ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৬ অক্টোবর ২০২০

ধর্ষণে শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই

শংকর কুমার দে ॥ ধর্ষণের তালিকায় রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের নাম। তবে এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। সারা বিশ্বেই ধর্ষণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় দেশগুলোতে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই শতকরা ৩৩ জন মেয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতের কোথাও না কোথাও একটি মেয়েকে যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। পশ্চিমা বিশ্বে যেমন জার্মানির মতো উন্নত দেশের নারীরাও যৌন নিগ্রহ বা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। ধর্ষণ হওয়ার হার-এর বিবেচনায় শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকা করা হয়েছে। জাতিসংঘের গবেষণা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থার তালিকা অনুযায়ী ধর্ষণের যে শীর্ষ দশ দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তা নিম্নরূপ। ১. আমেরিকা ॥ আমেরিকা, পৃথিবীর এই সুপার পাওয়ার ধর্ষণ এর দিক থেকেও সুপার পাওয়ার। এখানে ধর্ষকদের ৯৯% ই পুরুষ। বাকি ১% ধর্ষণ নারীদের মাধ্যমে হয়। সমীক্ষার হিসাব অনুযায়ী ধর্ষিতদের ৯১ শতাংশ নারী ও বাকি ৯ শতাংশ পুরুষ। তথ্যমতে প্রতি ৬ জন নারীর একজন ও প্রতি ৩৩ জন পুরুষের একজন আমেরিকায় ধর্ষণ এর শিকার হয়। মাত্র ১৬% ধর্ষণ কেস রিপোর্ট করা হয় আমেরিকায়। ২.দক্ষিণ আফ্রিকা ॥ ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে ৬৫০০০ ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নির্যাতনের রিপোর্ট হয়েছে। পৃথিবীর ধর্ষণের রাজধানী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা বিখ্যাত। ৪০০০ নারীর ওপর একটি জরিপ চালালে তাদের প্রতি ৩ জনের একজন বলেন তারা ধর্ষণের শিকার। এক জরিপে দেখা গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ২৫% পুরুষ জীবনে একবার হলেও ধর্ষণ করেছে। শিশু ধর্ষণের হার দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি। এখানে কেউ যদি ধর্ষণ করে ধরা পরে তবে মাত্র দুই বছর সাজা ভোগ করে। ৩. সুইডেন ॥ ইউরোপের মধ্যে সর্বাধিক ধর্ষণ হয় সুইডেন এ এবং পৃথিবীর মধ্যে ৩য়। সুইডেনে প্রতি ৪ জনে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়। সুইডিশ পুলিশ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালে সুইডেনে ধর্ষণ এর হার পূর্ববর্তী ১০ বছরের তুলনায় ৫৮% শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪. ভারত ॥ ধষর্ণের হার যেন ভারতে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। ভারতে নারীদের ওপর নির্যাতনের মধ্যে সবচাইতে কমন হলো ধর্ষণ। জরিপ রিপোর্টের তথ্যমতে, ২০১২ সালে ভারতে ২৪৯২৩টি ধর্ষণের রিপোর্ট করা হয়েছে। তবে ভারতে ধর্ষণ হলে তার রিপোর্ট হয় একদমই নগণ্য মাত্রায়। তবে আশঙ্কাজনক বিষয় হলো রিপোর্ট করা ধর্ষণ কেসের ৯৮% নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার পিতা, নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী বা পরিচিতদের মাধ্যমে। কিছুদিন আগে তো চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হলো দামিনী। একদম নতুন তথ্যমতে ভারতে প্রতি ২২ মিনিটে একটি করে ধর্ষণ হয়। ৫. যুক্তরাজ্য ॥ যুক্তরাজ্য অনেক দেশের জন্য আদর্শ হিসেবে আছে বহু যুগ ধরে তাদের সভ্যতা, তাদের উন্নত প্রযুক্তির জন্য। কিন্তু এই যুক্তরাজ্য পৃথিবীর ৫ম মারাত্মক ধর্ষণপ্রবণ দেশ। ইংল্যান্ড ও ওয়ালেস এ প্রতিবছর প্রায় ৮৫০০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। এছাড়া ৪,০০,০০০ এর ওপরে নারী প্রতিবছর যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। প্রতি ৫ জনে ১ জন নারী ১৬ বছরের পরে কোন না কোনভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ৬. জার্মানি ॥ সরকারী হিসাব মতে ২,৪০,০০০ নারী ও কিশোরী জার্মানিতে এই ধর্ষণের কারণে মারা গেছে। এ পর্যন্ত সরকারী হিসেবে জার্মানিতে ৬,৫০,৭৩৯৪ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে গেল মানবিকতায় পিছিয়েই পরে আছে জার্মানি। ৭. ফ্রান্স ॥ এইতো ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ও ধর্ষণ ফ্রান্সে কোন অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। নারীর অধিকার বা নিরাপত্তা বিষয়ক আইন ফ্রান্সে বেশ নতুন তাদের ঐতিহ্য যতই পুরাতন হোক না কেন। সরকারী মতে ফ্রান্সে প্রতিবছর ৭৫০০০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। তবে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের মাত্র ১০% পুলিশে অভিযোগ করে। ৮. কানাডা ॥ ধর্ষণের শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় নাম রয়েছে কানাডারও। সাম্প্রতিক বছরে কানাডাতে ধর্ষণ হয়েছে এমন রেকর্ড আছে ২,৫১,৬৯১৮ জনের। কানাডাতে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয় জরিপ এর একটি রিপোর্ট মতে কানাডার প্রতি ১৭ জন নারীর একজন ধষর্ণের শিকার হয়। ৯. শ্রীলঙ্কা ॥ শ্রীলঙ্কার সিভিল ওয়ার শেষ হয়েছে অনেক আগেই কিন্তু এখনও নিরাপত্তা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি শ্রীলঙ্কার নারীরা। জাতিসংঘের এক গবেষণায় দেখা গেছে ১৪.৫% শ্রীলঙ্কান পুরুষ জীবনের কোন না কোন সময় ধর্ষণ করেছে বা করার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে ৯৬.৫% ধর্ষক কোন আইনের আওতায় আসে না। ৬৪.৯% ধর্ষক একের অধিক বার ধর্ষণ করে। এছাড়া ২.৭% পুরুষ অন্য পুরুষকে ধর্ষণ করে। ১০. ইথিওপিয়া ॥ জাতিসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী ইথিওপিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ইথিওপিয়ায় এটা মোটামুটি কমন বিষয় যে কারও কোন মেয়ে পছন্দ হলে তুলে নিয়ে গিয়ে যতদিন না সেই মেয়ে গর্ভবতী হয় ততদিন ধর্ষণ করতে থাকে। এছাড়া ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিয়মিত সিভিলিয়ান নারীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। পৃথিবীর অনেক দেশেই ধর্ষণ মহামারীর আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণ একটি মানসিক বিকারগ্রস্ততার ফল। কোন স্বাভাবিক মানুষ ধর্ষণ করতে পারে না। যারা ধর্ষণ করে তারা মানসিকভাবে বিকৃত। আর এই মানসিক বিকৃতির হার কয়েকটা দেশে ভয়ঙ্কর হারে বেশি। স্বাভাবিকভাবেই ধর্ষণের মতো দুঃস্বপ্ন কোন মেয়েই দেখতে চান না। প্রতিটি দেশেই ধর্ষণকে ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশেও ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গেছে অনেকটাই। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন হয়েছে। সামাজিক আন্দোলনের দাবির স্বীকৃতিস্বরূপ ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদ- করেছে সরকার। ধর্ষণের শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকলেও সম্প্রতি ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় শাস্তি মৃত্যুদ- করায় নারীর প্রতি সহিংসতা, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-এই অপরাধ কমে যাবে বলে সরকারের দাবি।
×