগোলিক পণ্য ইউনিট আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস্ অর্গানাইজেশনের নিয়ম মেনে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। অধিদফতরের রেজিস্ট্রার মোঃ আবদুস সাত্তার গত ১৭ জুন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের অনুক‚লে এ সংক্রান্ত নিবন্ধন সনদ ইস্যু করেন। এর আগে ২০১৭ সালে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অত্যন্ত মূল্যবান ও দুর্লভ খনিজ সম্পদ হিসেবে পরিচিত বিজয়পুরের সাদামাটিকে ভৌগোলিক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ডিপিডিটিতে আবেদন করেন। অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর চলতি বছর পণ্যটির স্বীকৃতি মেলে। গত ১৭ জুন নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুহেল মাহমুদ ডিপিডিটি কার্যালয় থেকে নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করেন। জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান বলেন, জিআই পণ্য হিসেবে বিজয়পুরের সাদামাটির স্বীকৃতি আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। এই সাদামাটি এখন সারাবিশে^ বাংলাদেশের একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের পণ্য হিসেবে পরিচিতি পাবে। আর এর মধ্য দিয়ে নেত্রকোনারও একটি আলাদা পরিচিতি গড়ে উঠবে। জানা গেছে, বিজয়পুরের সাদামাটি অত্যন্ত মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য একটি খনিজ সম্পদ। সাধারণত সিরামিকের তৈজসপত্র, টাইলস্, স্যানিটারি ওয়্যার ও গøাস তৈরির ক্ষেত্রে এ মাটি ব্যবহৃত হয়। উৎকৃষ্ট মানের এ মাটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি প্রাকৃতিকভাবেই কেওলিন বা এ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ। অনেকে এটিকে চিনামাটিও (চায়না ক্লে) বলে থাকেন। দুর্গাপুরের ভারত সীমান্ত সংলগ্ন কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিজয়পুর এলাকায় এ মাটির খনি অবস্থিত। এদিকে বিজয়পুরের সাদামাটি খনিজ প্রকল্প এলাকাটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবেও পরিচিত। পাহাড়ী টিলা কেটে অনেক গভীর স্তর থেকে এ সাদামাটি তোলা হতো। সাদামাটির পাশাপাশি সেখানে কালো, খয়েরি, বেগুনি ও নীলসহ আরও কয়েক রঙের মাটির স্তর রয়েছে। বর্তমানে খনন কাজ বন্ধ থাকলেও আগে খনন করা এলাকাগুলোতে গেলে নানা রঙের মাটির স্তর এখনও সুস্পষ্ট দেখা যায়Ñ যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। আর খনন করা এলাকাগুলো পরিণত হয়েছে নীল পানির লেকে। লেকগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুদৃশ্য। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সূত্র আরও জানায়, কোন একটি দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া এবং ওই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোন একটি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই পণ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। জিআই পণ্য একটি দেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে সারাবিশে^ পরিচিতি পায়। এর ফলে পণ্যটিকে বিশ^ব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়। এই পণ্যগুলোর বিশেষ কদর থাকে। ওই দেশ বা অঞ্চল পণ্যটিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করার আইনী অধিকার রাখে।
×