
মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মিটারগেজ (এমজি) লাইনে ট্রেন চলাচলের জন্য চারশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি কোরিয়ান ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ মে এসব ইঞ্জিন কেনার জন্য কোরিয়ার হুন্দাই রোটেন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের।
রেলের মহাপরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (প্রকল্প) বুধ ও বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস করেন। পরে সেগুলো পাহাড়তলীর ডিজেল শপে পাঠানো হয়। করোনাকালীন ঝুঁকির কারণে রেল ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ কমিশনিং, লাইট ট্রায়াল ও রোড ট্রায়ালের জন্য কোরিয়ান কোম্পানির এক প্রকৌশলী দল ডিজেল শপে যাওয়ার কথা রয়েছে। কোরিয়া থেকে প্রকৌশলী দলটি চট্টগ্রাম পৌঁছালেই শুরু হবে ইঞ্জিনের কমিশনিং। প্রতিটি ইঞ্জিন কমিশনিংয়ে কমপক্ষে ৭/৮ দিন সময় লাগতে পারে। এরপর পাহাড়তলী ডিজেল শপ থেকে চিনকি আস্তানা স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার লাইট ট্রায়ালে যাবে ইঞ্জিনগুলো। লাইট ট্রায়ালের পর ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজারের (ডিআরএম) তত্ত্বাবধানে লোড ট্রায়ালে শতভাগ কার্যকরী প্রমাণ হলে ইঞ্জিনগুলো যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে।
চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ল্যান্ডিং খরচসহ প্রায় চারশ’ কোটি টাকায় ১০টি লোকোমোটিভ ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। এ বিষয়ে চীফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর নুর আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, কোরিয়া থেকে কেনা ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা পর্যন্ত প্রতিটি ইঞ্জিনের জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। সেগুলো এখন পাহাড়তলীর ডিজেল শপে নেয়া হয়েছে। করোনার কারণে কোরিয়ান টিমটি আসতে দেরি হতে পারে। টিমটি এলেই কমিশনিং শেষে শুধু ইঞ্জিনগুলোর লাইট ট্রায়াল শুরু হবে। কোচ কম্পোজিশন অনুযায়ী ১৮ থেকে ৩৬ অর্থাৎ ১৮টি কোচ ও প্যাসেঞ্জার বহন ক্ষমতা ওজনের বালির বস্তা দিয়ে লোড ট্রায়াল করা হবে।
শনিবার সকালে পাহাড়তলীর ডিজেল শপে দেখা গেছে, তিন হাজার সিরিজের ১০টি লোকোমোটিভ পর্যবেক্ষণ করছেন সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ৩০০৯ সিরিয়ালের লোকোমোটিভটি থেকে পলিথিন কভার খুলে পরিদর্শন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে অবস্থানরত কোরিয়ার একজন প্রকৌশলী লোকোমোটিভসগুলো দেখতে শনিবার সকালে সেখানে পৌঁছান। শপের ওয়ার্কস ম্যানেজারের (ডিজেল) সঙ্গে সাক্ষাত করে কোরিয়ান ওই প্রকৌশলী লোকোমোটিভস পরিদর্শনে যান। এ সময় শপে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও উপস্থিত ছিলেন। মূলত এসব লোকোমোটিভস কমিশনিংয়ের জন্য ৭ থেকে ৮ জনের একটি প্রকৌশলী দল ও সহকারী অল্প কয়েক দিনের মধ্যে চট্টগ্রামে যাবে। লোকোমোটিভস কমিশনিং শেষ হলে তা পাহাড়তলী থেকে চিনকি পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার রেলপথ পাড়ি দেবে। যদিও এসব লোকোমোটিভসের ক্ষমতা এক শ’ কিলোমিটার গতিসম্পন্ন। তবুও সর্বোচ্চ ৭৫ থেকে ৮০ কিলেমিটার গতিতে পূর্বাঞ্চলীয় মিটারগেজ রেল লাইনে চলাচলের নির্দেশনা রয়েছে কোরিয়ান কোম্পানির।
কোরিয়ান কোম্পানির পক্ষ থেকে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ মে ১০টি ডিজেল ইলেকট্রিক (ডিই) লোকোমোটিভ কেনার জন্য চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের। এডিবির অর্থায়নে বাংলাদেশ রেলওয়ে এসব লোকোমোটিভস সংগ্রহ করেছে। এ প্রকল্পের ডিরেক্টর ইঞ্জিনগুলো কেনা থেকে শুরু করে সরবরাহ পর্যন্ত কয়েক দফায় পরিদর্শন করেছেন কোরিয়াতে। ৮৭ হাজার ৬৫০ কেজি ওজনের এসব লোকোমোটিভসের ক্ষমতা ২২০০ অশর্^শক্তি বা হর্স পাওয়ার। বাংলাদেশে এই প্রথম সাত শ’ হর্স পাওয়ারের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিন মিটারগেজ লাইনে চলার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এসব ইঞ্জিন লিফটিং ও প্যাকিং ইনস্ট্রাকশনও কোরিয়ান হুন্দাই রোটেন কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। যদি কোন ধরনের সমস্যা থাকে তা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রকল্প পরিচালককে বলা হয়েছে।
রেল ভবনস্থ প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প) পরিচালকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি লোকোমোটিভ ক্রয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।