ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মামুনুল গ্রেফতার ॥ মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসায় যৌথ অভিযান

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৯ এপ্রিল ২০২১

মামুনুল গ্রেফতার ॥ মোহাম্মদপুরের মাদ্রাসায় যৌথ অভিযান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে অবশেষে রবিবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে। তেজগাঁও ডিসি কার্যালয় থেকে মিন্টো রোডের ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সোমবার তাকে আদালতে তুলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা একটি মামলায় মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, একাধিক সহিংস তান্ডব ও কথিত (দুই স্ত্রী) নারী কেলেঙ্কারির মামলা, জেনারেল ডায়েরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে বিতর্কিত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও তেজগাঁও পুলিশের যৌথ অভিযানে। মামুনুল হককে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে দুপুর ১টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত টানা তিনদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংস তা-ব চালানোর নেতৃত্ব দেন মামুনুল হক। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে কথিত প্রথম স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে নিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েন। এই ঘটনায় ঝর্ণার প্রথম স্বামীর ঘরের বড় ছেলে আবদুর রহমান জামি পল্টন থানায় জিডি করেন। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই তার দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌস লিপির সন্ধান পাওয়া যায়। লিপি নিখোঁজ রয়েছে এই মর্মে তার ভাই মোঃ শাজাহান থানায় জিডি করেন। রাজধানীর পল্টন থানা ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় দুটি মামলা হয়েছে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে। এছাড়া, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বর তা-বের ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানাধীন রয়েল রিসোর্টে নারীসঙ্গিনী কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণাসহ স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হওয়ার পর ছাড়া পেয়ে রাতেই ঢাকায় চলে আসেন তিনি। ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাদিরাবাদ হাউজিংয়ের নিজ বাসায় না গিয়ে তিনি পাশেই জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় যান। সেখানেই অবস্থান করছিলেন। মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করতে পারে- এ কারণে পাশেই নিজের বাসা হলেও তিনি সেখানে যাচ্ছিলেন না। পরে অবস্থান নিশ্চিতের পর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। গ্রেফতারের পর মামুনুলকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যেভাবে গ্রেফতার হলেন মামুনুল হক ॥ নারায়ণগঞ্জের সোনারাগাঁও রয়েল রিসোর্টে নারীসঙ্গিনীসহ জনতার হাতে অবরুদ্ধ হয়ে মুক্ত হওয়ার পর ঢাকায় চলে আসেন মামুনুল হক। এই ঘটনা গত ৩ এপ্রিলের। ঢাকায় এসে নিজ বাড়িতে না উঠে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছিলেন হেফাজত নেতা। মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে থাকতেন তিনি। প্রথমদিকে দুই/একবার বের হয়ে দলীয় মিটিংয়ে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে পরে আর মাদ্রাসা থেকে বের হননি। মাদ্রাসায় অবস্থান করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন তিনি। তবে সর্বশেষ লাইভে এসে দ্বিতীয় বিয়ের দাবির সপক্ষে স্ত্রীর কাছে সত্য গোপন করার অবকাশ রয়েছে এমন বক্তব্য দিয়ে নিজ দলের আলেম-ওলামাদের কাছে সমালোচনার শিকার হন তিনি। পরে চাপের মুখে সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ডিলিটও করে দেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা অপেক্ষায় ছিলেন মামুনুল হকের মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার। সর্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই রাখা হয়েছিল তাকে। এরমধ্যে হেফাজতের মধ্যম সারির একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। যাতে মামুনুল হক গ্রেফতার হলে কেউ মাঠে নেমে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে। পুলিশ সূত্র জানান, মামুনুল হকের মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার অপেক্ষা করলেও রবিবার, ১৮ এপ্রিল তাকে মাদ্রাসা থেকেই গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উর্ধতন কর্মকর্তারা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে মাদ্রাসায় কত শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় মামুনুল হকের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপরই পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ কর্মকর্তাসহ গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিম তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালান। অভিযানে অংশ নেয়া গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, মাদ্রাসার গেটে সর্বক্ষণিক পাহারা বসিয়েছিলেন মামুনুল হক। পুলিশের শতাধিক ফোর্স নিয়ে তারা মাদ্রাসায় গেলে প্রথমদিকে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অভিযানের মুখে পিছু হটেন তারা। পরে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় মামুনুল হকের কক্ষে গিয়ে তাকে পুলিশের সঙ্গে যেতে বলেন। তিনি নিজেও বুঝতে পারেন বাধা দিয়ে কোন লাভ হবে না। তাই স্বেচ্ছায় হেঁটে গাড়িতে ওঠেন তিনি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, মামুনুল হক ২০১৩ সালের সহিংসতা এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায়ও নিজে সম্পৃক্ত ও উসকানি দিয়েছেন। তাকে প্রথমে পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার (১৯ এপ্রিল) আদালতে পাঠানো হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মোদিবিরোধী বিক্ষোভের পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে একাধিক মামলা করলেও তাতে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের নাম ছিল না। তবে ৩ এপ্রিল এক নারীসঙ্গীসহ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে স্থানীয় জনতার হাতে আটক হওয়ার পর হেফাজতকে কোণঠাসা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপরই রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন থানায় নতুন করে হওয়া একাধিক মামলায় মামুনুল হকসহ হেফাজতের একাধিক শীর্ষ নেতাকে আসামি করা হয়। গ্রেফতারের সময় তর্জনগর্জন নেই মামুনুলের ॥ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতারে কোন বেগ পেতে হয়নি পুলিশ সদস্যদের। স্বাভাবিকভাবেই মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কোন তর্জনগর্জন ছিল না। দীর্ঘ নজরদারি শেষে মামুনুলকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্তের পর গত ১৭ এপ্রিল রাত থেকেই ওই মাদ্রাসার আশপাশে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন অবস্থান নেন। সকালের দিকে মাদ্রাসা এলাকায় বাড়ানো হয় পুলিশ সদস্যের সংখ্যাও। প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই মামুনুলকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসা হয়। মামুনুলকে গ্রফতারে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর-রশীদসহ কয়েকজন মাদ্রাসার ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে মামুনুল হককে বলা হয়, আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। পরে মামুনুল হক স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসেন। তবে এসময় মামুনুলের হাতে হাতকড়া পরানো হয়নি। তার সঙ্গে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষককে হেঁটে আসতে দেখা যায়। এসময় মামুনুল স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যান। মাদ্রাসা থেকে বের হওয়ার পর একটি গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ডিসি হারুনের কার্যালয়ে। বের হওয়া ও গাড়িতে তোলার সময় হেফাজত কিংবা মাদ্রাসার কেউই মামুনুলের গ্রেফতারে বাধা দেয়নি। তবে মামুনুলকে গাড়িতে তোলার পর কয়েকজনকে স্লোগান দিতে দেখা যায়। হেফাজতের ৮ নেতা গ্রেফতার ॥ মামুনুল হককে গ্রেফতারের আগে হেফাজতের ৮ কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত ১১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহসভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহ, ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি ও কেন্দ্রীয় নেতা সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) মাওলানা যুবায়ের আহমেদ ও শনিবার (১৭ এপ্রিল) মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ নামে হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রমাণসাপেক্ষেই গ্রেফতার মামুনুল, ছিলেন নজরদারিতে ॥ তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, প্রমাণ সাপেক্ষেই মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের আগে নজরদারিতে ছিলেন তিনি। বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় তদন্ত সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণের ভিত্তিতেই হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার, ১৮ এপ্রিল দুপুর ২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা জানান তিনি। তিনি বলেন, ২০২০ সালে মোহাম্মদপুর থানায় হামলা ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় মামুনুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। আমরা মামলাটি তদন্ত করছিলাম, তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হারুন অর রশীদ বলেন, মামুনুলের বিরুদ্ধে সারাদেশে পুলিশের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা, থানায় হামলা, রেজিস্ট্রার অফিসে হামলা ভাংচুরসহ অনেক মামলা রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছিল, পাশাপাশি আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাকে নজরদারিতে রেখেছিলাম। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, মামুনুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার (১৯ এপ্রিল) আদালতে সোপর্দ করা হবে। তার রিমান্ড চাওয়ার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নাশকতাসহ একাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে মামুনুলকে ॥ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন-অর-রশিদ। আপাতত তাকে মোহাম্মদপুর থানায় ২০২০ সালের হামলা-ভাংচুরের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি ঘটা কয়েকটি নাশকতার মামলা এবং রিসোর্টকা-ে দায়ের করা মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাশকতায় প্রাণহানি ও ঢাকার পল্টন থানায় হামলাসহ বেশকিছু নাশকতার ঘটনায় তদন্ত চলার পাশাপাশি মামুনুলের ওপর নজরদারি করা হচ্ছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশ যৌথভাবে নজরদারি করে মামুনুলকে গ্রেফতার করেছে। তাকে ডিবি কার্যালয় আনা হয়েছে। এরপর কোন্ কোন্ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে এবং রিমান্ড চাওয়া হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ডিবির সূত্রগুলো জানায়, মামুনুলকে একাধিক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হবে। মামুনুল হকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা ॥ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের সময়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ৫ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপদফতর সম্পাদক খন্দকার আরিফ-উজ-জামান বাদী হয়ে পল্টন থানায় মামলাটি (নম্বর-৮) দায়ের করেন। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাদী নিজে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন। মামুনুল হকের সরাসরি নির্দেশনায় অন্যান্য আসামিরা এই হামলা চালায় বলে এতে উল্লেখ করা হয়। মামলার বাকি আসামিরা হলেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব নাসির উদ্দিন মনির, নায়েবে আমির মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নায়েবে আমির মাজেদুর রহমান, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জসিম উদ্দিন, টঙ্গীর সহ-সাংগঠনিক মাওলানা মাসুদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী, মাওলানা ফয়সাল আহমেদ, সহকারী দাওয়া সম্পাদক মাওলানা মুশতাকুন্নবী, ছাত্র ও যুব সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মোঃ জোবায়ের ও দফতর সম্পাদক মাওলানা হাফেজ মোঃ তৈয়ব। সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে ॥ গত ৩ এপ্রিল, নারায়ণনগঞ্জের সোনারাগাঁও রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারীসঙ্গিনীসহ ঘেরাও হয়েছিলেন। একজন নারীসহ রিসোর্টটিতে অবস্থানের খবর পেয়ে স্থানীয় কিছু লোকজন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার কক্ষটি ঘেরাও করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রয়েল রিসোর্টের রেজিস্টারে নারীসঙ্গীর নাম লিখিয়েছেন, স্ত্রীর নাম আমিনা তৈয়বা। অথচ তার সঙ্গে আমিনা তৈয়বা ছিলেন না। তার সঙ্গে ছিলেন জান্নাত আরা ঝর্ণা। অথচ জান্নাত আরা ঝর্ণার নাম লেখেননি। কেন নারীসঙ্গীর নাম লিখলেন না? কেন তার আগের স্ত্রীর নাম লিখলেন? এসবও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে মামুনুলকে। মামুনুল হক বলেছেন, এটা তার দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবকাশযাপনে গেলে কিছু লোক তাকে নাজেহাল করে। সোনারগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তবিদুর রহমান বলেন, মামুনুল হক একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে উঠেছেন, এই খবর পেয়ে এলাকার লোকজন ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী তার কক্ষটি ঘিরে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সেখানে রয়েছেন। পুলিশ সুপারসহ উর্র্ধতন কর্মকর্তারাও এসেছেন। মামুনুলকে ঘেরাওয়ের খবরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ‘রয়েল রিসোর্ট’ নামে ওই অবকাশ যাপনকেন্দ্রটিতে যান। মাঠে নামার সাহস হারিয়েছে হেফাজত ॥ চট্টগ্রাম থেকে মোয়াজ্জেমুল হক জানান, ধর্মীয় সুড়সুড়ি ও রগরগে, উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে হেফাজত নামের অরাজনৈতিক ঘোষিত সংগঠনটি শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উয়ে উঠেছিল রীতিমতো বিষধর সর্পতুল্য। এ সাপ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ছোবলও মেরেছে দফায় দফায়। