অনলাইন রিপোর্টার ॥ সীমান্তে হত্যা বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এতোই নতজানু যে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করতে পারে না।’
রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রীরা ঘরে বসে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে দেশ চালাচ্ছেন। বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়েছেন। করোনায় সয়লাব জনগণ কী মরণদশায় ভুগছে এগুলো উপলব্ধি করার ক্ষমতা তাদের নেই। যদি থাকতো তাহলে করোনা পরীক্ষার ওপর ২০০ টাকা ফি ধার্য করতো না। এ মহামারির মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতো না। বিদ্যুতের ভুতুড়ে বিলের দাপটে সাধারণ মানুষের দম বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো না। পাটকল বন্ধ ও পাটশ্রমিকদের ছাঁটাই করতো না।’
'বিএনপি নেতারা আইসোলেশন থেকে শুধু সংবাদ সম্মেলন করে' তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাই-আপনাদের মন্ত্রী-এমপিরা কে মাঠে আছেন, কে জনগণের পাশে আছেন? আমরা তো দেখছি-আপনাদের এমপি মানবপাচারের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে গ্রেফতার হচ্ছেন। অবশ্য জনগণ দেখছে-আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের খাটের নিচ থেকে, মাটির নিচ থেকে, গ্যারেজের ভেতর থেকে শুধু চালের বস্তা, তেলের বস্তা বের হচ্ছে। এগুলো জনগণের টাকায় সরকারি ত্রাণ। আর আপনাদের দেখছি-সেলফ লকডাউনে থেকে বিরোধীদল ও মতের মানুষদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে। আপনাদের মন্ত্রী-এমপিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলেই জনগণের পাশে দাঁড়ায়নি। বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতাকর্মীরা এ দুঃসময়ে বিভিন্ন সহায়তা নিয়ে কোটি কোটি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের হত্যা করছে বিএসএফ। বাংলাদেশের ভেতর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনও চালায় বিএসএফ। গত তিন মাসে তারা ২৫ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। গত ২ জুলাইও তারা একজনকে হত্যা করেছে। ৪ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মানসিক ভারসাম্যহীন জাহাঙ্গীর আলমকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ভয়ঙ্কর অমানবিক মনুষ্যত্বহীন ঘটনা দেশবাসীকে গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার টু শব্দটি পর্যন্ত করে না। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী চুপ কেন? সীমান্ত হত্যা বন্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।’
‘নতজানু সরকার কোনো প্রতিবাদ করারও সাহস পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এ একপেশে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশিরা। বর্তমান সরকার কতটুকু নতজানু যে এর আগে আমরা দেখেছি-বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীরা বিএসএফ’র হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রতিবাদ না করে বরং তাদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশিদেরই অভিযুক্ত করেছে। গত তিন মাসে বিএসএফ কর্তৃক সব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘ঢাকা শহরে বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছে না। সবাই ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছে। স্বল্পআয়ের মানুষ করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এর ওপর বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও জালানি তেলের অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের জীবন ওষ্ঠাগত। শ্রমিক ছাঁটাই আর চাকরিচ্যুতির হিড়িক পড়ে গেছে দেশব্যাপী। চাকরি হারিয়ে আত্মহত্যা করছে মানুষ। এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে পড়েছে মধ্য ও স্বল্পআয়ের মানুষ। সরকারের লোকেরা এ সংকটগুলোর নজর না দিয়ে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিরোধীদলের ওপর ঝাঁক বেঁধে আক্রমণ শুরু করেছে। সেখানে শুধু মিথ্যা কথার ফুলঝুরি নয়, চলছে গুম, মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের হিড়িক।’
তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আবারও আপনাদের জানাচ্ছি-আমার নামে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। আমি কোনো ফেসবুক পরিচালনা করি না। কিন্তু কতিপয় অসাধু ও প্রতারক ব্যক্তি আমার নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’