মোরসালিন মিজান ॥ আগে করোনার কথা বলি। হ্যাঁ, ফুলের কথায়ও করোনাকে টানতে হচ্ছে। না টেনে উপায় কী? সংক্রমণ ব্যাধি সেই যে শুরু হয়েছিল আজও একইরকম চোখ রাঙিয়ে চলেছে। এরই মাঝে তছনছ হয়ে গেছে কত কিছু! রং হারিয়েছে জীবন। তাই বলে হতাশ হলে চলবে না। ছন্দে ফিরতে হবে। রং রূপে জেগে উঠতে হবে আবার। প্রিয় ফুল সোনালু যেন সে কথাই বলছে। এ ফুল শুধু তো ফুল নয়, কাঁচা-হলুদ রঙের ফোয়ারা। দেখেছেন তো চোখ মেলে?
বাইরে বের হওয়া বারণ। জানালা খুলে দিন। দেখুন। ওপর থেকে নিচের দিকে ঝুলতে থাকা ফুলের মঞ্জরি দুঃখ হতাশা কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে। বেঁচে থাকার অদ্ভুত এক শক্তি, দিব্যি দিয়ে বলছি, এই এখান থেকেই পেতে পারেন আপনি।
সোনালু গ্রীষ্মের খুবই উল্লেখযোগ্য ফুল। বৈশাখে ফুটে। ফুটে মানে, ফোটা এ সময় শুরু হয়। বর্তমানে পরিপূর্ণ রূপে ধরা দিয়েছে। সারাদেশেই কম বেশি দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে, সরকারী-বেসরকারী ভবনের সামনে উঁচু গাছ। ছড়িয়ে থাকা ডালপালা। তবে গাছ বা ডালপালা দেখা যায় না। ফুল আর ফুল!
সোনালু ফুলের গাছ আম জাম গাছের মতোই উঁচু। ডাল পালা চারপাশে ছড়ানো থাকে। বিশেষ চেনা যায় ফুল ফোটার মৌসুমে। কাছ থেকে দেখলে পাপড়ির রং কাঁচা হলুদের মতো দেখায়। ঘন ফুলে ভর্তি গাছ দেখে মনে হয় কেউ বুঝি হলুদ রঙের কৌটা উপুর করে দিয়েছে! গ্রীষ্মের প্রখর রোদ ফুলের গায়ে পড়লে রংটি সোনালি মনে হয়। এর ইংরেজী নাম গোল্ডেন শাওয়ার। গাছের ওপর থেকে নিচের দিকে নেমে আসা সোনালু ফুলের মঞ্জরিকে একসঙ্গে শাওয়ারের জলধারার মতোই দেখায়। এ কারণে গোল্ডেন শাওয়ার নাম। অবশ্য বৈজ্ঞানিক নামের বেলায় এর ফল প্রাধান্য পেয়েছে। সে অনুযায়ী নামটিÑ কেসায়্যা ফিস্টুলা। এটি গ্রীক ভাষা থেকে নেয়া। ফিস্টুলা শব্দের অর্থ বাঁশি। বাঁশির মতো লম্বা ফলের জন্য এমন নামকরণ।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, সোনালু গাছ ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাকল পুরো এবং মসৃণ। ফাল্গুনে ব্যাপকহারে পাতা ঝরে। চৈত্রে পাতাহীন শুকনো কাঠির মতো গাছ হয়। প্রাণহীন দেখায়। সোনালু ফুলের পাঁচটি পাপড়ি। দশটি পুংকেশর। ভেতরে সবুজ রঙের তিনটি গর্ভকেশর দৃশ্যমান। এগুলো অর্ধচন্দ্র আকৃতির।
সোনালু বাংলাদেশে এসেছে পূর্ব ভারত থেকে। একে ‘বানরলাঠি’ বলেও ডাকা হয়! সোনালুর ফল ও গাছের পাতা বানরের প্রিয় খাবার। এ কারণেও একে ‘বানরলাঠি’ বলা হয়ে থাকে। সোনালুর ফলগুলো এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ দেখতে হয়। পাকলে কালচে লাল।
সোনালুর কিছু ঔষধিগুণও বিদ্যমান। ছাল, পাতা ও ফলের মজ্জা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার ও ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে আসে। এ ছাড়া ডিপথেরিয়া গ-মালা, কুষ্ঠরোগের ক্ষত চিকিৎসায় কার্যকর। ফলের মজ্জা হজমের সমস্যায় উপকারী।
তবে সোনালুর ফুলের সৌন্দর্যটাই মূল। এ কি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে...। সোনালুর রঙে ভরে উঠুক জীবন। রঙিন হয়ে উঠুক।