রশিদ মামুন ॥ নেই কোন সিসি ক্যামেরা, নেই অটো ইভেন্ট রেকর্ডার- পুড়ে যাওয়া সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুত উপকেন্দ্র ঘুরে মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় ফিরেছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) এবং বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বলছে, এসব থাকা উচিত ছিল। কিন্তু এখন কেন নেই তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলছে সংশ্লিষ্ট দুই প্রতিষ্ঠান। বিদ্যুত কেন্দ্র এবং উপকেন্দ্রকে কেভিআই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকা উপকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা না থাকার কোন ব্যাখ্যা নেই পিডিবি-পিজিসিবির কাছে।
এর আগে ২০১৪ সালে সারাদেশে এক সঙ্গে বিদ্যুত বিপর্যয়ের পর সরকার গ্রিডকে সুরক্ষিত করার নির্দেশ দেয়। সেই সময় থেকে মন্ত্রণালয়, পিজিসিবি এবং পিডিবির কর্মকর্তারা বলছে, গ্রিডকে সুরক্ষিত করার জন্য তারা বিশেষ উদ্যোগী হয়েছে। এজন্য গুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথাও নানা সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়কে কাগজে-কলমে জানানো হয়েছে। কিন্তু সিলেটের কুমারগাঁও সাবস্টেশনের তদন্তে নেমে মন্ত্রণালয় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সিসি ক্যামেরাই খুঁজে পায়নি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে গ্রিড সুরক্ষায় মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের সেই কমিটি তাহলে এত দিন কি করেছে!
পুরো সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা গ্রীষ্মে ১২৫ মেগাওয়াট। আর এই উপকেন্দ্রের ক্ষমতা ২২০ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সিলেট ছাড়াও আশপাশের এলাকায় এখান থেকে বিদ্যুত সঞ্চালন করা হয়। প্রতিবেশী সুনামগঞ্জ ছাড়াও সিলেটের কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে এখান থেকে বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়। ১৯৬৭ সালে ১৩ মেগাওয়াট সঞ্চালনের মাধ্যমে উপকেন্দ্রটি কার্যক্রম শুরু করে। এত পুরাতন একটি বিদ্যুত উপকেন্দ্রের নিরাপত্তার এই দশাকে হতাশাজনক বলছেন কেউ কেউ। পিজিসিবি বলছে, এমন সিসি ক্যামেরা আর অটো ইভেন্ট রেকর্ডার নাকি তাদের আরও উপকেন্দ্রে নেই।
মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব পাওয়ার সেলের পরিচালক মোঃ আব্দুর রউফ মিয়া জানান, দুর্ঘটনার কারণ বা উৎপত্তিস্থল চট করে বলে দেয়া কঠিন। কারণ সেখানে কোন সিসি ক্যামেরা নেই। বড় বড় উপকেন্দ্রে কী হচ্ছে না হচ্ছে তার একটি রেকর্ড রাখার জন্য অটো ইভেন্ট রেকর্ডার থাকে তাও কুমারগাঁওয়ে নেই। তিনি বলেন, এখন আমাদের মানুষের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেখানে যারা উপস্থিত ছিল তারা বলেছেন হুট করে ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখতে পেয়েছেন। কিন্তু সব কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারপাশ ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে উপকেন্দ্রের সুইচ ইয়ার্ডেও আগুন ধরে গেছে। ফলে এখানে অগ্নিকাণ্ডের কারণ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি মনে করেন অন্তত সিসি ক্যামেরা থাকলেও তার ফুটেজ দেখে বোঝা যেত কিভাবে কোথায় আগুন লেগেছে। কুমারগাঁও উপকেন্দ্রে পিজিসিবির চারটি ১৩২/৩৩ কেভি ট্রান্সফরমার রয়েছে। আবার শহরে বিদ্যুত সরবরাহের জন্য পিডিবিরও দুটি ৩৩/১১ কেভির ট্রান্সফরমার রয়েছে। পিডিবির একটি এবং পিজিসিবির একটি করে ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। পিডিবি দাবি করছে, পিজিসিবির ট্রান্সফরমার থেকেই আগুনের সূত্রপাত অন্যদিকে পিজিসিবি শুরু থেকেই প্রচার করছে আগে আগুন লেগেছে পিডিবির ট্রান্সফরমারে।
পিজিসিবির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াকুব এলাহি চৌধুরী বলেন, সিসি ক্যামেরা অবশ্যই থাকা উচিত ছিল। সিসি ক্যামেরা বসাতে কত টাকা প্রয়োজন হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আসলে ঘর অনেক পুরানো হলে এখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। অটো ইভেন্ট রেকর্ডার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অনেক পুরাতন উপকেন্দ্র। এখানে অটো ইভেন্ট রেকর্ডার স্থাপন করলে তার সমন্বয় করা কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি। তবে তাদের আরও অনেক উপকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা না থাকা এবং অটো ইভেন্ট রেকর্ডার না থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
কুমারগাঁও উপকেন্দ্রের মধ্যে যেমন পিডিবির বিদ্যুত সরবরাহ ট্রান্সফরমার রয়েছে তেমনি রয়েছে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র। এত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা না থাকার বিষয়কে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, সেখানে আমাদের যে দুটি ট্রান্সফরমার আছে। আমাদের কর্মীরা শুধু সংরক্ষণের জন্য সেখানে যায়। কিন্তু পিজিসিবি তো পিডিবির কোম্পানি সেই দায় কী পিডিবি এড়াতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেই দায় আমার এড়ানোর সুযোগ নেই। আমরা দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনব বলে জানান তিনি।
গত সপ্তাহে বিদ্যুত উপকেন্দ্রে আগুনে টানা দুইদিন বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল সিলেট। বিদ্যুত উপকেন্দ্রে এভাবে আগুন লাগার ঘটনায় মন্ত্রণালয় একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি সিলেট উপকেন্দ্র ঘুরে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমার জন্য সাতদিনের সময় দিয়ে গত ১৭ নবেম্বর কমিটি গঠন করে বিদ্যুত বিভাগ।