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে সরকারী-বেসরকারী সহায় সম্পদ। ঝরে গেছে কিছু প্রাণ। সরকার নানাভাবে পর্যবেক্ষণ শেষে এখন এসব জঙ্গীবাদী নীতি আদর্শে উদ্বুদ্ধদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে কঠোর এ্যাকশন। এই এ্যাকশনে সর্বশেষ রবিবার গ্রেফতার হলেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত, নারায়ণগঞ্জে রিসোর্ট কান্ডের নায়ক হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। তার আগে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী উস্কানিমূলক বক্তব্য ও নাশকতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের এসব ঘটনা নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি সংগঠনটির অভ্যন্তরে কেউ খুশি, আবার কেউ নাখোশও বটে। মাঠে নামার সাহস হারিয়ে এরা এখন পলায়ণপর মনোবৃত্তিতে রয়েছে। মূলত কওমি সমর্থকদের সমর্থনে গড়া অরাজনৈতিক হেফাজত নামের এই সংগঠনটি মূলত জামায়াতী স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছিল। পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে এদের বিভিন্ন কর্মকান্ড যে অনৈইসলামিক তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। কওমিদের যারা সমর্থন করে না এমন বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যানারের সংগঠন সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছে, হেফাজতীরা যা করছে তাতে ইসলামের কোন সমর্থন নেই। এছাড়া মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টে পরকীয়ায় জনতার হাতে আটক হওয়ার পর ‘আল্লাহর কসম’ খেয়ে যেসব বক্তব্য রেখেছেন তাতে তার আকিদা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কওমিরা ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বর সমাবেশ ঘটিয়ে সরকার পতনের অলিক স্বপ্ন দেখেছিল। বিএনপির সরাসরি সমর্থনে এরা ক্ষমতা গেলে পদ-পদবিও বণ্টনের নীলনক্সা রচনা করেছিল। কিন্তু এক রাতেই সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও কওমিরা থেমে থামেনি। হেফাজত নেতাদের ক্ষমতায় যাওয়ার দুঃস্বপ্ন ও অতিমাত্রার লালসার কারণে তারা ধর্মকে ব্যানারে এনে ব্যবহার অব্যাহত রাখে। দেশজুড়ে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্রদেরকে মিথ্যার আবরণে ঢেকে ফেলে তারা মাঠে নামাতে সমর্থ হয়। গত ২৬-২৮ মার্চ চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী কায়দায় জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আঘাত করার যে দুঃসাহসের জন্ম দিয়েছে তা পুরো জাতিকে বিস্মিত করেছে। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, উগ্রবাদী ও জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ এই কওমিরা জাতির জন্য ‘এ্যাসেট’ না ‘বার্ডেন’। কওমিরাই প্রমাণ করেছে তারা আসলে কী। বর্তমান সরকার এই কওমিদের জন্য ইতোমধ্যে যে সুযোগ-সুবিধা কার্যকর করেছে তা আগেকার ৫০ বছরেও হয়নি। এ বক্তব্য হেফাজতীদের বিভক্ত অংশের নেতাদের। কিন্তু এরপরও এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব লঙ্কাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে তা প্রকারান্তরে সরকার বিরোধিতারই নামান্তর। এর কারণও রয়েছে। এদের মূল মদদদাতা জামায়াত-বিএনপির দুষ্টচক্র। যারা ইতোমধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন মানুষ হত্যা করে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এরা এখন ভর করেছে হেফাজতীদের স্কন্ধে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, হেফাজতীরা বিপথে পরিচালিত হয়েছে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর এদের মধ্যে বিভক্তি হয়ে যায়। মূলত শফীর মৃত্যুর আগেই শুরু হয়ে যায় সংগঠনের ক্ষমতা গ্রহণের এক অপখেলা। যে খেলায় জিতেছে শফীবিরোধী গ্রুপ। এরাই মূলত জামায়াত-বিএনপি সমর্থনপুষ্ট। রবিবার মামুনুল হক গ্রেফতার হওয়ার পর কওমিদের মাঝে কোন ধরনের তোড়জোড় পরিলক্ষিত হয়নি। মাদ্রাসাগুলোর অভ্যন্তরে রয়েছে সুনসান নীরবতা। যেসব হেফাজত নেতা উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে পারঙ্গম ছিলেন মামুনুল হক তাদের অন্যতম। ধর্মীয় নেতার আসনে থেকে তিনি রীতিমতো তার সংগঠন ও সমর্থকদের মধ্যে কলঙ্কলেপন করে দিয়েছেন। যা কখনও মোছার নয়। রিসোর্ট কান্ডে ধরা পড়ে ‘আল্লাহর কসম’ খেয়ে মামুনুল যেসব বক্তব্য রেখেছেন তা এখন সবই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। এখন তার এবং সহযোগী মিথ্যার বেসাতির ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের ফল ভোগ করার পালা শুরু হয়েছে বলে প্রতীয়মান। গত কিছুদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অভিযুক্ত হেফাজত নেতাদের একে একে গ্রেফতার শুরু করেছে পুলিশ। দেশের বিভিন্ন থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হচ্ছে। পুলিশের ওপর হামলা, থানায় আক্রমণ, ভূমি অফিসে আগুন, সড়ক অবরোধ, সরল ধর্মপ্রাণদের উস্কে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে কথিত আন্দোলন চালানোর পর এখন নিজেদের মধ্যে এক প্রকার হাঁসফাঁস শুরু হয়েছে। জনকণ্ঠে ফটিকছড়ি নিজস্ব সংবাদদাতা ইউনুস মিয়া জানান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হককে রবিবার গ্রেফতারের পর হেফাজতের কেল্লা হিসেবে পরিচিত দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসায় এ বিষয়ে কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। অপরদিকে, মাহে রমজান ও বৈশ্বিক মহামারী কোভিড-১৯, করোনার প্রভাব ঠেকাতে সরকারীভাবে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো বন্ধ ঘোষিত করার কারণে এমনিতেই হাটহাজারী মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা একেবারে হ্রাস পেয়ে আছে। তাছাড়া, দেশের বিভিন অঞ্চল থেকে উক্ত মাদ্রাসায় লেখাপড়া করতে আসা শত শত ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হতে আগ্রহ হারিয়েছে। সম্প্রতি এ মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রদের খাবার ও সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে হেফাজতের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। তবে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেফতারের খবর হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের আমির আল্লামা বাবুনগরীর ‘আবাসিক দফতরে’ পৌঁছলেও সাংগঠনিক কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি। ওই সময় মাদ্রাসা ক্যাম্পাস ছিল সুনসান নীরবতা। এদিকে, হাটহাজারীর সাবিক পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাদাত হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, পরিস্থিতি খুবই শান্ত, তাদের কোন তৎপরতা দেখছি না। গেল ২৬ মার্চের ঘটনায় ৬টি দায়েরকৃত মামলায় এ যাবত প্রায় ২৩/২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। অপরদিকে, ২৬ মার্চে জুমার নামাজের পর হেফাজতের উচ্ছৃঙ্খল কর্মীরা ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগ, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সরকারী গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া, আসবাবপত্র ভাংচুর, নথিপত্র তছনছ, ডাক বাংলোতে হামলা এবং শেষতক থানায় হামলা চালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে ওই মাদ্রাসার ৩ ছাত্রসহ ৪ জন নিহত হয় এবং আহত হয় অর্ধশতাধিক। এরপর থেকে প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে এখনও হাটহাজারী সদরে বিপুলসংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পটিয়া থেকে জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা বিকাশ চৌধুরী জানান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মওলানা মামুনুল হককে রবিবার দুপুরে গ্রেফতার করলেও পটিয়ায় হেফাজত ছিল নীরব। তবে ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও পটিয়া জিরি মাদ্রাসা থেকে ছাত্ররা লাঠিসোটা নিয়ে হেফাজতের পক্ষে মিছিল বের করার ঘটনা রয়েছে। হাটহাজারীতে পুলিশ-হেফাজতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের এক পর্যায়ে নিহতের ঘটনায় গত ২৬ মার্চ পটিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিল। মিছিলের এক পর্যায়ে পটিয়া থানার সিকিউরিটির রুমের গ্লাস ও লাইট ভাংচুর করে। এ ঘটনায় পটিয়া থানায় একটি মামলাও হয়। পুলিশ পটিয়া থেকে হেফাজতের ২৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে গাঢাকা দিয়েছে পটিয়া মাদ্রাসা ও জিরি মাদ্রাসার কয়েক হাজার ছাত্র। তবে ইতামধ্যে মাদ্রাসা ছুটিও দিয়েছে। এদিকে, পটিয়ায় সরকারী দলের অনক্যৈর কারণে হেফাজতের ঘাঁটি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময় তারা আন্দোলনের নামে পটিয়ায় বিশৃঙ্খলা করছে। পটিয়া আল জামেয়া আল ইসলামী মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা ওবায়দুল্লাহ হামজা জানিয়েছেন, মামুনুল হক গ্রেফতারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখার মতো কিছু নেই। সেটা আইনের বিষয়। তবে ইতোমধ্যে মাদ্রাসা ছুটি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মাদ্রাসায় তেমন কোন ছাত্র নেই। তারপরও কোন ছাত্র বাইরে বিশৃঙ্খলা করলে তার দায়ভার নিজেকে নিতে হবে। এদিকে, পটিয়া জিরি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব গ্রেফতারের বিষয়ে তাদের করার কিছু নেই। তবে আপসোস লাগে বর্তমান সরকার কওমি মাদ্রাসার জন্য অনেক কিছু করেছে এবং সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু হেফাজতীরা এর কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারল না। পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানিয়েছেন, থানায় ভাংচুরের ঘটনায় মামলা রেকর্ড হয়েছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে হেফাজতের ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামুনুল হকের গ্রেফতারে পটিয়ায় কোন প্রতিক্রিয়া নেই।
×